‘সুপারম্যান’-এর খলনায়ক টেরেন্স স্ট্যাম্প আর নেই
প্রকাশ: ১৮ আগস্ট, ২০২৫

ব্রিটিশ অভিনেতা টেরেন্স স্ট্যাম্প আর নেই। রোববার সকালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। ‘সুপারম্যান’ সিরিজে কিংবদন্তি খলনায়ক জেনারেল জড চরিত্রে অভিনয় করে যিনি বিশ্বজুড়ে দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি।
স্ট্যাম্পের অভিনয়জীবন দীর্ঘ ছয় দশকজুড়ে বিস্তৃত। অস্কার-মনোনীত এই অভিনেতা অভিনয় করেছেন ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চারস অব প্রিসিলা’, ‘কুইন অব দ্য ডেজার্ট’, ‘ফার ফ্রম দ্য ম্যাডিং ক্রাউড’, ‘ভ্যালকিরি’সহ অসংখ্য ছবিতে।
স্ট্যাম্পের পরিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘অভিনেতা ও লেখক হিসেবে টেরেন্স স্ট্যাম্প যে অসাধারণ কীর্তি রেখে গেছেন, তা বহু বছর ধরে মানুষকে ছুঁয়ে যাবে।’
বাফটা জানিয়েছে, স্ট্যাম্পের মৃত্যুতে তারা ‘গভীরভাবে মর্মাহত’ ‘সুপারম্যান’-এর সহ-অভিনেত্রী সারাহ ডগলাস তাঁকে স্মরণ করে লিখেছেন, ‘অসাধারণ রূপবান ও প্রতিভাবান মানুষ ছিলেন টেরেন্স। তাঁর কাছ থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। আমার কর্মজীবনের শুরুতেই মাসের পর মাস তাঁর সঙ্গ পেয়েছিলাম, এ যেন এক বিরল সৌভাগ্য। আজ গভীর দুঃখে ভরে গেল মন।’
লন্ডনের এক সাধারণ ছেলে থেকে তারকা হয়ে ওঠা
১৯৩৮ সালের ২২ জুলাই লন্ডনের ইস্টএন্ডের স্টেপনিতে জন্ম টেরেন্স স্ট্যাম্পের। সাধারণ কর্মজীবী পরিবারের সন্তান তিনি। গ্রামার স্কুলে পড়াশোনা শেষে প্রথমে বিজ্ঞাপন সংস্থায় কাজ করেন। পরে ড্রামা স্কুলে বৃত্তি পেয়ে যোগ দেন অভিনয়ের জগতে।
১৯৬২ সালে ‘বিলি বাড’ চলচ্চিত্রে নামভূমিকায় অভিনয় করে রাতারাতি তারকাখ্যাতি পান। ছবিটি তাঁকে এনে দেয় সেরা পার্শ্ব–অভিনেতার অস্কার মনোনয়ন ও সেরা নবাগত শিল্পীর গোল্ডেন গ্লোব।
পরে একে একে তিনি পর্দায় খলনায়কের চরিত্রে খ্যাতি অর্জন করেন, ‘সুপারম্যান’ ও ‘সুপারম্যান–২’-তে জেনারেল জড, ‘দ্য কালেক্টর’-এ অপহরণকারী ফ্রেডি ক্লেগ, ‘ফার ফ্রম দ্য ম্যাডিং ক্রাউড’-এ সার্জেন্ট ট্রয় চরিত্রে।
প্রেম, তারুণ্য ও ‘ওয়াটারলু সানসেট’
ষাটের দশকে শুধু অভিনয় নয়, সুদর্শন চেহারা, ফ্যাশন সেন্স ও তারকাখ্যাত প্রেমের গল্প নিয়েও তিনি ছিলেন আলোচনায়। অভিনেত্রী জুলি ক্রিস্টির সঙ্গে তাঁর প্রেমের কথা ‘ওয়াটারলু সানসেট’ গানেও অমর হয়ে আছে—‘টেরি মিটস জুলি’ লাইনটি নাকি তাঁদেরই উদ্দেশে লেখা। সুপারমডেল জিন শ্রিম্পটনের সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক ছিল শিরোনামে।
শন কনারির পর জেমস বন্ড চরিত্রে তাঁকে বিবেচনা করা হয়েছিল। স্ট্যাম্প নিজেই বলেছিলেন, ‘আমি আর দ্বিতীয়বার ফোন পাইনি।’
জীবনের মোড় ঘোরা
ষাটের দশক শেষে জনপ্রিয়তা কমে যায়, তখন তিনি ইতালিতে পিয়ার পাওলো পাসোলিনি, ফেদেরিকো ফেলিনির মতো পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেন। আবার একসময় অভিনয় থেকে দূরে সরে গিয়ে ভারতে চলে আসেন, যোগব্যায়াম শেখেন, আধ্যাত্মিক আশ্রমে সময় কাটান।
তবে ১৯৭৬ সালে ‘সুপারম্যান’-এর জেনারেল জড চরিত্রই তাঁকে ফিরিয়ে আনে মূলধারার সিনেমায়। এরপর ‘স্টার ওয়ার্স: দ্য ফ্যান্টম মেনেস’, ‘ওয়াল স্ট্রিট’, ‘দ্য অ্যাডজাস্টমেন্ট ব্যুরো’, ‘লাস্ট নাইট ইন সোহো’সহ অসংখ্য ছবিতে তাঁকে দেখা গেছে তাঁকে।
‘প্রিসিলা’য় অমর হয়ে থাকা
১৯৯৪ সালে অস্ট্রেলিয়ান চলচ্চিত্র ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চারস অব প্রিসিলা’, ‘কুইন অব দ্য ডেজার্ট’-এ এক ট্রান্সজেন্ডার নারী চরিত্রে তাঁর অভিনয় ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায়। ছবিটি তাঁকে এনে দেয় বাফটা ও গোল্ডেন গ্লোব মনোনয়ন।
গত বছর ছবির পরিচালক স্টিফেন এলিয়ট জানিয়েছিলেন, ৮৫ বছর বয়সেও তিনি ছিলেন ‘সবচেয়ে ফিট মানুষ’। স্ট্যাম্প নাকি বলেছিলেন, ‘গল্পটা এখনো শেষ হয়নি।’
তথ্যসূত্র: বিবিসি
আরও পড়ুন