প্রকাশ: ২২ আগস্ট, ২০২৫

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে সামনে রেখে সরগরম হয়ে উঠছে গোটা ক্যাম্পাস। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রার্থীরা। তারা শিক্ষার্থীদের কথা শুনতে ও প্রচারণা চালাতে শিক্ষার্থীদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। আবার অনেকে সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে চালাচ্ছেন নানা ধরনের প্রচার। পাশাপাশি নির্বাচনের ইশতেহার তৈরির জন্য সংগ্রহ করছেন শিক্ষার্থীদের মতামত।
এদিকে বৃহস্পতিবার সবার শেষে উমামা ফাতেমার নেতৃত্বে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যে’র পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা হয়েছে। এছাড়া আপ্যায়ন, অর্থ-সহযোগিতাসহ পাঁচ ধরনের কাজ প্রার্থীরা করতে পারবেন না বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
ভিপি পদে ৪৮, জিএস ১৯ : ডাকসু নির্বাচনে লড়তে যাওয়া প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে নির্বাচনের চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে এ তালিকা প্রকাশ করেন। প্রাথমিক তালিকা অনুযায়ী-এবার ডাকসুতে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ৪৮ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ১৯ জন এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ২৮ জন প্রার্থী প্রাথমিকভাবে বৈধ। এর মধ্যে ভিপি পদে ছাত্র ৪৩ জন, ছাত্রী পাঁচজন; জিএস পদে ছাত্র ১৮ জন, ছাত্রী একজন এবং এজিএস পদে ছাত্র ২৪ জন, ছাত্রী চারজন রয়েছে। ডাকসুতে এবার ২৮টি পদ। সিনেট ভবনে সংবাদ সম্মেলনে ড. জসীম উদ্দিন আরও জানান, ৪৬২ জন প্রার্থীকে প্রাথমিকভাবে বৈধ হিসেবে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে মোট ছাত্র প্রার্থী ৪০২ জন ও ছাত্রী ৬০ জন। আর ৪৭ জন রয়েছে ত্রুটিপূর্ণ প্রার্থীর তালিকায়। তাদের প্রার্থিতা স্থগিত হয়েছে।
তিনি বলেন, ভোটার নাম্বার, নাম পরিচয় ত্রুটিপূর্ণ, রেজিস্ট্রেশন নাম্বারে ভুল, বাবা মায়ের নামে ভুল, স্বাক্ষর ভুল ইত্যাদি কারণে ৪৭ জনের প্রার্থিতা স্থগিত হয়েছে। তারা আপিল করলে যাছাই-বাছাই করে দেখা হবে। আগামী ২৩ আগস্ট পর্যন্ত তাদের আপিলের সুযোগ আছে।
সম্পাদক ও সদস্য পদের প্রার্থিতা : মুক্তিযুদ্ধ ও ছাত্র আন্দোলন সম্পাদক পদে ১৫ জন; এর মধ্যে ছাত্র ১৪, ছাত্রী একজন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ১১ জন; এর মধ্যে ছাত্র ১০ জন, ছাত্রী একজন। ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক পদে ৯ জন; এর মধ্যে ছাত্র সাতজন, ছাত্রী দুজন।
সমাজসেবা সম্পাদক পদে ১৩ জন; এদের সবাই ছাত্র। মানবাধিকার ও আইন সম্পাদক পদে মোট ১১ জন; এর মধ্যে ছাত্র আট, ছাত্রী তিনজন। স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে ১৫ জন; এর মধ্যে ছাত্র ১২ জন, ছাত্রী তিনজন। ছাত্র পরিবহণ সম্পাদক পদে মোট ৯ জন; এর মধ্যে সবাই ছাত্র। ক্রীড়া সম্পাদক ছাত্র পদে ১৩ জন; এর মধ্যে ১২ জন ছাত্র, ছাত্রী একজন। গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ১১ জন; এর মধ্যে ছাত্র সাতজন, ছাত্রী চারজন। কমন রুম, রিডিং রুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ১১ জন; এর মধ্যে ছাত্র দুজন, ছাত্রী ৯ জন। আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে ১৫ জন; এর মধ্যে সবাই ছাত্র, ছাত্রী নেই। সাহিত্য সম্পাদক পদে ১৯ জন; এর মধ্যে ছাত্র ১৭ জন, ছাত্রী দুজন। এছাড়া প্রাথমিক তালিকায় মোট ২১৫ জনকে সদস্য পদে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ছাত্র ১৯১ জন ও ছাত্রী ২৪ জন। এবার ১৩টি কার্যনির্বাহী সদস্যের বিপরীতে এই ভোট অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় আগামী ২৫ আগস্ট দুপুর ১টা পর্যন্ত। আর প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হবে ২৬ আগস্ট বিকাল ৪টায়। ডাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর।
এর আগে গত বুধবার শেষ দিনে ডাকসুর ২৮টি পদের বিপরীতে মোট ৫০৯টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছিল। এছাড়া ১৮টি হলের সংসদ নির্বাচনের জন্য মোট এক হাজার ১০৯টি মনোনয়নপত্র জমা পড়ে।
