Advertisement

সঞ্জয় দত্তর প্রথম স্ত্রী, ৩২ বছর বয়সেই ক্যানসারে মৃত্যু হয় এই অভিনেত্রীর

প্রথম আলো

প্রকাশ: ১৮ আগস্ট, ২০২৫

রিচা ও সঞ্জয় দত্ত। ফেসবুক থেকে
রিচা ও সঞ্জয় দত্ত। ফেসবুক থেকে

সঞ্জয় দত্তর স্ত্রী মান্যতা দত্তর নাম অনেকেই জানেন। তাঁদের যমজ সন্তান ইকরা ও শহরানের খোঁজখবর রাখেন কেউ কেউ। কিন্তু খুব কম মানুষই জানেন, মান্যতা সঞ্জয়ের তৃতীয় স্ত্রী। এর আগে তিনি ছিলেন মডেল রিয়া পিল্লাইয়ের (১৯৯৮-২০০৮) স্বামী। তবে সঞ্জয়ের জীবনের সবচেয়ে মর্মস্পর্শী অধ্যায় তাঁর প্রথম বিয়ে—অভিনেত্রী রিচা শর্মাকে ঘিরে।

দেব আনন্দের দেওয়া প্রতিশ্রুতি থেকে বলিউডে অভিষেক
১৯৬৪ সালে দিল্লিতে জন্ম রিচা শর্মার। ছোটবেলায় মা–বাবার সঙ্গে চলে যান নিউইয়র্কে। সেখানেই অভিনেতা-পরিচালক দেব আনন্দের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। তখন বয়স মাত্র ১৩ কি ১৪, কিন্তু রিচার স্বপ্ন ছিল বলিউডে নায়িকা হওয়ার। দেব আনন্দও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বয়স হলে তাঁকেই নায়িকা করবেন।

সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয় ১৯৮৫ সালে। দেব আনন্দের পরিচালনায় ‘হাম নওজওয়ান’ ছবিতে অভিষেক ঘটে রিচা শর্মার। একই ছবিতে অভিষেক হয় টাবুরও, যিনি এখনো বলিউডের প্রথম সারির অভিনেত্রী। এরপর রিচা অভিনয় করেন ‘ইনসাফ কি আওয়াজ’ (১৯৮৬), ‘সদাক ছাপ’ (১৯৮৭), ‘অনুভব’ (১৯৮৭)-এর মতো ছবিতে।

সঞ্জয় দত্তর সঙ্গে প্রেম ও বিয়ে
ক্যারিয়ারের শুরুতেই সঞ্জয় দত্তের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন রিচা। তখন সঞ্জয় ছিলেন ক্যারিয়ারের শীর্ষে। তাঁর মাদকাসক্তির অতীত নিয়ে পরিবারে সংশয় থাকলেও সঞ্জয়ের প্রতিশ্রুতি রিচাকে রাজি করায়। ১৯৮৭ সালে বিয়ে করেন তাঁরা।
বছর না পেরোতেই তাঁদের কোলজুড়ে আসে কন্যা তৃষালা দত্ত। কিন্তু সেই আনন্দ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। অচিরেই জানা যায়, রিচার শরীরে বাসা বেঁধেছে ক্যানসার। ট্র্যাজেডি এখানেই—সঞ্জয় যেভাবে তাঁর মা নারগিসকে ক্যানসারে হারিয়েছিলেন, ঠিক তেমনই রোগ গ্রাস করল স্ত্রীকেও।

অসুখ, গুঞ্জন আর ভাঙন
চিকিৎসার জন্য রিচাকে নিউইয়র্কে নিয়ে যান সঞ্জয়। কিন্তু ব্যস্ত শুটিং সূচি তাঁকে স্ত্রীর পাশে থাকতে দেয়নি। এ সময় ‘খলনায়ক’ ছবির সহ–অভিনেত্রী মাধুরী দীক্ষিতের সঙ্গে সঞ্জয়ের সম্পর্কের গুঞ্জনও শোনা যায়।

চিকিৎসায় ক্যানসার থেকে সুস্থ হয়ে রিচা দেশে ফিরলেও বিমানবন্দরে স্বামী তাঁকে অভ্যর্থনা জানাননি। পরবর্তী সময় হতাশ হয়ে কন্যাকে নিয়ে আবার নিউইয়র্কে ফিরে যান রিচা। এরপরই সঞ্জয়ের পাঠানো বিচ্ছেদের নোটিশ পৌঁছায় তাঁর হাতে।

শেষ দিনগুলো
বিচ্ছেদের কিছুদিন পরই রিচার শরীরে আবারও ধরা পড়ে ক্যানসার। তখন সঞ্জয় দত্ত ছিলেন জেলে, ১৯৯৩ সালের মুম্বাই বিস্ফোরণের পর গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। নিঃসঙ্গ লড়াইয়ের পর ১৯৯৬ সালের ১০ ডিসেম্বর মাত্র ৩২ বছর বয়সে মৃত্যু হয় রিচার। সঞ্জয় শেষবারের মতো তাঁকে দেখতে পর্যন্ত যেতে পারেননি। কন্যা তৃষালাকে বড় করে তোলেন রিচার বোন এনা শর্মা ও তাঁদের পরিবার।

সঞ্জয়ের বোনের স্মৃতিতে
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সঞ্জয়ের বোন প্রিয়া দত্ত জানিয়েছেন, কীভাবে রিচার মৃত্যুর ঘটনা তাঁদের পুরো পরিবারকে নাড়িয়ে দিয়েছিল।

প্রিয়া দত্ত বলেন, ‘সঞ্জয়ের জীবনে কখনো স্থিতি আসেনি। রিচা… এত অল্প বয়সে তাঁর ব্রেন টিউমার ধরা পড়ল এবং এত তাড়াতাড়ি তিনি চলে গেলেন, এটা খুবই ট্র্যাজিক। ভাইয়ের জন্য ব্যাপারটা বিশেষভাবে কঠিন ছিল। আমরা সব সময় মনে করি আমাদের সমস্যাই সবচেয়ে বড়, কিন্তু অন্যের জীবনে কী ঘটছে, সেটা দেখলে বোঝা যায়। তবে ঈশ্বরের কৃপায় আমরা প্রতিটি কঠিন সময় একসঙ্গে মোকাবিলা করেছি। সমস্যা এসেছে, কিন্তু সেখান থেকে আমরা শক্ত হয়েই বেরিয়ে এসেছি।’

বহু বছর পর বাবা-মেয়ের দেখা
২০০৮ সালে বাহামাসে ‘ব্লু’ ছবির শুটিং চলাকালে বহু বছর পর মেয়ের সঙ্গে দেখা হয় সঞ্জয়ের। ভারতীয় সংস্করণের পিপল ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তৃষালা বলেছিলেন, ‘তিনি যদি সুখী হন, তবে আমিও সুখী। যদি মান্যতার মধ্যে তিনি নিজের সুখ খুঁজে পান, তবে সেটাই ভালো।’

তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

Lading . . .