Advertisement

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংককে একীভূত না করার দাবি

ভোরের কাগজ

প্রকাশ: ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন এসআইবিএলের সাবেক কয়েকজন পরিচালক। ছবি: ভোরের কাগজ
সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন এসআইবিএলের সাবেক কয়েকজন পরিচালক। ছবি: ভোরের কাগজ

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংককে (এসআইবিএল) কিছু ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত না করে প্রকৃত উদ্যোক্তা ও শেয়ারহোল্ডারদের কাছে ব্যাংকটি পরিচালনার দায়িত্ব দেয়ার দাবি জানিয়েছেন গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীরা। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা।

সেখানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এসআইবিএলের সাবেক চেয়ারম্যান ডা. মেজর (অব.) এম রেজাউল হক। তিনি বলেন, ২০১৭ সালে শেখ হাসিনার নির্দেশে সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় অস্ত্রের মুখে এস আলম গ্রুপ ব্যাংকটির উদ্যোক্তা পরিচালক এবং অন্যান্য শেয়ারহোল্ডারদের সমন্বয়ে গঠিত পরিচালনা পর্ষদ নিয়ন্ত্রণে নেয়। এর আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের সব শরীয়াহ ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবসময় দ্বিতীয় ব্যাংক হিসেবে পরিগণিত ছিল সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক।

ডা. মেজর (অব.) এম রেজাউল হক বলেন, ২০২৪ সালের গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর এস আলম নিয়ন্ত্রিত এসআইবিএলের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে কোনোরকম আলোচনা ছাড়াই ৪ জন স্বতন্ত্র পরিচালক এবং ১ জন উদ্যোক্তা পরিচালকের সমন্বয়ে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটিকে আর্থিক দূরাবস্থা থেকে টেনে তোলার বা ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য যা ছিল অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত। এছাড়া চেয়ারম্যান হিসেবে উদ্যোক্তা পরিচালককে পাশ কাটিয়ে একজন অনভিজ্ঞ স্বতন্ত্র পরিচালককে নির্বাচিত করা হয়।

তিনি বলেন, অনেক উদ্যোক্তা ও শেয়ারহোল্ডারের পরিচালক হওয়ার সব যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও এবং বর্তমান পরিচালনা পর্ষদে তাদের যুক্ত করার জন্য বারবার অনুরোধ করা হলেও অনভিজ্ঞ পরিচালনা পর্ষদ ও বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি আমলে নেয়নি। ফলে প্রকৃত উদ্যোক্তাদের ওপর ব্যাংকের পরিচালনার কার্যভার অর্পিত না হওয়ায় গ্রাহকরা অনাস্থার কারণে ব্যাংক থেকে তাদের সব ডিপোজিট তুলে নেয়। ব্যাংকের দূরবস্থাকে যা আরও ঘনীভূত করেছে।

এসআইবিএলের সাবেক চেয়ারম্যান বলেন, এসআইবিএলে যাদের পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক, তারা কেউই কোনো ব্যাংক পরিচালনার সঙ্গে আগে যুক্ত ছিলেন না কিংবা ব্যাংকের পরিচালনার বিষয়ে পূর্ব অভিজ্ঞ নন। এছাড়া বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক, একজন উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কেউই ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনায় পূর্ব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নন।

তিনি বলেন, এসআইবিএলকে একীভূতকরণ না করে পরিচালনার দায়িত্ব যদি প্রকৃত উদ্যোক্তা এবং এর শেয়ারহোল্ডারদের হাতে ন্যস্ত করা হয়, তাহলে খুব দ্রুত সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্বিক সহযোগিতায় গ্রাহকের আস্থা পুনরায় ফিরিয়ে আনতে পারবে। ব্যাংকের আর্থিক দূরাবস্থা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াবে এবং বাণিজ্যিকভাবে পুনরায় একটি লাভজনক ও সফল ব্যাংকে রূপান্তরিত হবে।

ডা. মেজর (অব.) এম রেজাউল হক আরও বলেন, মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে এই ব্যাংক দখল করা হয়েছিল। এখন আবার সরকারি খাতে নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমাদের অপরাধ কী? কোনোভাবেই আমাদের ব্যাংক নেয়া যাবে না। আমরা আদালতে রিট করেছি, সেই রিটের নিস্পত্তি করে আসতে হবে। অন্যদের হাতে দেয়া যাবে না।

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ডা. মো. জাহাঙ্গীর বলেন, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পরিচালনায় যত টাকা লাগে বাংলাদেশ ব্যাংককে দিতে হবে। আমরা ব্যবসা করে পরে ফেরত দেব।

ব্যাংকটির উদ্যোক্তা চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ীরা ব্যাংক চালাতে না পারলে, অন্যরা পারবে কীভাবে? আমরাই এই ব্যাংক চালাব। এটা আমাদের সম্পদ। সরকার কি একজনের বাড়ি, ঘর নিয়ে নিতে পারে?

এসআইবিএলের সাবেক পরিচালক আসাদুজ্জামান বলেন, অনেক কষ্ট করে আমরা এই ব্যাংক করেছি। প্রবাস থেকে দেশে অর্থ এনে এটা প্রতিষ্ঠা করেছি। এখন সরকারিকরণ করা হবে কেন?

এসময় শেয়ারহোল্ডার জাবেদ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, শরীয়াহ ভিত্তিক পরিচালিত দুর্দশাগ্রস্ত স্যোশ্যাল ইসলামী, এক্সিম, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, ইউনিয়ন ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক একীভূত করে একটি বড় ইসলামী ব্যাংক করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একীভূতকরণ উদ্যোগে এরই মধ্যে সায় দিয়েছে সরকার।

এজন্য প্রাথমিকভাবে দরকার হবে ৩৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা। যার মধ্যে সরকার দিচ্ছে ২০ হাজার ২০০ কোটি টাকা। আর ৭ হাজার ৫০০ টাকা নেয়া হবে আমানত বীমা ট্রাস্ট তহবিল থেকে। বাকি ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের শেয়ার দেয়া হবে।

Lading . . .