শাহনাজ রহমতুল্লাহর গাওয়া ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ, জীবন বাংলাদেশ আমার মরন বাংলাদেশ’ দেশাত্মবোধক গানটি তুমুল জনপ্রিয়। মনিরুজ্জামান মনিরের কথায় এর সুর করেছেন আলাউদ্দিন আলী। দেশের প্রখ্যাত এই সংগীত পরিচালক, সুরকার ও গীতিকার নেই পাঁচ বছর হয়ে গেল।

২০২০ সালের ৯ আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আলাউদ্দিন আলী। রাজৎধানীর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন বরেণ্য এই কিংবদন্তি।

১৯৫২ সালের ২৪ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জের টংগিবাড়ী থানার বাঁশবাড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আলাউদ্দিন আলী। পিতা ওস্তাদ জাবেদ আলী ও ছোট চাচা সাদেক আলীর কাছে প্রথম সঙ্গীতের শিক্ষা নেন তিনি।

আলাউদ্দিন আলী কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৬৮ সালে আলতাফ মাহমুদের সহযোগী হয়ে যন্ত্রশিল্পী হিসেবে। এরপর সুরকার আনোয়ার পারভেজসহ অনেকের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৭২ সালে দেশাত্মবোধক ‘ও আমার বাংলা মা’ গানের মাধ্যমে সংগীত পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।

একই বছর ‘সন্ধিক্ষণ’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে প্রথম সিনেমাতে সংগীত পরিচালনা শুরু করেন তিনি। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে প্রায় ৩০০টির অধিক চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন আলাউদ্দিন আলী। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ৭ বার সংগীত পরিচালক হিসেবে এবং শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে ১ বারসহ মোট ৮ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন এই সঙ্গীতজ্ঞ।

আলাউদ্দিন আলীর জনপ্রিয় ও কালজয়ী কিছু গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য গান হচ্ছে- ‘যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়’, ‘একবার যদি কেউ ভালোবাসতো’, ‘ভালোবাসা যতো বড়ো জীবন তত বড় নয়’, ‘প্রথম বাংলাদেশ, আমার শেষ বাংলাদেশ’, ‘হয় যদি বদনাম হোক আরো’, ‘দুঃখ ভালোবেসে প্রেমের খেলা খেলতে হয়’, ‘সুখে থাকো, ও আমার নন্দিনী হয়ে কারও ঘরনি’, ‘আছেন আমার মোক্তার আছেন আমার ব্যারিস্টার’, ‘বন্ধু তিন দিন তোর বাড়ি গেলাম দেখা পাইলাম না’, ‘সূর্যোদয়ে তুমি সূর্যাস্তেও তুমি’, ‘এমনও তো প্রেম হয়, চোখের জলে কথা কয়’, ‘যেটুকু সময় তুমি থাকো কাছে, মনে হয় এ দেহে প্রাণ আছে’, ‘আমায় গেঁথে দাওনা মাগো, একটা পলাশ ফুলের মালা’, ‘সবাই বলে বয়স বাড়ে, আমি বলি কমে রে’, ‘কেউ কোনো দিন আমারে তো কথা দিল না’, ‘শত জনমের স্বপ্ন তুমি আমার জীবনে এলে’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো’, ‘পারি না ভুলে যেতে, স্মৃতিরা মালা গেঁথে’, ‘হায়রে কপাল মন্দ চোখ থাকিতে অন্ধ’, ‘আমার মনের ভেতর অনেক জ্বালা আগুন হইয়া জ্বলে’, ‘এ জীবন তোমাকে দিলাম, বন্ধু তুমি শুধু’, ‘আমার মত এত সুখী নয়তো কারো জীবন’, ‘হৃদয়ের মাঝে তুমি আছো তবু’, ‘ভেঙেছে পিঞ্জর’,‘তুমি তো আগের মতো রয়েছো মনের মতো’ ইত্যাদি।

আলাউদ্দিন আলী নেই, তবে তিনি আজীবন বেঁচে থাকবেন তার কর্মের মধ্য দিয়ে। যে অসংখ্য কালজয়ী গান তিনি রেখে গেছেন, সেগুলোর জন্যই সঙ্গীতপ্রেমীদের মনে যুগ যুগ বেঁচে থাকবেন।

এনএটি