জাকসু নির্বাচনকালীন ফাইনাল পরীক্ষা, শিক্ষার্থীদের চরম অসন্তোষ
প্রকাশ: ২৮ আগস্ট, ২০২৫

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আগামী ১১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের সময় বিভিন্ন বিভাগের ফাইনাল পরীক্ষা চলমান থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিতব্য এই ঐতিহাসিক নির্বাচনকে ঘিরে পুরো ক্যাম্পাস উৎসবমুখর হলেও ফাইনাল পরীক্ষার চাপের কারণে শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ নির্বাচনী আমেজে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে পারছেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে ইতোমধ্যে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।
নিয়মিত ক্লাস নিয়ে আপত্তি না থাকলেও নির্বাচনকালীন সময়ে ফাইনাল পরীক্ষা নেওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পরীক্ষার প্রস্তুতি ও নির্বাচনী অংশগ্রহণ একসঙ্গে সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে পড়াশোনায় যেমন পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া যাচ্ছে না, তেমনি নির্বাচনী কার্যক্রমেও সক্রিয় থাকা সম্ভব হচ্ছে না।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ৬ অনুষদের ২৪টি বিভাগে পরীক্ষার সময়সূচি চূড়ান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১১ সেপ্টেম্বর জাকসু নির্বাচনের দিনও ৫টি বিভাগে পরীক্ষা রয়েছে।
পরীক্ষা নির্ধারিত কিছু বিভাগ
সমাজবিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ভূগোল ও পরিবেশ (৩য় বর্ষ), নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা (১ম ও ৩য় বর্ষ ও মাস্টার্স), আইবিএ (মাস্টার্স)।
আইন অনুষদভুক্ত আইন ও বিচার (১ম বর্ষ)।
কলা ও মানবিক অনুষদভুক্ত প্রত্নতত্ত্ব (১ম বর্ষ), আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (১ম বর্ষ), নাটক ও নাট্যতত্ত্ব (১ম বর্ষ ও মাস্টার্স), তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি (৪র্থ বর্ষ), সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন (১ম বর্ষ), দর্শন (১ম বর্ষ)।
গাণিতিক ও পদার্থ অনুষদভুক্ত সিএসই (১ম ও ৩য় বর্ষ), পরিবেশ বিজ্ঞান (২য়, ৩য় বর্ষ ও মাস্টার্স), রসায়ন (১ম বর্ষ ও মাস্টার্স), আইআইটি (মাস্টার্স), গণিত (১ম বর্ষ), পরিসংখ্যান (১ম বর্ষ)।
জীববিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ফার্মেসি (১ম ও ২য় বর্ষ), প্রাণরসায়ন (১ম বর্ষ), প্রাণিবিদ্যা (২য় বর্ষ), বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (১ম বর্ষ), পাবলিক হেলথ (১ম বর্ষ)।
ব্যবসায় অনুষদভুক্ত ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং (১ম বর্ষ), মার্কেটিং (১ম বর্ষ), অ্যাকাউন্টিং (৩য় বর্ষ)।
সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী আবিদ হাসান প্লাবন বলেন, “আমাদের পরীক্ষা ১০ তারিখ থেকে শুরু। নির্বাচনের উৎসবমুখর পরিবেশ থাকলেও পরীক্ষার কারণে আমরা অংশ নিতে পারছি না। বিশ্ববিদ্যালয় শুধু পড়াশোনার জায়গা নয়; এখানে খেলাধুলা, গবেষণা, রাজনীতি, সাহিত্যও সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই জাকসু নির্বাচনে সার্বিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এই সময়ে পরীক্ষা বন্ধ রাখা উচিত।”
পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানান, “গত বছরের ডিসেম্বরেই আমাদের শেষ পরীক্ষা শেষ হলেও ফল প্রকাশ হয়নি। অথচ দীর্ঘ সময় ফেলে রেখে হঠাৎ করে জাকসু নির্বাচনের সময়ে পরীক্ষা নেওয়া অনুচিত। এতে মনোযোগ ও ফলাফল দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া সুলতানা বলেন, “আমাদের পরীক্ষা ৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে। পরীক্ষার চাপের কারণে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিতে পারছি না। প্রশাসনের উচিত নির্বাচনের পর পরীক্ষা নেওয়া।”
অন্যদিকে তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা জানান, দীর্ঘ এক বছর পর তাদের বিলম্বিত পরীক্ষা ৩১ আগস্ট থেকে শুরু হচ্ছে। এতে তারা উচ্ছ্বসিত হলেও জাকসু নির্বাচনের প্রচারণার সময় প্রস্তুতিতে সমস্যা হচ্ছে।
জাকসুর ভিপি পদপ্রার্থী আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, “ফাইনাল পরীক্ষা হলে অনেক শিক্ষার্থী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না, প্রার্থীরাও প্রচারণা চালাতে ব্যর্থ হবে। আমরা চাই প্রশাসন পরীক্ষাগুলো পিছিয়ে দিক।”
জিএস পদপ্রার্থী মাজহারুল ইসলাম বলেন, “শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ক্ষতি হোক, তা আমরা চাই না। সবাই চাইলে পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তনের পক্ষে আমরা থাকবো।”
ভিপি প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, “অনেক শিক্ষার্থী ও প্রার্থীর ফাইনাল পরীক্ষা থাকায় অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হবে। আমি নিজেও প্রশাসনকে মৌখিকভাবে নির্বাচনকালীন সময়ে পরীক্ষা না নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি।”
উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, “বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনিক সভায় আলোচনা করা হবে।”
১৯৯২ সালের পর দীর্ঘ ৩৩ বছর পর এবারই প্রথম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাকসু নির্বাচন। তবে একই সময়ে পরীক্ষা ও নির্বাচন হওয়ায় শিক্ষার্থীরা দ্বিধায় পড়েছেন। তারা আশা করছেন, প্রশাসন দ্রুত সমাধান বের করবে, যাতে তারা পড়াশোনা ও নির্বাচনী কার্যক্রম—দুটিতেই অংশ নিতে পারেন।
ইএইচ
আরও পড়ুন