যেসব কাজে আচরণবিধি লঙ্ঘন : এদিকে বৃহস্পতিবার থেকে ক্যাম্পাসে কী কী কাজ করতে পারবেন না প্রার্থী তা জানিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশনার। ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এসব কাজ করতে পারবেন না তারা। ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী কোনো প্রার্থী/পক্ষ আজ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্বপ্রণোদিত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক কোনো ধরনের সেবামূলক কাজে অংশ নিতে পারবেন না, কোনো ধরনের উপঢৌকন বিলিবণ্টন করতে পারবেন না, এমনকি আপ্যায়ন করানো, অর্থ সহযোগিতা করা কিংবা অনুরূপ কোনো কার্যক্রমে যুক্ত হতে পারবেন না। এ ধরনের কার্যক্রম সুস্পষ্টভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। নির্বাচনের তফশিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ আগস্ট দুপুর ১টা পর্যন্ত। আর প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হবে ২৬ আগস্ট বিকাল ৪টায়। ডাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে ৯ সেপ্টেম্বর।
নয় প্যানেল : বৃহস্পতিবার সবার শেষে উমামা ফাতেমার নেতৃত্বে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যে’র পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা হয়েছে। এর আগে বুধবারই বাকি আটটি প্যানেল তাদের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে। এসব প্যানেলের মধ্যে ছাত্রদলের প্যানেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আবিদুল ইসলাম খানকে সহসভাপতি (ভিপি), কবি জসীমউদ্দীন হল শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক শেখ তানভীর বারী হামিমকে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক তানভীর আল হাদী মায়েদকে সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) প্রার্থী করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ নামে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ। বুধবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে এ প্যানেলের ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদ ফারহান ফাইয়াজের বাবা শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া। এ প্যানেল থেকে ভিপি পদে লড়বেন ঢাকা গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের। জিএস পদে লড়বেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার। এছাড়া এজিএস পদে প্রার্থী হয়েছেন সংগঠনটির মুখপাত্র আশরেফা খাতুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। সংগঠনটি ভিপি হিসাবে কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক ও ঢাবি শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সাদিক কায়েম এবং জিএস পদে ঢাবি শাখার বর্তমান সভাপতি এসএম ফরহাদ মনোনয়ন পেয়েছেন। এজিএস পদে ঢাবি শাখার সেক্রেটারি মহিউদ্দিন খান নির্বাচন করবেন। শিবিরের প্যানেলে স্থান পেয়েছেন চার নারী শিক্ষার্থী, জুলাই আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থী এবং একজন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থী। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে অংশ নিতে ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ নামে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে বাম সংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট। মঙ্গলবার দুপুরে মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্যানেল ঘোষণা করেন গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের আহ্বায়ক ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেল। ঘোষিত প্যানেলে সহসভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন মেঘমল্লার বসু। সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন জাবির আহমেদ জুবেল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ‘ডাকসু ফর চেঞ্জ’ নামে প্যানেল ঘোষণা করেছে ছাত্র অধিকার পরিষদ। সংগঠনটি ভিপি পদে কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, জিএস পদে সাবিনা ইয়াসমিন মনোনয়ন পেয়েছেন। এজিএস পদে নাম ঘোষণা করা হয়েছে ঢাবি শাখার সদস্য সচিব রাকিবুল ইসলামের। