‘বিশেষ বিবেচনায়’ ২য়বার মাস্টার্সে ভর্তির সুযোগ চান সাবেক সমন্বয়ক ও ছাত্রদল নেতারা
প্রকাশ: ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বিশেষ বিবেচনায়’ দ্বিতীয়বার মাস্টার্সে ভর্তির সুযোগ চান এক সাবেক সমন্বয়ক ও শাখা ছাত্রদলের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা।
ইতোমধ্যে বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) তারা উপাচার্যের কাছে লিখিত আবেদন জমা দিয়েছেন।
আবেদনপত্রে নেতারা বলেছেন, বিগত ‘ফ্যাসিস্ট শাসনামলে’ রাজনৈতিক হয়রানি ও কারাবরণের কারণে তারা সুষ্ঠুভাবে মাস্টার্স শেষ করতে পারেননি। এজন্য তারা দ্বিতীয়বার মাস্টার্সের সুযোগ চান। তারা সবাই উপাচার্য বরাবর করা এ আবেদনে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সভাপতিকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
দ্বিতীয়বার মাস্টার্সে ভর্তির সুযোগ চেয়ে আবেদন করা নেতারা হলেন- শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী, সাধারণ সম্পাদক সর্দার জহুরুল ইসলাম, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিক, সিনিয়র সহ-সভাপতি শাকিলুর রহমান সোহাগ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তুষার শেখ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী হাসান মুন্না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দ্বিতীয়বার মাস্টার্সের জন্য ট্যুারিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ভর্তির জন্য আবেদন করেছেন ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তুষার শেখ।
এছাড়া ফোকলোর ও সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগে ভর্তির আবেদন করেছেন সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী, সাধারণ সম্পাদক সর্দার জহুরুল ইসলাম, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিক, সিনিয়র সহ-সভাপতি শাকিলুর রহমান সোহাগ।
এদিকে সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী হাসান মুন্না আবেদন করেছেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে।
দ্বিতীয়বার মাস্টার্সে ভর্তির জন্য আবেদনকারীরা আবেদনপত্রে উল্লেখ করেন বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে তারা নিয়মিত মাস্টার্সে ভর্তি হতে পারেননি। এই পরিপ্রেক্ষিতে তারা সংশ্লিষ্ট বিভাগে ভর্তি হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন।
আবেদনপত্রে আবেদনকারী এক নেতা উল্লেখ করেন, ছাত্রজীবনে আমি বারবার ফ্যাসিবাদী শাসনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে অংশ নিয়েছি। সেই কারণে আমি কয়েকবার জেল খেটেছি, বারবার আহত হয়েছি, একাধিক মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলার আসামী হয়েছি এবং সর্বশেষ জুলাই-আগস্ট ২০২৪-এর ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় যোদ্ধা হিসেবে অংশগ্রহণ করেছি।
ওই আবেদনকারী আরও লিখেন, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজেমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে আমি একাডেমিক চর্চার পাশাপাশি মুক্তচিন্তা, গণতান্ত্রিক চর্চা ও সমাজের বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে গবেষণাকে সমৃদ্ধ করতে পারব। আমাকে বিশেষ বিবেচনায় ওই বিভাগে এমবিএতে (মাস্টার্স) ভর্তির সুযোগ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ফোকলোর অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্চ অ্যাসোসিয়েশনের (ইউট্যাব) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক।
আবেদনের বিষয়ে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তুষার শেখ বলেন, আমি এখনও আবেদন করিনি। তবে আবেদন করার ইচ্ছা আছে।
আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করে শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সর্দার জহুরুল ইসলাম বলেন, আমরা কয়েকজন নেতাকর্মী আজ উপাচার্যের কাছে আবেদন করেছি। তবে আমাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। বিষয়টি আগামীকাল জানানোর কথা বলেছেন উপাচার্য।
আরেক আবেদনকারী ও সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী হাসান মুন্না বলেন, আমরা দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী শাসনামলে সংগ্রামে রাজপথে ছিলাম। উপাচার্য দায়িত্ব নেওয়ার ৫ মাসের ভেতরে রাকসু নির্বাচন দেওয়ার কথা ছিল। তবে সেটা ১১ মাস পরে হচ্ছে। আমার গত ফেব্রুয়ারিতে ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে। এতে আমি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আমরা ২০১৭-১৮ বর্ষের শিক্ষার্থীরা রাকসুতে অংশ নিতে চাই। এ বিষয়ে দ্বিতীয়বার মাস্টার্সে ভর্তির সুযোগ দিতে পারে এজন্য আমি একটি আবেদন করেছি।
আবেদনের বিষয়ে ফোকলোর বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আসন্ন রাকসু নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে আমরা কয়েকজন শিক্ষক উপাচার্যকে দ্বিতীয়বার মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তির সুযোগ প্রদান করতে অনুরোধ করেছি। এই পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকজন শিক্ষার্থী নৃবিজ্ঞান, ইতিহাস, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটিসহ আমার বিভাগেও আবেদন করেছেন। যারা আবেদন করেছেন আমরা তাদের সুপারিশ করেছি। কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ডাবল মাস্টার্সের সুযোগ আছে। এখন উপাচার্য বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী বিবেচনা করবেন এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
বিষয়টি জানতে চেয়ে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মাজেদুল ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তার নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব যুগান্তরকে বলেন, আজকে ছাত্রদলের চারজন এসে দরখাস্ত দিয়ে গেছেন তারা যদি দ্বিতীয়বার মাস্টার্সের মাধ্যমে যদি ছাত্রত্ব ফিরে পায় সেজন্য। আবেদন গ্রহণ করেছি। এটাকে কোনো দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা হবে না। ছাত্ররা দরখাস্ত দিতেই পারে। আমরা আমাদের নিয়মকানুন দেখব, সেই অনুযায়ী বিবেচনায় নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন