পর্দায় সেই দুই নারী সেনা, তোপের মুখে অমিতাভের কেবিসি
প্রকাশ: ১৭ আগস্ট, ২০২৫

ভারতশাসিত জম্মু কাশ্মীরের পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের পরই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালায় ভারতীয় সেনাবাহিনী। সেই অভিযানের সন্ত্রাসীদের ঘাঁটিগুলোকে কীভাবে শনাক্ত করা হয়, কিভাবে আঘাত হানা হয়, কত সময় ধরে ওই অভিযান চলে- সে সময় অভিযানের খুঁটিনাটি দেশবাসীকে বোঝানোর দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্নেল সোফিয়া কুরেশি এবং বিমান বাহিনীর উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংহকে।
এবার সেই কর্নেল সোফিয়া কুরেশি এবং উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংহকে দেখা যাবে ভারতের জনপ্রিয় রিয়ালিটি শো ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি (কেবিসি)-তে। এই দুই সেনা কর্মকর্তার পাশাপাশি ভারতীয় নৌবাহিনীর কমান্ডার প্রেরণা দেওস্থালিকেও ওই শোতে অংশ নিতে দেখা যাবে।
আগামী ১৫ আগস্ট, ভারতীয় সময় রাত নয়টায় দেশটির স্বাধীনতা দিবসের বিশেষ পর্বে এটি সম্প্রচার করা হবে সনি এন্টারটেইনমেন্ট টেলিভিশনে। কেবিসির ১৭তম এডিশনে ওই অনুষ্ঠানের উপস্থাপক অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন।
ইতোমধ্যেই সনি এন্টারটেইনমেন্ট টেলিভিশন তাদের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে ‘অপারেশন সিঁদুর’ সম্পর্কে মেগাস্টারের সঙ্গে তাদের আলাপচারিতার একটি প্রোমো শেয়ার করেছে। ওই তিন সেনা কর্মকর্তাকে স্বাগত জানানোর সময় অমিতাভ বচ্চনকে দেশপ্রেমের অনুভূতি হিসাবে ‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
ওই প্রোমোর শুরুতেই কর্নেল সোফিয়া, উইং কমান্ডার ব্যোমিকা এবং কমান্ডার প্রেরণা নিজেদের পরিচয় দেন। পরে কেবিসির হট সিটে বসে বচ্চনের সঙ্গে কথা বলার সময়, সোফিয়া জানান, ‘পাকিস্তান ইয়ে (সন্ত্রাসবাদি কার্যকলাপে মদদ দেওয়া) করতা চালা অরহা হ্যায়। তো জওয়াব দেনা বানতা থা স্যার। ইসিলিয়ে অপারেশন সিঁদুর কো প্ল্যান কিয়া গয়া’ (পাকিস্তান এটি করেই চলেছে। তার একটা জবাব দেওয়া দরকার ছিল। তাই অপারেশন সিঁদুরের পরিকল্পনা করা হয়েছিল)।’
কমান্ডার ব্যোমিকা বলেন, ‘রাত কো এক বাজ কার পাঁচ মিনিট সে লেকার দেড় বাজে তক, পঁচিশ মিনিট মে খেল খতম কর দিয়া (রাত ১টা ৫টা থেকে রাত দেড়টা পর্যন্ত, আমরা ২৫ মিনিটের মধ্যে পুরো অপারেশন শেষ করেছি)। আমাদের লক্ষ্যগুলো ধ্বংস করা হয়েছিল এবং কোনো বেসামরিক লোকের কোনো ক্ষতি হয়নি।
তবে, একটি টেলিভিশন রিয়েলিটি শোতে উপস্থিত হয়ে সেনাবাহিনীর নারী কর্মকর্তাদের মুখে ‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযান সম্পর্কে কথা বলার বিষয়টি মোটেই ভালোভাবে নেয়নি নেটিজেনরা। অনেকে আবার সেনাবাহিনীর পোশাক পরিহিত নারী কর্মকর্তাদের আমন্ত্রণ জানানোর বাধ্যবাধকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ মোহিত চৌহান নামে একজন লিখেছেন, ‘একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্রে কোনো সামরিক অভিযানের পরে আপনি কি কখনও এমন কিছু দেখেছেন? সামরিক চাকরিরত ব্যক্তিকে টিভি শোতে বসার জন্য কিভাবে অনুমোদন দেওয়া হলো? আসলে কেন্দ্রের বর্তমান সরকার নির্লজ্জভাবে আমাদের বাহিনীকে তাদের তুচ্ছ রাজনীতি এবং অতি-জাতীয়তাবাদের জন্য ব্যবহার করছে।’
ব্রুশ ওয়েনি নামে একটি এক্স হ্যান্ডেল অ্যাকাউন্ট থেকে সশস্ত্র বাহিনীর প্রোটোকল কেবিসির মতো রিয়েলিটি শোতে সেনা কর্মকর্তাদের পাঠানোর অনুমতি দেয় কি না, এই প্রশ্ন তুলে বলা হয়েছে ‘ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর কিছু প্রোটোকল, কিছু মর্যাদা এবং বিশাল সম্মান আছে। রাজনীতিবিদরা তাদের ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য এটি নষ্ট করছেন। এটা খুবই লজ্জাজনক।’
তৃতীয় একজন মন্তব্য করেছেন, ‘আমাদের সেনাবাহিনী পবিত্র, রাজনীতির ঊর্ধ্বে, জনসংযোগের ঊর্ধ্বে। জাতিকে রক্ষা করার জন্য আমাদের সেনাবাহিনী, কোনো রাজনীতিকের ব্র্যান্ড রক্ষা করার জন্য নয়।’