Advertisement

জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন বৃহস্পতিবার

যুগান্তর

প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

24obnd

৩৩ বছর পর সব জল্পনা কাটিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে আসন্ন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন।

বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলবে ভোট গ্রহণ।

এরই মধ্যে জাকসু নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মঙ্গলবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জাকসু নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় নির্বাচনের সার্বিক দিক তুলে ধরে নির্বাচন কমিশন।

জাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান বলেন, মোট ২১টি হলে ২২৪টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে ছাত্রদের ১১টি ও ছাত্রীদের ১০টি হলে রয়েছে ভোট কেন্দ্র।

তিনি জানান, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ২১টি হলে ২১ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ৬৭ জন পুলিং অফিসার ও ৬৭ জন পুলিং অফিসারের সহায়ক হিসেবে কাজ করবেন। এছাড়া প্রতিটি ভোট কেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা, কর্মচারীরাও সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন।

তবে জাকসু নির্বাচনে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করবে কমিশন। এজন্য ভোট কেন্দ্র সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। নিরাপত্তা জোরদার করতে ১২০০ পুলিশ মোতায়েন থাকবেন। বিশেষ পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকবে বলে জানায় নির্বাচন কমিশন।

সার্বিক বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব অধ্যাপক রাশিদুল আলম বলেন, শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে কমিশন সদা প্রস্তুত। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকবেন। এরমধ্যে সাদা পোষাকেও সার্বক্ষণিক নজর রাখবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এখন পর্যন্ত জাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ১১,৮৯৭ জন। কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদে প্রায় ৬৫০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

ডাকসুতে শিবিরের নিরঙ্কুশ জয়, প্রভাব পড়বে জাকসুতেও

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদে (ডাকসু) বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের’ নিরঙ্কুশ জয়ের প্রভাব পড়তে পারে বলে জানান শিক্ষার্থীরা।

জাকসুতে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের’ প্রার্থীরাও এ বিষয়ে আশাবাদী।

তারা জানান, ডাকসুতে শিবিরের বড় জয় হতে পারে আমাদের জয়ের অন্যতম কারণ। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট নিয়ে কাজ করি বলে আমাদের এত জনপ্রিয়তা। শিক্ষার্থীদের হয়ে কাজ করা আমাদের অন্যতম অঙ্গীকার।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী রুবিনা জাহান তিথি বলেন, যদিও ঢাবির সঙ্গে জাবিকে শতভাগ মেলানোটা বোকামি। তাও কয়েকটা কথা বলতেই হয়। এই যে জাহাঙ্গীরনগরে মেয়েদের ভোট পাওয়ার জন্য সান্ধ্য আইন আসবে, বটে আড্ডা দেওয়া যাবে না, ১০টার পরে হলে ঢুকলে বাসায় কল যাবে- টাইপ আলাপ উঠে আসতেসে। এগুলো আসলে কত পারসেন্ট মেয়েকে আকৃষ্ট করছে?

বটতলা কিংবা টিএসসির বাইরেও বিশাল সংখ্যক জাবিয়ান নারী আছেন, যারা কেবল হল টু ডিপার্টমেন্ট টাইপ মানুষ। ইনাদের কী আসলে বটের আড্ডা অফ হয়ে গেলে, অথবা সান্ধ্য আইন আসলে কিছু আসে যায়?

প্রার্থীদের জেতার জন্য কিন্তু এই নারীদের ভোটও লাগবে। তাদের সাইকোলজি আলাদাভাবে বুঝে প্রচারণা চালিয়েছেন তো? মেয়েদের হল কিন্তু কাচ্চি অথবা বোতল খেয়ে ভোটটা দিবে না। নিজের মতাদর্শ হিসেবেই ভোট দিবে।

ইংরেজি বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী ফারুক মিয়া বলেন, আমার মনে হয় ডাকসু নির্বাচনের প্রভাব জাকসুতে পড়বে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শতভাগ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়।

