আব্বাস নিজে না খেয়ে মাস্তানকে খাওয়াতেন, বানিয়েছেন শাহরুখের সিনেমা
প্রকাশ: ৭ আগস্ট, ২০২৫

বলিউডের অন্যতম অ্যাকশন নির্মাতাদের মধ্যে অন্যতম আব্বাস-মাস্তান। তবে এই জায়গায় পৌঁছাতে তাঁদের পার করতে হয়েছে দারিদ্র্য, অবহেলা আর দীর্ঘ সংগ্রামের পথ। বাবা প্রতারণার শিকার হওয়ার পর ছোটবেলায় স্কুল ছেড়ে রোজগারে নেমেছিলেন দুই ভাই, সংসার চালাতে। দিনে মাত্র ৮০ রুপিতে চলত তাঁদের জীবন।
আব্বাস-মাস্তান থ্রিলার নির্মাতা হিসেবেই বেশি পরিচিত। তবে বলিউডের এই আলো–ঝলমলে দুনিয়ায় জায়গা করে নিতে কেটেছে তাঁদের দীর্ঘ সময়। বাবার কাঠের কাজের ব্যবসা ভাইয়ের চক্রান্তে ধ্বংস হয়ে গেলে পুরো পরিবার পড়ে দারিদ্র্যের মুখে। একসময় তাঁরা এক বেলা খাবারের টাকাও জোগাড় করতে পারতেন না। মা-বাবা না খেয়েও সন্তানদের খাইয়ে দিতেন। আব্বাস নিজে না খেয়ে মাস্তানকে খাওয়াতেন।
পরিবারের এই দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ান মায়ের দিকের এক চাচা, যিনি ছিলেন চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে জড়িত। তিনি আব্বাসকে নিজের সঙ্গে নিয়ে যান এডিটিং শেখাতে। মাস্তান তখন মুম্বাইয়ের বিভিন্ন জায়গায় ছোটখাটো কাজ করতেন, মাসে ৩০০ রুপির কম উপার্জন হলেও তাতেই চলত সংসার।
বলিউডে তাঁদের বড় সুযোগ আসে শাহরুখ খান অভিনীত ‘বাজিগর’ ছবির মাধ্যমে। তখনো তাঁরা থাকতেন দক্ষিণ মুম্বাইয়ের মোহাম্মদ আলী রোডসংলগ্ন বড় একটি ঘরে, যৌথ পরিবারে। শাহরুখ যখন তাঁর প্রথম ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড জেতেন, তখন ভোর ৪টায় গিয়ে এই পরিচালকদের আশীর্বাদ নিতে হাজির হন। সেখানে গিয়ে বিস্মিত হন—মাস্তান ব্যালকনিতে ঘুমান, ঘরে জায়গা না থাকায়!
শাহরুখ নিচে তাকিয়ে দেখেন—ব্যালকনির নিচে দুই হাজারের বেশি মানুষ তাঁকে হাত নাড়ছেন। সেই সময়টায় ‘বাজিগর’ হিট হওয়ার পরই আব্বাস-মাস্তান ওই এলকা ছেড়ে লোকান্ডওয়ালার একটি ফ্ল্যাটে ওঠেন।
‘আমাদের দাদা বার্মায় জন্মেছিলেন। ওখানে ফার্নিচারের ব্যবসা করতেন। পরে ভারতে চলে এসে বাবা কোলবায় ফার্নিচার ভাড়ার ব্যবসা শুরু করেন। মোহাম্মদ আলী রোডে এক বড় ঘরে আমরা থাকতাম’, ২০১২ সালে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন নির্মাতাদ্বয়।
পরিচালক হিসেবে তাঁদের যাত্রা শুরু হয়েছিল গুজরাটি সিনেমা দিয়ে। হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ পেতে বহু লড়াই করেছেন। অনেক তারকার দরজায় গেছেন, দিনের পর দিন অপেক্ষা করেছেন, তবু দেখা মেলেনি। কেবল রাজ বাব্বরই তাঁদের সময় দিয়েছিলেন।
আব্বাস ৯ম শ্রেণিতে পড়ার সময় স্কুল ছেড়ে এডিটিং শেখার কাজ শুরু করেন। মাস্তান একটি জামার দোকানে কাজ নেন ১২৫ টাকায়, আর ছোট ভাই হুসেন কাঠের ফার্নিচারের দোকানে কাজ করতেন ৭৫ রুপিতে। তিন ভাই মিলে প্রায় ২৫০ টাকা রোজগার করতেন সংসারের জন্য।
এখনো তাঁরা মাঝেমধ্যে সেই পুরোনো বাড়িতে গিয়ে স্মৃতিচারণা করেন। বলেন, ‘আমাদের মা শিখিয়েছিলেন নিজে না খেয়েও দান করতে। কারণ, একদিন রাস্তায় একজনকে আবর্জনা থেকে খেতে দেখে আমরা খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। সেই থেকেই ভাগ করে খাওয়ার শিক্ষা।’
আব্বাস-মাস্তান তাঁদের ক্যারিয়ারে উপহার দিয়েছেন ‘বাজিগর’, ‘খিলাড়ি’, ‘সোলজার’, ‘টারজান: দ্য ওয়ান্ডার কার’, ‘রেস’, ‘রেস ২’-এর মতো সুপারহিট সব সিনেমা। তাঁদের গল্প রূপকথার মতোই—যেখানে আত্মত্যাগ, লড়াই, আর পারিবারিক বন্ধন একাকার হয়ে তৈরি করেছে বলিউডের ইতিহাসের এক অসাধারণ অধ্যায়।
তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
আরও পড়ুন