Advertisement

ডাকসু নির্বাচন: ভিপি পদে লড়ছেন ৪৮ প্রার্থী,

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর

প্রকাশ: ২৩ আগস্ট, ২০২৫

ডাকসু নির্বাচন: ভিপি পদে লড়ছেন ৪৮ প্রার্থী,
ডাকসু নির্বাচন: ভিপি পদে লড়ছেন ৪৮ প্রার্থী,

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া শেষ হয়েছে। এবারের নির্বাচনে নয়টি প্যানেল লড়ছে। এছাড়া স্বতন্ত্র হিসেবে অনেক প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

ডাকসুর প্রাথমিক তালিকা অনুযায়ী, সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ৪৮ জন প্রার্থী লড়ছেন। এর মধ্যে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবিদুল ইসলাম খান, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক আব্দুল কাদের, ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি এবং বর্তমান কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক মো. আবু সাদিক (সাদিক কায়েম) আলোচনায় এগিয়ে রয়েছেন। এছাড়া স্বতন্ত্র প্যানেলের উমামা ফাতেমা, জামালুদ্দিন মোহাম্মদ খালিদ, ছাত্র অধিকার পরিষদ সমর্থিত প্যানেলে বিন ইয়ামিন মোল্লা আলোচনায় এসেছেন।

গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ সমর্থিত ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের’ পক্ষ থেকে ভিপি পদে নির্বাচন করছেন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক আব্দুল কাদের। তিনি আগে ছাত্র অধিকার পরিষদ এবং গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি নামে দুটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০২২ সালে ছাত্রলীগের নির্যাতনে শহীদ আবরার ফাহাদের স্মরণসভা আয়োজনের কারণে গ্রেপ্তার হন আব্দুল কাদের। জেলে থাকায় তিনি সে বছর চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসার সুযোগ পাননি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তিনি সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দেন এবং নয় দফা ঘোষণা করেন। অভ্যুত্থানের পর গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক পদ পান।

অভ্যুত্থানের পর থেকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত ছিলেন কাদের। এছাড়া জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া অন্যান্য নেতা এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারাও কাদেরের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমর্থন জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ এই প্যানেলের ছবি শেয়ার করেছেন। এছাড়া একাধিক যুগ্ম আহ্বায়ক ও যুগ্ম সদস্য সচিব তাকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের সমর্থন ভোটারদের প্রভাবিত করতে পারে।

আবিদুল ইসলাম খান ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ইতোমধ্যে বিভিন্ন বক্তৃতা দিয়ে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তিনি মাঠে থেকে ছাত্র-জনতাকে সংগঠিত করেন। অভ্যুত্থানের সময় ‘প্লিজ কেউ কাউকে ছেড়ে যাইয়েন না’ বক্তব্য দিয়ে পরিচিতি পান তিনি। অভ্যুত্থানের অভিজ্ঞতা নিয়ে পরে তিনি ‘স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানল’ নামে একটি বই লিখেছেন। জুলাই অভ্যুত্থানের আগে এবং পরে বিভিন্ন আন্দোলনে তিনি সম্মুখ সারিতে থেকেছেন। সম্প্রতি বিভিন্ন টিভি টক-শোগুলোয় ভালো বক্তৃতা করে আলোচনায় এসেছেন আবিদুল। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তার পক্ষে প্রচারণায় নেমেছেন। দলীয় ভিত্তি তাকে নির্বাচনে এগিয়ে রাখতে পারে।

ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল থেকে নির্বাচন করছেন ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি আবু সাদিক (সাদিক কায়েম)। তিনি অভ্যুত্থানের সময় নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে ভূমিকা রাখেন। জুলাই অভ্যুত্থানের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবিরের সভাপতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। অভ্যুত্থানের আগে থেকেই ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা হলে হলে অবস্থান করেছেন। অভ্যুত্থানের পরে তারা হলে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। বিভিন্ন হলে ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক অবস্থান সাদিক কায়েমকে এগিয়ে রাখতে পারে। এছাড়াও অনলাইনে বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজের প্রচার-প্রচারণায় সাদিক কায়েম এগিয়ে রয়েছেন। এটি ভোটের মাঠকে প্রভাবিত করতে পারে।

এবারে ভিপি পদে নির্বাচন করছেন ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামীন মোল্লা। ২০১৯ সালে এই সংগঠন থেকেই ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর নির্বাচিত হন। বিন ইয়ামীন মোল্লা গণরুম-গেস্টরুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদসহ বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। ২০২২ সালের আবরার ফাহাদের স্মরণসভা আয়োজনের কারণে তাকে মারধর করা হয়। এরপর তিনি গ্রেপ্তার হন এবং দীর্ঘ সাত মাস কারাভোগ করেন। চব্বিশ সালের অভ্যুত্থানের পর তিনি পিএসসির সংস্কার আন্দোলন, ডাকসু আন্দোলনসহ একাধিক আন্দোলনের সঙ্গে ছিলেন।

এবারের নির্বাচনে আলোচিত আরেক নাম উমামা ফাতেমা। তিনি ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্য সচিব ছিলেন। জুলাই অভ্যুত্থানের সময় তিনি কবি সুফিয়া কামাল হলের সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করেছেন। পরে বিভিন্ন আন্দোলনে নারীদের সংগঠিত করেছেন। অভ্যুত্থানের পর তিনি ছাত্র ফেডারেশন থেকে অব্যাহতি নেন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নারীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা উমামাকে এগিয়ে রাখতে পারে।

নির্বাচন করছেন জামালুদ্দিন মোহাম্মদ খালিদ। তিনি একসময় ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি ছিলেন। পরে তাকে দলটি থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে আন্দোলন, শিক্ষার্থীদের হিজাব নিয়ে নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলনের বাইরেও একাধিক আন্দোলনে সামনের সারিতে ছিলেন খালিদ। পরে স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংসদ নামে তিনি একটি ছাত্রসংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানে আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব নেন। তিনিও ডাকসুতে আলোচনায় রয়েছেন।

আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে এই নেতাদের নেতৃত্বে আটটি প্যানেল নির্বাচন করবে। ইতোমধ্যে নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের কাছে যাওয়া শুরু করেছেন।

এফএইচ/এমজে

Lading . . .