Advertisement

অনৈক্যের কারণে জুলাই গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ হচ্ছে

কালবেলা

প্রকাশ: ১০ আগস্ট, ২০২৫

আইআইপিডির গোলটেবিল বৈঠকে অতিথিরা। ছবি : কালবেলা
আইআইপিডির গোলটেবিল বৈঠকে অতিথিরা। ছবি : কালবেলা

এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেছেন, রাজনৈতিক দল ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্টেকহোল্ডারদের অনৈক্যের কারণে দেড় হাজার শহীদের বিনিময়ে অর্জিত জুলাই গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ হচ্ছে। এই অনৈক্যের জন্য সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টার ভূমিকাও দায়ী।

রোববার (১০ আগস্ট) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের একটি মিলনায়তনে ‘অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের এক বছর : মন্ত্রণালয়ভিত্তিক পর্যালোচনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে ইনস্টিটিউট ফর ইনোভেশন ইন পলিসি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইআইপিডি)।

বক্তারা বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনের দুঃশাসনে থাকা একটি রাষ্ট্রকে নতুন করে পরিগঠনের জন্য যে কমিটমেন্ট দরকার সেই কমিটমেন্ট রাজনৈতিক দলগুলো দিতে পারেনি। শুধু রাজনৈতিক দল নয়, কেউ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি সাপোর্টিভ ছিল না। প্রতিবেশী দেশের ষড়যন্ত্র, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের চতুর্মুখী অপতৎপরতা এবং অধিকার আদায়ের নামে দুশটির বেশি আন্দোলন চলমান থাকার পরও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পেরেছে সেটা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। বর্তমান বাস্তবতায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও ঐতিহাসিক নির্বাচন প্রধান প্রত্যাশা বলে দাবি করেন বক্তারা।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপারনিউমারি অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, নির্বাচন কমিশনের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. মোহাম্মদ জাকারিয়া, সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার সালাহউদ্দিন দোলন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি ড. গোলাম রাব্বানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মাহবুবুর রহমান, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. ওমর ফারুক, নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. তৌফিকুল ইসলাম মিথিল, দৈনিক আমার দেশের চিফ রিপোর্টার বাছির জামাল, নাগরিক বিকাশ কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদী, জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব আলাউদ্দিন মোহাম্মদ, বিআইজিএমের সহযোগী অধ্যাপক ড. যোবায়ের আহমদ প্রমুখ।

গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আইআইপিডির নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এসএম আলী রেজা। আইআইপিডির নির্বাহী পরিচালক মো. বুরহান উদ্দীনের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে পর্যালোচনামূলক প্রবন্ধ পাঠ করেন যুক্তরাষ্ট্রের গ্র্যান্ডভ্যালি স্টেট ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ড. দিদার হোসেন।

অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির বিষয়ে খুব একটা বলতে চাই না কারণ ড. ইউনূস স্বাভাবিক অবস্থায় দায়িত্ব নেননি। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে সরকারকে অধিক সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মূল মনোযোগ নির্বাচন। ফলে বর্তমানে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক আলোচনা খুব একটা ফলপ্রসূ হবে না। সরকারকে অবশ্যই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল থাকতে হবে।’ তিনি সরকারের কিছু উপদেষ্টার কারণে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঐক্য বিনষ্ট হয়েছে বলে দাবি করেন।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জোবায়ের বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কারের একটা বড় অংশ নিয়ে সব রাজনৈতিক পক্ষের মধ্যে ঐকমত্য হয়নি, যা রেড সিগন্যাল। কারণ এতে সংস্কার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তিনি জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদের সুস্পষ্ট আইনি ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি দাবি করেন।

অধ্যাপক ড. গোলাম রাব্বানী বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সব রাজনৈতিক দলকে একটি ছাতার নিচে নিয়ে আসতে পেরেছে এটা সরকারের সাফল্য। যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপ কমাতে পেরেছে এটা আরেকটি সাফল্য। সরকারকে বিচার কার্যক্রম ও সংস্কার কার্যক্রমগুলো চলমান রাখার বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে- এটাই প্রত্যাশা করি।

ড. তৌফিকুল ইসলাম মিথিল বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিতর্কিত কারিকুলাম বাতিল করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু শিক্ষা কমিশন না হওয়ায় শিক্ষায় কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসেনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী মাহবুবুর রহমান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত সংস্কার কমিশনের মাধ্যমে এমন একটা সিস্টেম তৈরি করা যাতে কর্তৃত্ববাদ আর কখনো ফিরে না আসে। এজন্য রাজনৈতিক ও স্ট্র্যাটেজিকভাবে সংস্কারগুলো করতে হবে।

বাছির জামাল বলেন, গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত না হলে ভালো মিডিয়া প্রতিষ্ঠা সম্ভব না। আর জনভিত্তিক মিডিয়া না থাকলে সরকার একনায়ক হয়ে উঠতে পারে। এজন্য গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করা উচিত।

শরীফ ওসমান হাদি বলেন, আওয়ামী লীগের ১৬ বছরে জান এবং জবানের কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। গত এক বছরে এই দেশের মানুষ অন্তত জান ও জবানের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা পেয়েছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব আলাউদ্দিন মোহাম্মদ বলেন, ড. ইউনূস সরকারের প্রথম ছয় মাস সময় গেছে প্রতিবিপ্লব ঠেকাতে। এখন বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমরা চাই একটা ঐতিহাসিক নির্বাচন। যার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা পুনরায় শুরু হবে।

Lading . . .