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীরা হলেন-ইয়াছিন আরাফাত (ভিপি), খায়রুল আহসান মারজান (জিএস), সাইফ মোহাম্মদ আলাউদ্দিন (জিএস), আবু বকর (শিক্ষা ও গবেষণা)। বুধবার (২০ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেল ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত প্যানেলে সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী হিসাবে স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংসদের জামালুদ্দিন মুহাম্মাদ খালিদ ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে মো. আবু সায়াদ বিন মাহিন সরকারকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও এই প্যানেল থেকে সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ফাতেহা শারমিন এ্যানি। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-বিসিএল সমর্থিত তিন বাম সংগঠনের যৌথ প্যানেল ঘোষণা করেছে সংগঠনগুলো। তাদের প্যানেলের নাম দেওয়া হয়েছে অপরাজেয় ৭১-অদম্য ২৪। যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের শিক্ষার্থী মো. নাইম হাসান হৃদয়কে ভিপি (সহসভাপতি) এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী এনামুল হাসান অনয়কে জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী অদিতি ইসলামকে এজিএস (সহসাধারণ সম্পাদক) পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
উমামার পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা : উমামা ফাতেমার নেতৃত্বে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যে’র পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক উমামা ফাতেমাকে সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’। বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যের প্যানেল ঘোষণা করা হয়। পূর্ণাঙ্গ প্যানেলে সাধারণ সম্পাদক পদে আল সাদী ভূঁইয়া, সহসাধারণ সম্পাদক পদে জাহেদ আহমদ, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক পদে নূমান আহমাদ চৌধুরী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক মমিনুল ইসলাম (বিধান), আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক পদে নাফিজ বাশার আলিফ, কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে সুমী চাকমা, সাহিত্য এবং সাংস্কৃতিকবিষয়ক সম্পাদক পদে অনিদ হাসান, গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে সিয়াম ফেরদৌস ইমন, ক্রীড়া সম্পাদক পদে মো. সাদিকুজ্জামান সরকার, ছাত্র পরিবহণ সম্পাদক পদে মো. রাফিজ খান, সমাজসেবা সম্পাদক পদে তানভীর সামাদ, ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক পদে রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে ইসরাত জাহান নিঝুম, মানবাধিকার ও আইনবিষয়ক সম্পাদক পদে নুসরাত জাহান নিসুর নাম ঘোষণা করা হয়। এছাড়া সদস্য পদে নওরীন সুলতানা তমা, আবিদ আব্দুল্লাহ, ববি বিশ্বাস, মো. শাকিল, মো. হাসান জুবায়ের (তুফান), আব্দুল্লাহ আল মুবিন (রিফাত), অর্ক বড়ুয়া, আবির হাসান, নেওয়াজ শরীফ আরমান, মো. মুকতারল ইসলাম (রিদয়), হাসিবুর রহমান, রাফিউল হক রাফি, মো. সজিব হোসেন ও সাদেকুর রহমান সানির নাম ঘোষণা করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের একাধিক প্যানেল : জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়করা ভিন্ন ভিন্ন প্যানেলে নির্বাচন করছেন। অধিকাংশ সাবেক সমন্বয়ক বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতৃত্বে ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেলে নির্বাচন করছেন। সাবেক সমন্বয়ক ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমার নেতৃত্বে ‘স্বতন্ত্র ঐক্যজোট’। এছাড়াও সাবেক সমন্বয়ক মাহিন সরকারের নেতৃত্বে ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে।
পরিপূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফোকাস: আবিদুল ইসলাম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে (ঢাবি) পরিপূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরে বেশি ফোকাস থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্যানেলের। এমনটাই জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্যানেল সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেছেন, ক্যাম্পাসের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসে। তারা বাইরের হোস্টেল বা মেসে থাকলে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ হয়। ফলে তাদের অনেক পরিবার আর্থিকভাবে সমর্থন দিতে পারে না। ফলে এসব শিক্ষার্থীকে ৪-৫টি টিউশন করে চলতে হয়। সারা দিন টিউশনের পেছনে সময় দিয়ে বেড়ায় শুধু বেঁচে থাকার জন্য। ফলে একাডেমিক পড়াশোনার জন্য সঠিকভাবে সময় দিতে পারেন না। যার কারণে তার ফল ৩.৫০ (সিজিপিএ)-এর নিচে নেমে যায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় ছাত্রদলের প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী তানভীর বারী হামিম ও সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আবিদুল ইসলাম খান আরও বলেন, ‘যখন একজন শিক্ষার্থীর ফল ৩.৫০-এর নিচে নেমে যায়, তখন ভালো কোম্পানিগুলোর চাকরিতে আবেদন করতে পারেন না। সুতরাং আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট দূর করে তাদের জন্য একটি মানসিক প্রশান্তি আনতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব। যেন তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালোভাবে থাকতে পারে এবং পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারে। তাই পরিপূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরে আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রচেষ্টা এবং ফোকাস থাকবে। এখানে আমরা চিরকালের জন্য থাকতে আসিনি। আমাদের একটি টেবিল ও মাথার ওপর ছাউনি দরকার শুধু। যাতে পড়াশোনা শেষ করে বের হয়ে দেশকে নেতৃত্বে দিতে পারি। আমাদের কোনো বড় বড় ভবন লাগবে না। আমার সামর্থ্য না থাকলে টিনের চাল দিয়ে থাকার ব্যবস্থা করব।’
তাছাড়া তাদের পরিপূর্ণ ইশতেহারে ছাত্রদলের চিন্তার প্রতিফলন দেখতে পারবে-এমন মন্তব্য করেন তিনি।
নারীরা নির্ভয়ে চলবে এমন ক্যাম্পাস চাই: আবু সাদিক
ইসলামী ছাত্র শিবির ঘোষিত ডাকসু প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’র ভিপি প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম বলেছেন, আমরা চাই এমন একটি ক্যাম্পাস, যেখানে নারীরা নির্ভয়ে চলবে, যেখানে মেধা ও পরিশ্রমের স্বীকৃতি নিশ্চিত হবে, যেখানে শিক্ষার্থীরা গণরুম-গেস্টরুম কালচারমুক্ত হয়ে অবাধে বিচরণ করবে। বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে এসব কথা বলেন আবু সাদিক। তিনি জানান, আমরা জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা থেকে জন্ম নেওয়া একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, সবার বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন নিয়ে পথচলা শুরু করেছি। যেমন জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সূচিত হয়েছিল, তেমনি ডাকসু নির্বাচনকে আমরা দেখতে চাই নতুন বাংলাদেশ গড়ার এক মডেল হিসাবে, যেখানে মতভেদ থাকবে, বৈচিত্র্য থাকবে, কিন্তু বাংলাদেশ প্রশ্নে আমাদের ঐক্য অটুট থাকবে। আমাদের কাছে এই ক্যাম্পাস শুধু পড়াশোনার জায়গা নয়, এটি আমাদের স্বপ্নের আশ্রয়, সংগ্রামের মঞ্চ, ভবিষ্যৎ গড়ার ভিত্তি। অথচ এই আশ্রয়কে কলুষিত করা হয়েছে অন্যায়, অবিচার ও সন্ত্রাসের দ্বারা। শিক্ষার্থীদের অধিকার বারবার উপেক্ষিত হয়েছে, নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেছে, আর যোগ্যতার পরিবর্তে ক্ষমতার দম্ভে সুযোগ কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
আবু সাদিক কায়িম বলেন, এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্যই আমরা সামনে এনেছি ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট। আমাদের গঠন হয়েছে সাহস, সততা, দায়িত্বশীলতা আর ত্যাগের সমন্বয়ে। আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি, শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সামনের সারিতে থেকেছি, নারীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করার দাবি তুলেছি এবং সবার জন্য সমান সুযোগের পরিবেশ গড়ার জন্য লড়াই করেছি। আমাদের অঙ্গীকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, গবেষণা, দক্ষতা, খেলাধুলা ও সাহিত্যচর্চার এক অসাধারণ আঙ্গিনা হিসাবে গড়ে তোলা। আমরা বিশ্বাস করি, সবার মিলিত উদ্যোগ ছাড়া কখনোই সন্ত্রাস ও উচ্ছৃঙ্খলতামুক্ত একটি সুন্দর ক্যাম্পাস গড়ে তোলা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, তাই