Advertisement

অন্যের বাড়ির বাসি খাবার খেয়ে দিন পার করা মেয়েটি এখন ৪০ কোটি টাকার মালিক

প্রথম আলো

প্রকাশ: ৭ আগস্ট, ২০২৫

ভারতী সিং। শিল্পীর ফেসবুক থেকে
ভারতী সিং। শিল্পীর ফেসবুক থেকে

দুই বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছেন। মা অন্যের বাড়িতে টয়লেট পরিষ্কার করতেন, ভাইবোন কাজ করতেন কম্বলের কারখানায়। সেই মেয়েই আজ ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় ও সর্বাধিক পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত কমেডিয়ান—ভারতী সিং। ৩০ কোটি রুপির (প্রায় ৪০ কোটি টাকা) টাকার সম্পদের মালিক এই শিল্পীর জীবনকাহিনি যেন প্রায় সিনেমার মতোই।
‘জীবন কাছ থেকে দেখলে ট্র্যাজেডি, দূর থেকে দেখলে কমেডি’, চার্লি চ্যাপলিনের এ কথা যেন হুবহু মিলে যায় বহু কমেডিয়ানের জীবনের সঙ্গে, যাঁরা দারিদ্র্য পেরিয়ে পৌঁছেছেন আলোর ঝলমলে মঞ্চে। পাঞ্জাব থেকে মুম্বাইয়ে কপিল শর্মার সফর যেমন সহজ ছিল না, তেমনি প্রয়াত রাজু শ্রীবাস্তবকেও অটো চালাতে হয়েছিল রোজগারের জন্য। আর ভারতী সিং? একমাত্র নারী হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছেন পুরুষপ্রধান কমেডি–জগতের সমান্তরালে। নিজের স্বকীয়তায় তিনি আজ ‘লাফটার কুইন’।

বাবাকে হারানোর পর জীবন বদলে গেল
মাত্র দুই বছর বয়সে ভারতী বাবাকে হারান। এরপর সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে মা ও দুই বড় ভাইবোনের ওপর। এক সাক্ষাৎকারে ভারতী জানান, তাঁর ভাই ও বোন পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে কম্বলের কারখানায় কাজ শুরু করেন। সেখানে তাঁরা এমন ভারী কম্বল তৈরি করতেন, যেগুলোর ওজন তাঁরা নিজেরাও বইতে পারতেন না।
মায়ের সংগ্রাম: টয়লেট পরিষ্কার, বাসি খাবারেই চলত পেট
এক সাক্ষাৎকারে ভারতী জানান, ছোটবেলায় তাঁরা প্রচণ্ড অভাবের মধ্যে দিন কাটিয়েছেন। তাঁর মা অন্যের বাড়িতে রান্নাবান্না ও টয়লেট পরিষ্কারের কাজ করতেন। সেসব বাড়ি থেকে ফেরা বাসি খাবারই ছিল তাঁদের দিনের আহার।

ভারতী বলেন, ‘উৎসবের সময়গুলো ছিল সবচেয়ে কষ্টের। মা যখন কাজ থেকে ফিরতেন, তখনকার লাড্ডু দিয়েই লক্ষ্মীপূজা করতাম। প্রতিবেশীরা বুঝতে না পারে, আমি অন্য বাচ্চাদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতাম যেন মনে হয়, আমিও আতশবাজি ফাটাচ্ছি। মা যখন অন্যের বাড়িতে টয়লেট পরিষ্কার করতেন, আমি দরজার পাশে বসে থাকতাম। কাজ শেষে যেটুকু খাবার পেতাম, ওটাই ছিল আমাদের “তাজা” খাবার। সেই বাসি খাবারেই আমাদের দিন আনন্দময় হয়ে উঠত।’

ভারতী আরও যোগ করেন, ‘জীবনে এমন দিন গেছে, যেখানে আমরা শুধু লবণ আর রুটি খেয়ে থেকেছি। আজ বাড়িতে ডাল, সবজি আর রুটি আছে, এটাই বড় পাওয়া।’

অভিনয় দিয়ে আত্মপ্রকাশ, লালি চরিত্রে পরিচিতি
পাঞ্জাবে কলেজজীবনে থিয়েটার ও কমেডি শো করতেন ভারতী। সেখানেই একদিন তাঁর প্রতিভা নজরে আসে। এরপর ‘কমেডি সার্কাস’-এর অডিশনের ডাক পান তিনি। অমৃতসর থেকে অডিশন দিয়ে প্রথমবারের মতো বিমানে করে মায়ের সঙ্গে মুম্বাই আসেন।
এরপর একে একে টেলিভিশনের জনপ্রিয় কমেডি শোগুলোতে অংশ নেন এবং ‘লালি’ চরিত্রে ভারতজুড়ে পরিচিত হয়ে ওঠেন।

শুধু কমেডি নয়, উপস্থাপনাতেও সফল ভারতী
‘ঝলক দিখলা যা ৫’-তে অংশগ্রহণের পর উপস্থাপনায় হাত পাকান ভারতী। এরপর একে একে উপস্থাপনা করেছেন ‘ডান্স দিওয়ানে’, ‘হুনরবাজ’, ‘সা রে গা মা পা লি’ল চ্যাম্পস’ এবং সর্বশেষ ‘লাফটার শেফস’। নিজের ইউটিউব চ্যানেল ‘ভারতী টিভি’ ও স্বামী হর্ষ লিম্বাচিয়ার সঙ্গে ‘লাইফ অব লিম্বাচিয়াস’ নামেও একটি চ্যানেল পরিচালনা করেন তিনি।

ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুসারীর সংখ্যা প্রায় ৯০ লাখ। ই-টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘লাফটার শেফস সিজন ২’-এর প্রতি পর্ব উপস্থাপনার জন্য তিনি নিয়েছেন ১০-১২ লাখ রুপি।

এখন ভারতী কতটা ধনী
টাইমস অব ইন্ডিয়ার তথ্যমতে, ভারতীর বর্তমান সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। তাঁর মালিকানায় রয়েছে বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল গাড়ি। মুম্বাইয়ে তাঁর একটি ফ্ল্যাটের দাম প্রায় ছয় কোটি রুপি।

তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

Lading . . .