Advertisement
  • হোম
  • বিনোদন
  • কেন ইরান ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন এই অভিনেত্রী?

কেন ইরান ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন এই অভিনেত্রী?

চ্যানেল আই

প্রকাশ: ৮ আগস্ট, ২০২৫

ইরানি অভিনেত্রী গোলশিফতে ফারাহানি ২০২৫ সালের লোকার্নো চলচ্চিত্র উৎসবে এক উন্মুক্ত আলোচনায় তার জীবন, ক্যারিয়ার এবং অভিজ্ঞতা নিয়ে গভীরভাবে কথা বলেন। সেখানে তিনি ইরান থেকে নির্বাসনে যেতে বাধ্য হওয়া, হিজাব ইস্যু, সঙ্গীতের প্রতি ভালোবাসা, লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিওর সঙ্গে কাজ করা এবং নতুন ছবির অভিজ্ঞতা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন।

ইরান থেকে নির্বাসনে যাওয়া প্রসঙ্গে অভিনেত্রী জানান, প্রথমদিকে ইরানি কর্তৃপক্ষ তার প্রতি কঠোর ছিল না। কিন্তু রিডলি স্কট পরিচালিত ‘বডি অব লাইস’ ছবিতে লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও ও রাসেল ক্রোর সঙ্গে অভিনয়ের সময় হিজাব না পরায় পরিস্থিতি পাল্টে যায়। তখন ইরান ‘অ্যাক্সিস অব ইভিল’-এর অন্তর্ভুক্ত ছিল, এবং পশ্চিমা বিশ্ব তাকে প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করতে পারে— এই ভয় থেকেই তার পাসপোর্ট জব্দ করা হয়।

এক পর্যায়ে বিচারক সিনেমাটি দেখার পর পাসপোর্ট ফিরিয়ে দেন এবং জানিয়ে দেন, যত দ্রুত সম্ভব দেশ ছেড়ে যেতে হবে। তখন তিনি দুটি ব্যাগে নিজের সব স্মৃতি গুছিয়ে ইরান ছাড়েন। তিনি বলেন, “আমি জানতাম, আমি আর ফিরে যেতে পারব না।”

হিজাব প্রসঙ্গে ফারাহানি জানান,ইরানে বড় হওয়ার সময় বিশেষ করে ১৬ বছর বয়সে তিনি মাথার চুল কেটে ফেলেছিলেন, যাতে ছেলেদের সঙ্গে খেলাধুলা করতে পারেন। তিনি বলেন, “আমার ছিল একধরনের দ্বৈত পরিচয়। আমি মেয়েদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় ছিলাম, কারণ আমি তাদের আমার বন্ধুদের ফোন নম্বর দিতাম। … যেসব ছেলেদের সঙ্গে আমি সন্ধ্যায় ছেলে সেজে খেলতাম, তারা সকালবেলা আমাকে দেখে শিস দিতো— তারা বুঝতেই পারত না আমি সেই একই মানুষ।”

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি মৃত্যুর সঙ্গে খেলছিলাম। শুধু একটি সাইকেল চালানোর জন্য আমাকে বাধ্য হয়ে আমার নারীত্ব ত্যাগ করতে হয়েছিল।”

বর্তমানে ফ্রান্সে বসবাস সম্পর্কে জানতে চাইলে ফারাহানি বলেন, “আমি এখন ফ্রান্সকে ভালোবাসি। আমি বলতে পারি, ফ্রান্স একটি কিশোর রাষ্ট্র, ঠিক যেন ১৩ বছরের এক কিশোর-কিশোরী। ফরাসিরা খুবই অধৈর্য, তারা সবকিছু একসঙ্গে চায়, সবসময় অভিযোগ করে, কারো কথা শোনে না… আমি এটা ভালোবাসি।” তাঁর এই মন্তব্যে উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে হাসির রোল পড়ে।

তবে তিনি এটাও বলেন, শুরুতে ফ্রান্সে গিয়ে নিজেকে বিচ্ছিন্ন ও কিছুটা “কারাগারে” বন্দির মতো মনে হতো।

ইরান-কেন্দ্রিক চলচ্চিত্রে কাজের প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ফারাহানি জানান, তিনি সাধারণত এমন ছবিতে অভিনয় করতে অস্বীকৃতি জানাতেন। তবে যখন তিনি এরান রিকলিস পরিচালিত ‘রিডিং ললিতা ইন তেহরান’ ছবির চিত্রনাট্য পড়েন, তখন আবেগে কেঁদে ফেলেন। এর পর তিনি ছবিটি করার সিদ্ধান্ত নেন। ছবিটির বিষয়বস্তু ইরানে নারীদের অধিকার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। এটি একটি আত্মজৈবনিক গল্প, যেখানে এক শিক্ষিকা গোপনে তাঁর ছাত্রীদের নিয়ে নিষিদ্ধ পশ্চিমা সাহিত্য পাঠ করেন।

ইরানি সিনেমা নিয়ে তিনি বলেন, “জাফর পানাহি সবকিছু করতে পারেন। তিনি খুবই শক্তিশালী একজন নির্মাতা।” পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের ইরানি চলচ্চিত্র নির্মাতাদেরও প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “শাসকের চোখরাঙানি সত্ত্বেও আমরা আমাদের শিল্প ও সংস্কৃতির আত্মাকে বাঁচিয়ে রেখেছি। আমরা মরতে রাজি, কিন্তু সংস্কৃতি ছাড়তে না।”

ফারাহানি স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, “নেটফ্লিক্স ইরান সম্পর্কে কিছু বানায় না কেন? আমাদের তো এত গল্প আছে,” তিনি বলেন। “অনেক উপাখ্যান, অনেক কাহিনি।”

তাঁর পরিচালনায় আসার সম্ভাবনা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, আপাতত তাঁর সে ইচ্ছা নেই, তবে ভবিষ্যতে মন পরিবর্তন হলে তা উড়িয়ে দিচ্ছেন না।

বৃহস্পতিবারের আলোচনায় তিনি আরও বলেন, তিনি মূলত সংগীতশিল্পী হতে চেয়েছিলেন, কারণ তাঁর পরিবার থিয়েটারে যুক্ত ছিল, আর তিনি অভিনেতা-অভিনেত্রীদের পছন্দ করতেন না। তাই সংগীতে হাত দেন। হাসতে হাসতে বলেন, “আমি ২০ মিনিটের বেশি এক জায়গায় বসে থাকতে পারতাম না, কারণ আমি খুব হাইপারঅ্যাকটিভ ছিলাম।” তিনি জানান, পিয়ানো ও গিটার বাজানোসহ সংগীত সবসময় তাঁর “ছায়া” হয়ে থেকেছে।

৭৮তম লোকার্নো চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন হয় বুধবার সন্ধ্যায়। সেই উপলক্ষে শহরের পিয়াসা গ্রান্দে-তে দর্শকদের উচ্ছ্বসিত করতালির মাঝে গোলশিফতে ফারাহানিকে ‘এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ সম্মাননা প্রদান করা হয়। চলচ্চিত্র উৎসব চলবে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত। – হলিউড রিপোর্টার

Lading . . .