এবারের ডাকস-২০২৫ নির্বাচন কেবল ব্যালটের হিসাব নয়। এটি আমাদের স্বপ্ন ও ভবিষ্যতের লড়াই। প্রতিটি ভোট একটি প্রতিবাদ, প্রতিটি ভোট একটি অঙ্গীকার, প্রতিটি ভোট আমাদের সংগ্রামের প্রতি শ্রদ্ধা। আমরা চাই এমন একটি ক্যাম্পাস, যেখানে নারীরা নির্ভয়ে চলবে, যেখানে মেধা ও পরিশ্রমের স্বীকৃতি নিশ্চিত হবে, যেখানে শিক্ষার্থীরা গণরুম-গেস্টরুম কালচার মুক্ত হয়ে অবাধে বিচরণ করবে। আমরা বিশ্বাস করি, ভয় নয়। ঐক্য, স্বপ্ন ও সম্ভাবনার শক্তিই আমাদের এগিয়ে নেবে। আমাদের সবার প্রিয় ক্যাম্পাসকে অন্যায়মুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে নিতে আমরা বদ্ধপরিকর।
অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে বাস্তবায়ন করতে চাই: আব্দুল কাদের
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) প্যানেল ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’র ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের বলেছেন, জুলাইয়ে ক্যাম্পাসের আমূল পরিবর্তনের জন্য অভ্যুত্থান হয়েছে। আমরা যদি নির্বাচিত হই, তাহলে শিক্ষার্থীদের সেই আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে চাই। অর্থাৎ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিট (চেতনা) বাস্তবায়ন করতে চাই।
বৃহস্পতিবার আব্দুল কাদের যুগান্তরকে আরও বলেন, বিগত সময়ে শিক্ষার্থীরা একটা ট্রমার মধ্য দিয়ে গিয়েছে। হলে হলে দখলদারিত্ব চালানো হয়েছে। একটি সিটের জন্য শিক্ষার্থীদের ছাত্রনেতাদের দাসত্ব করতে হয়। শিক্ষার্থীদের মানবিক মর্যাদার যে জায়গা অর্থাৎ আবাসন, খাবারসহ শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে চাই।
তিনি বলেন, আমরা আগে ইনফরমালি কাজ করেছি। এখানে একটি পলিটিক্যাল সেটেলমেন্ট থাকা দরকার। একটি পলিটিক্যাল রূপরেখা থাকা দরকার, যেমন আবাসিক হলে রাজনীতি থাকবে কিনা। থাকলে কীভাবে থাকবে। এই বিষয় নিয়ে আমরা ইনফরমালি কাজ করেছি। আমরা এখন পলিসি পর্যায়ে কাজ করতে চাই। অর্থাৎ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে বাস্তবায়ন করতে চাই।
শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করব: উমামা ফাতেমা
জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক এবং ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী উমামা ফাতেমা বলেছেন, শিক্ষাঙ্গনে একাডেমিক পরিবেশ অক্ষুণ্ন রেখে শিক্ষার্থীদের সময়োপযোগী অধিকার আদায়ে কাজ করার প্রত্যয় আমাদের। বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে তিনি এই মন্তব্য করেন।
উমামা ফাতেমা বলেন, দীর্ঘ ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে ক্যাম্পাসে খুনি হাসিনার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে প্রতিবাদ জারি রেখেছিল অনেকেই। বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রযন্ত্র এবং সরকারি বাহিনী কর্তৃক নিগৃহীত শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ কোনো দলীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। কিন্তু তারা যার যার জায়গা থেকে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন, তাদের অনেকেই আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। স্বতন্ত্র জায়গা থেকে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে-এমন প্রার্থীদের নিয়ে আমরা একটি প্যানেল তৈরি করেছি স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য নামে।
প্যানেল ঘোষণার অনুষ্ঠানে ভিপি পদপ্রার্থী উমামা ফাতেমা বলেন, দীর্ঘ ২৮ বছর বন্ধ থাকার পর ২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু স্বৈরাচার হাসিনার লাঠিয়াল ছাত্রলীগের একচ্ছত্র ত্রাসের কারণে সেখানেও শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষা সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়নি। ২০২৪ সালে জুলাই-আগস্টের গণবিপ্লবে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের পতনের পর একটি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের সোনালি সুযোগ সামনে আসে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে দেরিতে হলেও শেষমেশ ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি ডাকসু নির্বাচন।