ষড়যন্ত্র, মিডিয়া ট্রায়াল ও বিএনপি: বর্তমান প্রেক্ষাপটের বাস্তবতা
প্রকাশ: ৯ আগস্ট, ২০২৫

বাংলাদেশের রাজনীতিতে বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত ও বিতর্কিত বিষয়গুলোর একটি হলো বিএনপিকে ঘিরে তৈরি হওয়া নানা ধরণের ষড়যন্ত্র এবং মিডিয়া ট্রায়াল। গণতন্ত্রের পথে একটি বড় দল হিসেবে বিএনপি প্রায় চার দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে এসেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা অতিক্রম করে এক ধরনের পরিকল্পিত অপপ্রচার এবং জনমত প্রভাবিত করার চেষ্টার শিকার হচ্ছে দলটি।
মিডিয়া ট্রায়াল – বিচারপূর্ব অপমানের হাতিয়ার :
মিডিয়া ট্রায়াল বলতে বোঝায়—যেখানে আদালতের রায় ঘোষণার আগে গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো ব্যক্তি বা দলের বিরুদ্ধে একতরফাভাবে নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হয়, যা মানুষের মনে পক্ষপাতদুষ্ট ধারণা তৈরি করে।
বিএনপির ক্ষেত্রে এটি স্পষ্টভাবে দেখা যায়। অনেক সময় অভিযোগ প্রমাণের আগেই গণমাধ্যমে এমনভাবে সংবাদ পরিবেশন করা হয় যেন রায় ইতোমধ্যেই হয়ে গেছে। এই প্রবণতা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের জন্য যেমন সুফল বয়ে আনে, তেমনি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও আইনের শাসনের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
ষড়যন্ত্রের বহুমাত্রিক রূপ :
বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুধু মিডিয়া পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নয়; এর বিস্তার প্রশাসনিক, আইনগত ও রাজনৈতিক অঙ্গনেও। কখনো অযৌক্তিক মামলার পাহাড়, কখনো সভা-সমাবেশে বাধা, আবার কখনো নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার—সব মিলিয়ে একটি পরিকল্পিত কৌশল যেন দলটিকে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করে ফেলতে চায়।
বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে এই ধরণের পদক্ষেপ গণতান্ত্রিক প্রতিযোগিতার নিয়মকে ভেঙে দিচ্ছে এবং বহুমতকে দুর্বল করছে।
জনগণের সচেতনতা ও বিকল্প তথ্যপ্রবাহ :
যদিও মূলধারার কিছু গণমাধ্যমে নেতিবাচক প্রচারণা প্রবল, তথাপি সোশ্যাল মিডিয়া ও বিকল্প সংবাদমাধ্যমগুলোতে ভিন্নচিত্র পাওয়া যায়। সচেতন নাগরিকরা এখন বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য যাচাই করে নিজেদের মত গঠন করছেন। ফলে মিডিয়া ট্রায়ালের প্রভাব কিছুটা হলেও প্রতিহত হচ্ছে।
গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ :
যে দেশে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা যুক্তি ও নীতিনির্ভর না হয়ে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে, সেখানে গণতন্ত্র টিকতে পারে না। বিএনপির বিরুদ্ধে চলমান এই পরিস্থিতি কেবল একটি দলকে নয়—পুরো রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
গণতন্ত্র শক্তিশালী করতে হলে আইনের শাসন, সমান রাজনৈতিক সুযোগ এবং স্বাধীন গণমাধ্যম অপরিহার্য। একপক্ষীয় প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রের পথ থেকে সরে এসে সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনা আজ সময়ের দাবি।
মো: মামুন রানা
সাবেক ছাত্রদল নেতা, অনলাইন একটিভিস্ট ও এডুকেশন কনসালট্যান্ট।
আরও পড়ুন