এখানে শিক্ষার্থীরা আগে থেকেই তাদের পছন্দের প্রার্থী ঠিক করে রেখেছেন বলে আমার ধরণা। এমন না যে ডাকসুতে শিবিরের জয়, এজন্য জাকসুতে এখন সবাই শিবিরকে ভোট দিবে। তবে জাকসুতে শিবিরের পক্ষে-বিপক্ষে ভালো লড়াই হবে ভোটের মাঠে।

জিএস পদপ্রার্থী মাজহারুল ইসলাম বলেন, অনেক প্রার্থী এমন ইশতেহার ঘোষণা দেন যা পূরণ করা সম্ভব নয়। আমাদের ইশতেহারে এমন কিছু নেই। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট নিয়ে কাজ করতে চাই। শিবির কারও উপর আদর্শ চাপিয়ে দেয় না। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে আমরা কাজ করে যাব।

সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের ভিপি প্রার্থী আরিফ উল্যাহ বলেন, দুই সপ্তাহ সময় চলা প্রচারণায় কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি, এটা খুবই ভালো দিক। শিক্ষার্থীদের থেকে আমরা ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। তাদের অধিকার আদায়ে সদা অঙ্গীকারবদ্ধ আমাদের প্যানেল। আশা করি, ১১ সেপ্টেম্বর ভোটের ব্যালটের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের যোগ্য প্রার্থীকে বাছাই করে নেবেন।

আগের দিন রাতে ১০ ঘণ্টা অবরুদ্ধ ভিসি ও নির্বাচন কমিশন

এদিকে জাকসু নির্বাচনে ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেল থেকে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী জাবি শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা বাতিলকে কেন্দ্র করে নির্বাচনের একদিন আগে জাকসু নির্বাচন কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে রাতভর অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে জাকসু নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়ন সমর্থিত ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেলের প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশন ও উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রেখে এ ঘটনার সমাধানের দাবি জানান।

শিক্ষার্থীরা জানান, প্রার্থিতা ফিরে পেতে হাইকোর্টে সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) রিট করেন অমর্ত্য। এরপর আদালতে শুনানি শেষে অমর্ত্য রায় প্রার্থিতা ফিরে পান।

পরবর্তীতে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আপিল করা হয় চেম্বার আদালতে। সর্বশেষ তথ্যমতে, অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা চূড়ান্তভাবে বাতিল করেছে চেম্বার জজ আদালত।

নির্বাচনের দুই দিন আগে কেন অমর্ত্যের প্রার্থিতা বাতিল করা হলো এবং ব্যালট পেপার ছাপানো হয়েছে কিনা, না হলে তার প্রার্থিতা পুনর্বহাল দাবি নিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশনের সামনে জমায়েত হয় ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেলের প্রার্থী ও সমর্থকরা।

একপর্যায়ে তারা উপাচার্য ও নির্বাচন কমিশনকে সিনেট হলের ভেতরে আলোচনায় বসতে বাধ্য করে। আলোচনায় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আদালতের রায়ের ব্যাপারে নিজেদের অপারগতা জানায়। একপর্যায়ে রাত ১১টার দিকে উপাচার্য কক্ষ থেকে বের হতে গেলে ওই শিক্ষার্থীরা কক্ষের দরজা বন্ধ করেন।

সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের প্রার্থীরা দাবি করেন, অমর্ত্যের প্রার্থিতা বাতিলের আদেশ অবৈধ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইচ্ছাকৃত এটি করেছে। তার প্রার্থিতা ফিরিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত তারা নিজেরাও সেখান থেকে যাবেন না, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও নির্বাচন কমিশনকেও সেখান থেকে যেতে দেবেন না।

