Advertisement

বদলে যাওয়া মৌসুমী

প্রথম আলো

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

মৌসুমী হামিদছবি : মৌসুমী হামিদের সৌজন্যে
মৌসুমী হামিদছবি : মৌসুমী হামিদের সৌজন্যে
গত ২৫ আগস্ট থেকে কক্সবাজারে ছিলেন মৌসুমী হামিদ , গতকাল রাতে ঢাকায় ফিরেছেন। ‘এমন কক্সবাজার আগে দেখেছেন কি?’ শিরোনামে ৩২ পর্বের একটি ভ্লগিং শো তৈরি হচ্ছে, যেটির ৮ পর্বের উপস্থাপনা করছেন তিনি। শুরু করবেন নতুন সিনেমার শুটিং। মৌসুমী হামিদের খোঁজখবর নিয়েছেন মনজুর কাদের

টানা কয়েক দিন নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কক্সবাজারের স্থিরচিত্র পোস্ট করছেন মৌসুমী হামিদ। গতকাল দুপুরে যখন কথা হচ্ছিল, তখন মৌসুমীকে বেশ ফুরফুরে মেজাজে পাওয়া গেল। বললেন, ‘আমি পুরোপুরি পিকনিক মুডে আছি। আউটডোর শুটিং মানেই আমার কাছে পিকনিক। এবার তো করছি ট্রাভেল ভ্লগিং, যেটা আমার খুবই প্রিয়।’

আগে থেকেই মৌসুমীর ভ্রমণবিষয়ক ভ্লগিং ভালো লাগত। ফেসবুক স্ক্রল করতে করতে বছর দুয়েক আগে নাদিরের ট্রাভেল ভ্লগে চোখ আটকে যায়। বললেন, ‘“নাদির অন দ্য গো” আমার কাছে সাদামাটা কিন্তু খুবই তথ্যবহুল মনে হয়। তাই আস্তে আস্তে ওর ভ্লগ ভালো লাগতে শুরু করে। আমার তো মনে হয়, কোথাও যাওয়ার আগে নাদিরের ট্রাভেল ভ্লগ দেখলে প্রপার গাইডলাইন পাওয়া যায়। তার কনটেন্টে সচরাচর অপরিচিত জায়গা বেশি এক্সপ্লোর করে। প্রচলিত জায়গায় গেলেও সেসব ভিডিও দেখে মনে হয়, আগে এভাবে দেখা হয়নি, খুবই সুন্দর। অন্য সব ভ্লগার যেখানে যায় না, নাদির সেসব জায়গা তুলে আনে।’

‘এমন কক্সবাজার আগে দেখেছেন কি?’ মৌসুমী হামিদের প্রথম ট্রাভেল ভ্লগ। মৌসুমী বললেন, ‘ট্রাভেল ভ্লগ করাটা আমার স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্ন পূরণের একটা সুযোগ এসেছে, তাই করে ফেললাম। এবারেরটা তো ফরমায়েশি কাজ। এবার আমরা শুধু কক্সবাজার ও আশপাশ নিয়ে থাকছি। কিন্তু পরে যখন করব, তখন এমন সব জায়গা এক্সপ্লোর করব, যে জায়গা আগে সেভাবে কেউ দেখায়নি। এমন সব জায়গা তুলে আনতে চাই, যেখানে পর্যটকেরা যায় না কিন্তু অদ্ভুত সুন্দর জায়গা। ট্রেকিং আর হাইকিং খুব পছন্দ। এর মধ্যে এসব করেছি, ওই অভিজ্ঞতা সামনে ভ্লগে আনব।’ মৌসুমী জানালেন, ‘এমন কক্সবাজার আগে দেখেছেন কি?’ নির্মাণে আছেন তিনজন—রাসেল সৈয়দ, আহসান স্মরণ ও সাব্বির মাহমুদ।

আগ্রহ পডকাস্টে

২০১০ সালে লাক্স–চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতা দিয়ে বিনোদন অঙ্গনে মৌসুমী হামিদের পথচলা শুরু। এরপর গত ১৫ বছরে নাটক, টেলিছবি ও সিনেমায় কাজ করেছেন। করেছেন টেলিভিশন অনুষ্ঠান উপস্থাপনা। ইদানীং পডকাস্ট নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। দেশের বাইরের কয়েকটি পডকাস্ট শো তাঁর এ আগ্রহ বাড়িয়েছে। মৌসুমী হামিদ বলেন, ‘এখন যত ধরনের ইন্টারভিউ দেখি, টেলিভিশন কিংবা অন্য যেকোনো মাধ্যমই হোক, আমার কাছে পডকাস্ট খুবই তথ্যবহুল মনে হয়। এ ভাবনাও চমৎকার। সত্যি কথা বলতে, আমাদের এখানে যেসব পডকাস্ট হয়, ওসবে যে অতিথিকে ডাকা হয়, তার ভিতর-বাহিরটা জানা সম্ভব হয় না দেখি। অথচ বাইরের পডকাস্ট দেখলে ভালো লাগে। মনে হয়, এমন কিছু জানলাম, যা আগে জানা হয়নি। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আমাদের এখানে সেভাবে কেউ কথাও বলে না। ব্যক্তিগতভাবে বললেও খোলামেলাভাবে বলতে চায় না। অন্য সব দেশের কথা বাদ দিলেও পাশের কলকাতায়ও কিন্তু চমৎকার সব পডকাস্ট হয়। ওদেরকে দেখা যায় কপিল শর্মার শোতেও আমন্ত্রণ জানায়। আমিও কিছু একটা বানাতে চাই, যেটা অন্য রকম ভালো কিছু হবে।’

