Advertisement
  • হোম
  • বিনোদন
  • ১৭ সুপারহিট ছবি, শত জনপ্রিয় গান—তবুও নেই স্বীকৃতি!

১৭ সুপারহিট ছবি, শত জনপ্রিয় গান—তবুও নেই স্বীকৃতি!

চ্যানেল আই

প্রকাশ: ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫

সত্তর ও আশির দশকের ‘ডায়নামিক ফিল্ম ডিরেক্টর’ বলা হয় দেওয়ান নজরুলকে। শুরুর দিকে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সিনেমা সারাদেশে জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে যে কজন নির্মাতার অবদান ইতিহাসে লেখা থাকবে, তাদের মধ্যে দেওয়ান নজরুলের নাম থাকবে তালিকার প্রথম দিকে!

বিখ্যাত এই নির্মাতার হাতে নির্মিত হয়েছিল আসামী হাজির, দোস্ত দুশমন, কালিয়া, বারুদ, জনি, মাস্তান রাজা, জিঘাংসা, জনিসহ ১৭টি ব্যবসাসফল ছবি।

প্রায় ২০ বছর হলো সিনেমা নির্মাণ থেকে দূরে আছেন দেওয়ান নজরুল। মাঝেমধ্যে স্মৃতির তাড়নায় বেড়াতে আসেন এফডিসি। রবিবার দুপুরে কিংবদন্তী এই নির্মাতার সঙ্গে এফডিসির পরিচালক সমিতিতে দেখা। পরে তার সঙ্গে আলাপ হয়।

হাঁটতে হাঁটতে আলাপের শুরুতে কিছুটা ‘চাপা কষ্টের কথা’ উল্লেখ করে দেওয়ান নজরুল বলেন, আমাকে তো কেউ আর সেভাবে স্মরণ করেন না। এখনকার মিডিয়ার কেউ সেভাবে চেনে আমাকে না।

চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে আলাপে নিজেকে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ পরিচয় দিয়ে দেওয়ান নজরুল বলেন, ”আমার ছবি ‘দোস্ত দুশমন’ প্রথম অ্যাকশন ধাঁচে নির্মিত হয়। সেই সময়ে দোস্ত দুশমন সেন্সর প্রিন্ট পর্যন্ত ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেছিলাম। মুক্তির পর সারাদেশে ব্যাপকভাবে চলে। তখন সামাজিক পারিবারিক ছবি বেশি হতো। এর মাধ্যমে অ্যাকশন ছবির নতুন ধারা তৈরি হয়। চলচ্চিত্র নতুন ডাইমেনশন আসে।”

তৎকালীন দেওয়ান নজরুলের সিনেমা মানেই ছিল ধুন্দুমার অ্যাকশন, সুপার বাম্পারহিট ব্যবসা। তিনি প্রথম ‘ধর্ম আমার মা’র মাধ্যমে বাংলাদেশে লেডি অ্যাকশন ছবি বানিয়েছিলেন। ১৯৯৫ সালে ‘বাংলার নায়ক’ সিনেমার মাধ্যমে চিত্রনায়ক রিয়াজকে তিনি সিনেমায় আনেন।

সর্বশেষ ২০০৫ সালে ‘দোজখ’ নির্মাণ করেছিলেন দেওয়ান নজরুল। পরিচালনার পাশাপাশি গীতিকার হিসেবেও তিনি সফলতা অর্জন করেছেন।

দেওয়ান নজরুলের লেখা চারশতাধিক গানের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয়তা পায় চুমকি চলেছে একা পথে, চুপি চুপি বলো কেউ জেনে যাবে, পাখির বাসার মতো দুটি চোখ, রুপে আমার আগুন জ্বলে, দুনিয়াটা মস্ত বড়, আজকে না হয় ভালোবাসো আর কোনো নয়, নাচ আমার ময়না তুই পয়সা পাবি রে। তার লেখা একাধিক গান বিবিসি-র জরিপে সর্বকালের সেরা বাংলা সিনেমার গানের তালিকায় স্থান করে নিয়েছিল।

তিনি বলেন, ‘তখন যেসব গান লিখতাম সেগুলো সিনেমার দৃশ্যগুলোকে মাথায় রেখে গানগুলো বানিয়েছিলাম। প্রতিটি গান একেক স্টাইলের।’

আমি আগে সাংঘাতিকভাবে ব্যস্ত থাকতাম। আমার কোনো সিনেমা নরমাল ছবি ছিল না। প্রতিটি সিনেমাতে আমাকে ভীষণ কষ্ট করতে হতো। আমার এখন মনে হয়, ১৭টি ছবি বানিয়েছি প্রতিটি সিনেমায় ছিল আমার কাছে যুদ্ধের মতো। আমি আসলে মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম বলে এই যুদ্ধও জয় করতে পেরেছি। আমি যেমন যুদ্ধ করেছি, আমার সেই সময়ের হিরোগুলো প্রত্যেকেই যোদ্ধা ছিল। কেউ হার মানতো না। এখন আমি বাড়িতে বসে গান, কবিতা লিখি। এভাবেই আমার দিন কেটে যায়। মাঝেমধ্যে স্মৃতি যখন বেশি অনুভব করি এফডিসিতে এসে ঘুরে যাই।’

বর্তমান সময়ের সিনেমা প্রসঙ্গে আলাপ করতে চাইলে দেওয়ান নজরুল বলে ওঠেন, আমি সেন্সর বোর্ডে ছিলাম। এখনকার সিনেমা নিয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।

পরে কথা কথা বলতে শুরু করেন, ”নাটকগুলো সময় বাড়িয়ে সিনেমা বলে দর্শকদের কাছে দেয়া হচ্ছে, এটা দর্শকদের ফাঁকি দেয়া হচ্ছে। নাটক, বিজ্ঞাপন এবং সিনেমার ভাষা টোটালি আলাদা। সিনেমার ক্ষেত্রে গান চিত্রনাট্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখন যারা ছবি বানায় তাদের ধৈর্য্য ধরে ছবি বানাতে হবে, সিনেমা বানানোর আগে ঠিকভাবে স্টাডি করতে হবে। নাটক বানানো খুবই সহজ কাজ, কিন্তু সিনেমা নির্মাণ মুখের কথা নয়।”

প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির কথা জানতে চাইলেই ‘চাপা ক্ষোভ’ প্রকাশ করে দেওয়ান নজরুল বলেন, ‘আমি আজ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় অ্যাওয়ার্ড পাইনি। আমি যে ১৭টি ছবি বানিয়েছি, প্রতি ছবিই অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার যোগ্য। যারা অ্যাওয়ার্ড দেয় তারা নিজেরাও হয়তো জানেনা কারা অ্যাওয়ার্ডের প্রাপ্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার প্রতিটি ছবি ব্যবসা করেছে, এদেশের গণ মানুষ এসব ছবি দেখেছে, তাহলে এগুলো তো গুড ছবি। মানুষ আমাকে ভালোবাসার অ্যাওয়ার্ড দিয়েছে। শত শত গান লিখেছি, আমার গানগুলো আজও মানুষ শোনে। মানুষের জন্য কাজ করেছি, মানুষ আমাকে আমার কাজের মাধ্যমে ভালোবাসা দিয়েছি। কাজেই যারা রাষ্ট্রীয়ভাবে অ্যাওয়ার্ড নির্ধারণ করে তাদের প্রতি আমার কিছু বলার নেই।’

Lading . . .