আদালতের রায়ের ঘটনায় উপাচার্য ও নির্বাচন কমিশনকে অবরুদ্ধ করার কারণ জানতে চাইলে ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেলের এজিএস (নারী) পদপ্রার্থী ফারিয়া জামান নিকি বলেন, জাবি প্রশাসন ইচ্ছাকৃতভাবে অমর্ত্যের প্রার্থিতা বাতিল করেছে। আদালতের কাছে ‘ব্যালট ছাপা হয়ে গেছে’ এমন মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে অমর্ত্যের প্রার্থিতা বাতিল করানো হয়েছে।

যদি ব্যালট ছাপানো হয়েই থাকে, তাহলে আজ ডোপ টেস্টে যাদের ফলাফল পজিটিভ এসেছে, তাদের নাম ব্যালট পেপার থেকে বাদ দেওয়া হবে কিভাবে?

যদি ব্যালট পেপার ছাপানো না হয়ে থাকে তাহলে আদালতের মাধ্যমে অমর্ত্যের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের বিষয়ে আমরা প্রশাসনের কাছে সুস্পষ্ট সমাধান না পাওয়া পর্যন্ত সিনেট ভবন ত্যাগ করব না।

এ সময় তথ্য সংগ্রহ করতে সাংবাদিকরা কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে তারা বাধা দেন। জানান ভেতরে আলোচনা চলছে। তবে নির্বাচন কমিশন জানায় তাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।

ফেসবুক লাইভে অবরুদ্ধের খবর পেয়ে রাত ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থী এবং প্রার্থীরা সিনেট ভবনে আসেন। সেখানে তারা প্রশ্ন তোলেন, নির্বাচনের মাত্র এক দিন আগে এভাবে রাতভর নির্বাচন কমিশনকে অবরুদ্ধ করে রাখা নির্বাচন বানচালের কৌশল কিনা।

এছাড়া তারা প্রশ্ন তোলেন, আদালতের রায়কে অমান্য করে আদালতকে অবমাননা করছেন কিনা তারা।

তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদাধিকার বলে জাকসুর সভাপতি। তিনি এই পদে থেকে নির্বাচন কমিশনের কোনো মিটিংয়ে উপস্থিত থাকতে পারেন না।

এ সময় জাকসু নির্বাচনে ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’ প্যানেল থেকে জিএস পদপ্রার্থী আবু তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম উপস্থিত হন। অন্যদের মতো তিনিও নির্বাচন কমিশনকে উদ্দেশ্য করে বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যে তিনি অমর্ত্যের প্রার্থতা বাতিলের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এছাড়া বক্তব্যের একপর্যায়ে উপাচার্য ও নির্বাচন কমিশনকে আটকে রাখার ঘটনায় সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের কর্মকাণ্ড এবং আবাসিক হল থেকে আটকে রাখার কারণ জানতে আসা শিক্ষার্থী ও প্রার্থীদের ‘মব’ বলে সম্বোধন করেন। নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন কাজেরও সমালোচনা করেন তিনি।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮ ব্যাচের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী শোয়াইব হাসান বলেন, এ ঘটনা নির্বাচনকে বানচালের ষড়যন্ত্র মনে করে আমরা এখানে ছুটে এসেছি। নির্বাচনের মাত্র একদিন আগে রাতভর উপাচার্য এবং নির্বাচন কমিশনকে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। জাকসু বানচালের যেকোনো ষড়যন্ত্রকে শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করবে।

পরবর্তীতে ভোর ৫টার দিকে ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেল থেকে জিএস পদপ্রার্থী শরণ এহসান বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে আরও দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করি। আমরা চাই, বেলা ১১টার মধ্যে আমাদের একটা সিদ্ধান্ত জানানো হোক।

এরপর ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ সবাই সিনেট ভবন ত্যাগ করেন এবং যার যার হলে ফিরে যান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, এটা আদালতের রায়। চাইলেই তো আমরা পরিবর্তন করে ফেলতে পারি না। তবে আমি চাই সমস্যার সমাধান হোক। কিভাবে সমাধান করা যায় সেই বিষয়ে পরামর্শ চাই।

Lading . . .