পরিচালনার ভাবনা

১৫ বছরের অভিনয়জীবনে মাঝের সময়ে মৌসুমী হামিদ টানা তিন বছর সুমন আনোয়ারের পরিচালনায় কাজ করেছেন। এ সময়ে বেশ কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে নিজেকে অন্যভাবে আবিষ্কার করেন মৌসুমী হামিদ। ক্যামেরার পেছনের কাজ নিয়ে তখন তাঁর আগ্রহ জন্মায়। সিদ্ধান্ত নেন, পরিচালনা করবেন। এ কথা আগেও একবার জানিয়েছিলেন। পরিচালনা নিয়ে এখনকার ভাবনা কী, জানতে চাইলে মৌসুমী হামিদ বললেন, ‘এখনো ফিকশনে সাহসটা পাচ্ছি না। আপাতত নন-ফিকশন বানিয়ে হাত পাকাতে চাই। এর মধ্যে সাহস ও আত্মবিশ্বাস বাড়বে।’

পরিচালনায় আগ্রহ তৈরি হওয়ার প্রসঙ্গে মৌসুমী হামিদ বললেন, ‘সুমন আনোয়ারের সঙ্গে প্রথম কাজ করি “মিউজিক ভিডিও” নাটকে। তাঁর সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করার কারণে নির্মাণে সাহস ও আত্মবিশ্বাস বাড়ে, ভালো লাগা ও প্রেম তৈরি হয়েছে। পরিচালনা সুপ্ত বাসনা ও ইচ্ছা যা–ই বলি, তখনই তৈরি হয়েছে। অনেকের সঙ্গে কাজ করলেও আমি সুমন আনোয়ারের কাছ থেকে শিখেছি, একটা শুটিং সেট কীভাবে পরিচালনা করতে হয়, শিল্পীর সঙ্গে পরিচালকের আচরণ কেমন হতে হয়, পরিচালনার মধ্যে অনেক ধরনের ক্যারিশমা থাকে অথচ খুব সাধারণভাবে কী অসাধারণ ও নান্দনিকভাবে সবকিছু ফুটিয়ে তুলতেন। এখন পর্যন্ত যাদের সঙ্গে কাজ করেছি, তাদের মধ্য থেকে সুমন আনোয়ারকে আলাদা লেগেছে, আগামী দিনে অন্য কারও সঙ্গে করলে তখন হয়তো নতুন অভিজ্ঞতা হবে।’

নতুন সিনেমা

নাটকের পাশাপাশি মৌসুমী হামিদ সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। ১৫ বছরে তাঁর অভিনীত সিনেমার সংখ্যা ডজনখানেক। উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে আছে ‘জালালের গল্প’, ‘ব্ল্যাকমেইল’, ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী ২’, ‘১৯৭১: সেই সব দিন’ এবং সর্বশেষ ‘নয়া মানুষ’। নতুন আরেকটি ছবির কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন। বিস্তারিত কিছুই জানাতে চান না, তবে এটুকু বললেন, নভেম্বরে শুটিং শুরু হবে। মৌসুমী বললেন, ‘কথাবার্তা চূড়ান্ত। গল্প ভালো লেগেছে। কিন্তু ছবিটি সম্পর্কে আপাতত কিছুই বলতে পারব না। কারণ, প্রযোজক–পরিচালকের নিষেধ আছে।’

নতুন পরিচয়

অভিনয় ছাড়াও নতুন পরিচয়ে এসেছেন মৌসুমী হামিদ। ঢাকার নিকেতনে একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান চালু করেছেন। এক বন্ধু ও সমমনা আরও তিনজনসহ পাঁচজন মিলে প্রতিষ্ঠানটি চালু করেছেন। বললেন, ‘অভিনয়ের ব্যস্ততা তো এখন কম। এক বছরের বেশি সময় ধরে পুরো ইন্ডাস্ট্রির কাজের সংখ্যাও কমে গেছে। এর মধ্যে ভাবলাম ভিন্ন কিছু করার কথা। এরপর আমারই একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু প্রস্তাব দেয় ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার। ওর ভাবনা ভালো লাগে। এরপর সবাই মিলে প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান চালু করেছি। আমার দারুণ অভিজ্ঞতা হচ্ছে। ভীষণ উপভোগও করছি।’

Lading . . .