বাসন মাজতেন এই অভিনেত্রী, পরে হন ভারতের মন্ত্রী
প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

বলিউডে নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে অভাব তাকে গ্রাস করতে না পারলেও সংসার চালাতে একসময় বাসন মাজতে শুরু করেন রেস্টুরেন্টে। অথচ সেই তরুণীই পরে হয়ে উঠলেন ভারতের টেলিভিশনের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া তারকা। ছিলেন দেশের মন্ত্রী। এ এক অবিশ্বাস্য পথচলা অভিনেত্রী স্মৃতি ইরানির।
অভিনেত্রীর কর্মজীবন শুরু করেছিলেন ভারতের প্রথম ম্যাকডোনাল্ডস আউটলেটে। খুবই সামান্য বেতনে জীবনযাপন শুরু করেন তিনি। পরে তিনি মিস ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। যেখানে তিনি শীর্ষ ১০ ফাইনালিস্টের মধ্যে ছিলেন। পরে টেলিভিশন জগতে প্রবেশ করেন। এরপর অভিনয়ের জন্য একের পর এক অডিশন দিতে থাকেন।
একদিন একতা কাপুরের মা তাকে দেখে বলেন, মেয়েটি খুব সুন্দর, টুইঙ্কেল খান্নার মতো। সে মন্তব্যই স্মৃতির ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছিল। সেদিন একতা কাপুর ঝুঁকি নিয়ে তাকে ‘কিউনকি সাস ভি কাভি বহু থি’ সিরিয়ালে সুযোগ করে দেন। 'তুলসি' চরিত্রে অভিনয়ের জন্য ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন ইরানি। এ চরিত্রটি ভারতীয় পরিবার—এমনকি প্রতিবেশী দেশগুলোতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। সেখানে জন্ম নেয় ইতিহাস।
২০০০ সালের ঘটনা। শুরু হওয়া সেই সিরিজটি তিন মাসেই টিআরপি তালিকার শীর্ষে উঠে যায়। তুলসী বিরানি হয়ে স্মৃতি ইরানি রাতারাতি ভারতের ঘরে ঘরে জনপ্রিয়তা পান। যেখানে মাসে এক হাজার ৮০০ রুপিতে কাজ করতেন, সেখান থেকে দিনে এক হাজার ২০০ রুপি পারিশ্রমিক পেতেন তিনি। ধীরে ধীরে তিনি টেলিভিশনের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেত্রীতে পরিণত হন।
স্মৃতি ইরানি টেলিভিশনে সাফল্যের পর রাজনীতির ময়দানেও পা রাখেন। ভারতীয় জনতা পার্টির হয়ে নির্বাচনে লড়াই করেন তিনি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। অভিনয়ের জনপ্রিয়তা আর ব্যক্তিগত সংগ্রামের অভিজ্ঞতা তাকে সাধারণ মানুষের কাছে আরও গ্রহণযোগ্য করে তোলে।
স্মৃতি ইরানির এ যাত্রা শুধু একজন অভিনেত্রীর গল্প নয়; বরং প্রত্যাখ্যান ও ব্যর্থতা থেকে উঠে দাঁড়ানো এক নারীর জীবন্ত কাহিনি। যেখানে দরিদ্র পরিবারে জন্ম, সমাজের তুচ্ছতাচ্ছিল্য আর পেশাগত প্রত্যাখ্যান, এয়ার হোস্টেস হওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ, ইন্টারভিউয়ে প্রত্যাখ্যান, তার চেহারায় ব্যক্তিত্বহীন ছাপ তাকে ভেঙে দেয়নি; বরং আরও শক্তিশালী করে বলিষ্ঠ করেছে।
সম্প্রতি এ প্রসঙ্গে অভিনেত্রী বলেন, অনেকে আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে গায়ের রং, রোগা শরীর কিংবা চেহারার জন্য। অনেকবার বলা হয়েছে— আমি দেখতে ভালো নই। কিন্তু আমি জানতাম, আমার ভেতরে অন্য রকম শক্তি আছে।
উল্লেখ্য, ১৯৭৬ সালে দিল্লিতে জন্ম স্মৃতি মালহোত্রা নামে। তিন বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। বাবা আধা পাঞ্জাবি, আধা মহারাষ্ট্রীয়; মা বাঙালি। সংসারের অবস্থা ছিল শোচনীয়। বাবা আর্মি ক্লাবের বাইরে বই বিক্রি করতেন, মা মসলা বিক্রি করতেন বাড়ি বাড়ি গিয়ে। আয়ের সীমিত টাকায় দিন চলত। কলেজ ছাড়তে হয়েছিল অর্থাভাবে। পরিবারের হাল ধরতে নেমে পড়তে হয় নানা কাজে।