সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বপ্নপূরণে লড়াই করবে জাকসুর এজিএস প্রার্থীরা
প্রকাশ: ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

দীর্ঘ ৩৩ বছর পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন। শেষ সময়ে প্রার্থীরা নির্বাচনি প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রার্থীরা দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।
জাকসু নির্বাচনে এজিএস পদে ১০ জন পুরুষ ও ছয়জন নারী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে একজন নারী ও তিনজন পুরুষ এজিএস পদের প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলেছেন যুগান্তরের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রাশেদুল ইসলাম। তারা তাদের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরেছেন।
সততা, দক্ষতা ও নৈতিকতার সমন্বয়ে অপরাজনীতির অবসান ঘটিয়ে শিক্ষার্থীবান্ধব জাকসু গড়ে তুলতে চাই: ফেরদৌস আল হাসান
জাকসু নির্বাচনে শিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল থেকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে লড়বেন ফেরদৌস আল হাসান। তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ব্যবস্থাপনা সংকট। নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর হয়ে সেই সংকট সমাধানে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
ফেরদৌস বলেন, যদি আল্লাহর রহমতে আমি নির্বাচিত হই, তবে শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষাই হবে আমার ইশতেহার। আমি চাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌলিক সমস্যাগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে সমাধান করতে।
তিনি জানান, একাডেমিক ও প্রশাসনিক সংস্কার, মানসম্মত পরীক্ষা চালু, শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা এবং শিক্ষক মূল্যায়ন পদ্ধতি বিষয়ে তার ইশতেহারে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি গবেষণার জন্য আলাদা একাডেমিক জোন প্রতিষ্ঠা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য একটি কেন্দ্রীয় সাইবার সিকিউরিটি সেল গঠনের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি।
নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে ফেরদৌস বলেন, আমরা চাই একটি নারীবান্ধব ক্যাম্পাস। নারীদের অবাধ চলাচল ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণপ্রকৃতি ও পরিবেশ নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, জাহাঙ্গীরনগরের লেকগুলো সংস্কার করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনব। পাশাপাশি অতিথি পাখির আবাসস্থল রক্ষায় উদ্যোগ নেব।
শিক্ষার্থীদের খাদ্য নিরাপত্তা ও ভর্তুকি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডাইনিং ও ক্যান্টিনে অন্তত ৫০ শতাংশ ভর্তুকি নিশ্চিত করার চেষ্টা করব, যাতে শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পেতে পারে।
শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার অঙ্গীকার জানিয়ে ফেরদৌস বলেন, ফ্যাসিবাদী আমলেও আমরা অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ছিলাম। এখনো থাকব। সততা, দক্ষতা ও নৈতিকতার সমন্বয়ে আমরা এমন এক জাকসু চাই, যা শিক্ষার্থীদের প্রকৃত কণ্ঠস্বর হবে।’
অলীক প্রতিশ্রুতি নয়, শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশই আমার লক্ষ্য: মো. নাজমুল ইসলাম
‘স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ’ প্যানেলে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন মো. নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা বলি না যে জাকসু শিক্ষার্থীদের চাকরি দিয়ে দেবে-এ ধরনের অলীক প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করি না। বরং শিক্ষার্থীদের মেধা ও মননের বিকাশের জন্য আবাসন সংকট নিরসন, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিশ্চিত করা এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করা আমাদের প্রধান লক্ষ্য।’
তিনি মনে করেন, যদি মৌলিক এই সমস্যাগুলোর সমাধান করা যায়, তবে শিক্ষার্থীরা নিজেদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারবে এবং দক্ষ হয়ে কর্মক্ষেত্রে জায়গা করে নিতে সক্ষম হবে।
নাজমুল বলেন, আমাদের প্রজন্মকে আই হেট পলিটিক্স থেকে আই লাভ পলিটিক্স এ নিয়ে আসাই আমার মূল লক্ষ্য। কাজ, লক্ষ্য ও প্রতিশ্রুতি পূরণের মধ্য দিয়েই শিক্ষার্থীরা রাজনীতির প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনবে।
বাংলাদেশের লড়াই, সংগ্রাম ও ঐতিহ্যের ইতিহাসকে ধারণ করে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে একটি স্বপ্নের ক্যাম্পাস গড়ে তোলাই তার অঙ্গীকার।
সবার আগে অগ্রাধিকার পাবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা: মো. সাজ্জাদুল ইসলাম
জাকসু নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্যানেলে এজিএস (পুরুষ) পদে লড়বেন মো. সাজ্জাদুল ইসলাম। এজিএস প্রার্থী সাজ্জাদ মনে করেন, শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচন মূলত একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষার্থীরা অবশ্যই সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে। জাকসুতে তারা সবচেয়ে সৎ, যোগ্য, পরিশ্রমী ও বিচক্ষণ নেতৃত্বকে বেছে নেবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
সাজ্জাদ বলেন, যদিও আমি একটি দলের হয়ে নির্বাচন করছি, তবে নির্বাচিত হলে আমার প্রথম অগ্রাধিকার থাকবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কল্যাণ। শিক্ষা ও গবেষণা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো, পড়াশোনা শেষে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা, অবকাঠামো উন্নয়ন ও ক্রীড়া-সংস্কৃতির বিকাশ আমার মূল লক্ষ্য।
সাজ্জাদ মনে করেন, জাহাঙ্গীরনগরের নারী শিক্ষার্থীরা তুলনামূলকভাবে দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে নিরাপদ। তবুও তিনি নিরাপত্তা আরও জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দেন।
তিনি আরও বলেন, যত্রতত্র ময়লা ফেলা, অনিয়ন্ত্রিত বিল্ডিং নির্মাণ এবং অতিথি পাখির আগমন কমে যাওয়ার মতো সমস্যাগুলো সমাধানে কাজ করব।
নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, সাইবারবুলিং প্রতিরোধ ও মাতৃত্ববান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে চাই: আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা
জাকসু নির্বাচনে শিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল থেকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা। কেন তিনি এই প্যানেল বেছে নিয়েছেন, নারী শিক্ষার্থীদের জন্য তার পরিকল্পনা এবং বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সামগ্রিক ভাবনা তুলে ধরেছেন তিনি।
মেঘলা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে সাড়ে তিন বছর সাংবাদিকতা করেছি এবং এক বছর এক্টিভিজম করেছি। কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত না থাকায় বিভিন্ন সংগঠন থেকে প্রস্তাব পেয়েছিলাম। কিন্তু আমি মনে করেছি শিবির সমর্থিত প্যানেলে থেকে শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর হয়ে আরও কার্যকরভাবে কাজ করতে পারব।’
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকে সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত মেঘলা সর্বশেষ জাবি প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি ছিলেন। এছাড়া ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ ও যুগান্তর স্বজন সমাবেশের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
নারী শিক্ষার্থীদের সমস্যা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী নারী হলেও নেতৃত্বে তাদের অংশগ্রহণ কম। এর বড় কারণ সাইবার বুলিং। আমি নিজেও বহুবার সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়েছি। এজন্য আমরা এমন একটি সেল গঠন করবো যেখানে সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগ দিলে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই হবে আমার প্রথম কাজ। ছাত্রী হলে চুরির ঘটনা, বহিরাগত প্রবেশ কিংবা ক্যাম্পাসে হেনস্তার মতো সমস্যা দূর করতে আমরা প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে মাতৃত্ববান্ধব পরিবেশ গড়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে মেঘলা বলেন, ‘অনেক ছাত্রী আছেন যারা মা। পড়াশোনা ও মাতৃত্বের মধ্যে কাউকে যেন দ্বিধায় পড়তে না হয়, এজন্য আমি একটি ডে-কেয়ার সেন্টার চালু করতে চাই। পাশাপাশি ছাত্রী মায়েদের জন্য নিরাপদ ব্রেস্ট ফিডিং কর্নারও স্থাপন করব।’
আরও পড়ুন