প্রকাশ: ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল ৮ দফা এবং ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ৯ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে। শনিবার দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অদম্য-২৪ স্তম্ভের সামনে সংবাদ সম্মেলনে ইশতেহার ঘোষণা করেন ভিপি প্রার্থী (ছাত্রদল) শেখ সাদী হাসান। অন্যদিকে দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ইশতেহার প্রকাশ করেন ভিপি প্রার্থী (শিবির) আরিফ উল্লাহ।
ছাত্রদলের ইশতেহারে দফাগুলো হলো-১. আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শিক্ষা ও গবেষণা; ২. শিক্ষাবান্ধব, নিরাপদ, মুক্ত ও বৈচিত্র্যময় ক্যাম্পাস; ৩. পরিকল্পিত আবাসন ও খাবারের উন্নত মান নিশ্চিতকরণ; ৪. নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ শিক্ষাঙ্গন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা; ৫. মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা; ৬. সুসমন্বিত পরিবহণ ব্যবস্থাপনা; ৭. ক্রীড়াচর্চা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য; ৮. পরিবেশ-প্রতিবেশ সংরক্ষণ ও প্রাণীবান্ধব ক্যাম্পাস।
শেখ সাদী হাসান বলেন, আমরা বিশ্বাস করি আমাদের ইশতেহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। আমরা সবাই মিলে এ ইশতেহার বাস্তবায়নে কাজ করে যাব ইনশাল্লাহ। এ সময় তিনি আট দফার অধীনে আরও কিছু প্রতিশ্রুতি দেন। সেগুলো হলো-ক্লাস, পরীক্ষা, ফলাফল সকল কার্যক্রম পরিচালিত হবে একাডেমিক ক্যালেন্ডার মোতাবেক; ক্যালেন্ডারে নিয়মিত জাকসু নির্বাচনকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে; কোর্স ক্যারিকুলামকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা হবে; প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য বুনিয়াদি ইংরেজি কোর্স চালু করা হবে; একটি আন্তর্জাতিক মানের ভাষা শিক্ষা ইনস্টিটিউট চালু করা হবে; ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে পার্টটাইম চাকরির সুযোগ তৈরি করা হবে; মেধা, যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে সকল শিক্ষক নিয়োগ এবং শিক্ষকদের পারফরম্যান্স মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা হবে; বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহীদের স্বল্পসুদে ব্যাংক লোনের সুবিধা প্রদানের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
এছাড়া জোরপূর্বক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণে বাধ্য করা; গেস্টরুম-গণরুম সংস্কৃতি, র?্যাগিং, নিপীড়ন, মানসিকভাবে হেনস্তা, শিক্ষার্থীদের অবদমিত করে জিম্মি করা এবং দখলদারিত্ব ও সন্ত্রাসের আত্মবিনাশী প্রক্রিয়াকে চিরতরে ক্যাম্পাস থেকে উৎখাত করা হবে। সকল মত, পথ, মতাদর্শ, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, পাহাড়, সমতলের সহাবস্থান, সমতা ও বৈচিত্র্যের মাঝে একতা নিশ্চিত করা হবে। প্রতিটি অনুষদে ও কেন্দ্রীয় মসজিদে নারীদের জন্য নামাজের আলাদা ব্যবস্থা করা হবে। এ সময় প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী তানজিলা হোসাইন বৈশাখী, পুরুষ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদউল ইসলাম, নারী যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী আনজুমান আরা ইকরাসহ অন্যান্য প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
শিবিরের ইশতেহার : শিবিরের ইশতেহারে দফাগুলো হলো-১. জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে ধারণ করে ফ্যাসিবাদমুক্ত ক্যাম্পাস গঠনের প্রচেষ্টা এবং নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে জড়িত শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের বিচার নিশ্চিতে সরব ভূমিকা। ২. সেশনজট নিরসনে অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার বাস্তবায়ন এবং মানোন্নয়ন পরীক্ষার সুযোগ সৃষ্টি। দলীয় বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগ বন্ধে সোচ্চার ভূমিকা ও কোর্স শেষে শিক্ষক মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু। বিদেশে উচ্চ শিক্ষা অর্জনবিষয়ক কর্মশালা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্কলারশিপ প্রাপ্তি ও প্রাপ্তির সুযোগ তৈরি করতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই। ৩. বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ প্রকৃতি রক্ষায় পূর্ণাঙ্গ ইকোলজিক্যাল মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় অভয়ারণ্য ঘোষণা ও সংরক্ষণ। ক্যাম্পাসে বৃক্ষরোপণ, কনজারভেশন ক্যাম্পেইন, ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ও রিসাইক্লিং সিস্টেম জোরদার।
৪. র্যাগিং, গেস্টরুম কালচার ও সাইবার বুলিংয়ের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা। ডাইনিংয়ে অন্তত ৫০ শতাংশ ভর্তুকি আদায় করে সুলভমূল্যে মানসম্মত খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করা। প্রতি তলায় বিশুদ্ধ পানির ফিল্টার স্থাপন। ছাত্রী হলে স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন নিশ্চিতকরণ।
৫. ক্যাফেটেরিয়াতে তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থা ও বিকালের নাশতা চালু। ক্যাফেটেরিয়ায় ডিজিটাল কুপন সিস্টেম সংযোজন। ক্যাফেটেরিয়া, বটতলা ও অন্যান্য স্থানের খাবারের মান এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিতে নিয়মিত মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা। পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল আদায়ের জন্য লড়াই ও ২৪/৭ অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু।
এ সময় প্যানেলটির সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী মাজহারুল ইসলাম, পুরুষ এজিএস পদপ্রার্থী ফেরদৌস আল হাসান, নারী সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলাসহ সব প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন