Advertisement

প্রার্থী চূড়ান্ত করতে তোড়জোড় বিএনপিতে

কালবেলা

প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

প্রার্থী চূড়ান্ত করতে তোড়জোড় বিএনপিতে
প্রার্থী চূড়ান্ত করতে তোড়জোড় বিএনপিতে

আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনী কার্যক্রমে চূড়ান্তভাবে মনোনিবেশ করেছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে দল ও জোটের প্রার্থী চূড়ান্ত করতে দলটিতে ব্যাপক তোড়জোড় শুরু হয়েছে। দ্রুততম সময়ে এ কাজ সম্পন্ন করতে নানামুখী তৎপরতা চলছে বিএনপিতে। একদিকে যেমন আসনভিত্তিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে কে সেরা, সেটা বাছাইয়ের প্রক্রিয়া চলছে; অন্যদিকে ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের মিত্রদের জন্যও আসন বণ্টনের প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে বিএনপি। সম্প্রতি মিত্রদের কাছে প্রার্থীদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। দ্রুততম সময়ে তারা এ তালিকা জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এরই মধ্যে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে মাঠে থাকায় তপশিলের আগেই এবার চূড়ান্ত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করার চিন্তাভাবনা রয়েছে বিএনপির। ব্যাপক যাচাই-বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে প্রতি আসনে এবার একক প্রার্থী দেবে দলটি।

জানা গেছে, দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে বেশ আগে থেকেই কাজ করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এর অংশ হিসেবে তার তত্ত্বাবধানে এরই মধ্যে পাঁচটি জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। দলকেও এই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করেছেন তিনি। বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের মাধ্যমেও সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন। এ ছাড়া খোঁজ নিতে পারেন সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের মাধ্যমেও। তবে এ বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। পাশাপাশি এখন আসনভিত্তিক প্রার্থীদেরও মতামত নিচ্ছেন তারেক রহমান। সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতার মাধ্যমে এই কার্যক্রম শুরু করেছেন তিনি। সবকিছু মিলিয়ে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।

জানা গেছে, আসনভিত্তিক প্রার্থীদের মতামত নেওয়ার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রথম দিনে গত সোমবার বরিশাল বিভাগের চারটি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিভাগের দায়িত্বে থাকা স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তারেক রহমানের নির্দেশনার কথাও জানান। তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আসনভিত্তিক সম্ভাব্য সব প্রার্থীকে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরাও ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তারা বলেছেন, সামনে যাকেই একক প্রার্থী করা হোক না কেন, ঐক্যবদ্ধভাবেই তাকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচনী প্রচার চালাবেন। সবার লক্ষ্য থাকবে ধানের শীষের প্রার্থীকেই জয়ী করা।

গণঅভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নির্বাচনের মাঠে বিএনপির প্রধান প্রতিপক্ষ এখন জামায়াতে ইসলামী বলে অভিমত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। এ অবস্থায় জামায়াতসহ কয়েকটি দল বেশ আগেই নিজ প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে মাঠে রয়েছে, প্রচারও চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপির সম্ভাব্য একাধিক প্রার্থী প্রচারে থাকলেও কারও মনোনয়নই এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ অবস্থায় নির্বাচনী প্রচারে বিএনপি পিছিয়ে পড়ছে বলে মনে করেন দলটির সাংগঠনিক সম্পাদকরা। তাদের আরও অভিমত, তপশিলের পর দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হলে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য প্রার্থীদের মান-অভিমান ভাঙাতেই অনেকটা সময় চলে যায়। সেদিক থেকেও নির্বাচনী প্রচারে পিছিয়ে পড়েন বিএনপির প্রার্থীরা। তাই সাংগঠনিক সম্পাদকরা তপশিলের আগেই দলীয় চূড়ান্ত প্রার্থীদের নাম ঘোষণার পরামর্শ দেন হাইকমান্ডকে। বিএনপির একাধিক সাংগঠনিক সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলে এমনটা জানা গেছে।

এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বার্তা নিয়ে দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা দেশব্যাপী জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে ওয়ার্ক করছেন। তারা মূলত দুটি কাজ করছেন। প্রথমত, সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় খোঁজখবর নিচ্ছেন। দ্বিতীয়ত, তাদের এই বার্তা দিচ্ছেন যে, দল যাকেই মনোনয়ন দেবে, তার পক্ষেই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। অন্যথায় দল তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

জানা গেছে, প্রতিটি সংসদীয় আসনে বিএনপির তিন থেকে পাঁচজন সম্ভাব্য প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। তারা নিজ নিজ এলাকায় সাংগঠনিক কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বিস্তার করেছেন, গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। দল ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফাকেন্দ্রিক প্রচার চালাচ্ছেন। ঢাকাকেন্দ্রিক নেতারা শুক্র-শনিবার হলেই এলাকামুখী হচ্ছেন। আর যাদের ঢাকাকেন্দ্রিক রাজনীতিতে অংশগ্রহণ কম, তারা এলাকাতেই রয়েছেন। মানুষের মন জয়ে তারা বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত রেখেছেন। কোনো কোনো প্রার্থী বিভিন্নভাবে দলের হাইকমান্ডের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ লন্ডনেও যাচ্ছেন। নিজের সম্ভাবনার কথা জানাচ্ছেন। এ ছাড়া দলের বিভিন্ন পর্যায়েও যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। অবশ্য দল এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিলেও কোন কোন আসনে কে মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন, নেতাকর্মীদের কাছে তা অনেকটাই পরিষ্কার।

নির্বাচন সামনে রেখে অনেক জায়গায় দলের প্রার্থীকে এরই মধ্যে গ্রিন সিগন্যাল বা সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে বলে বিএনপিতে আলোচনা আছে। এমনও আলোচনা রয়েছে যে, চলতি সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে কিংবা আগামী মাসের প্রথমার্ধের ভেতরে দলের দুইশ প্রার্থীকে গ্রিন সিগন্যাল দেয়া হবে। তবে দলের পক্ষ থেকে এ বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করা হয়েছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, কোনো নির্বাচনী এলাকায় কোনো প্রার্থীকে গ্রিন সিগন্যাল বা সবুজ সংকেত দেওয়া হয়নি। প্রত্যাশীদের মধ্যে দলীয় নানা কার্যক্রমে যার পারফরম্যান্স ভালো, তাকেই প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করা হবে। বিএনপির মনোনয়ন দেওয়া হয় তার নিজস্ব গঠনতান্ত্রিক উপায়ে, কোনো সবুজ সংকেতের মাধ্যমে নয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ কালবেলাকে বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। স্বাভাবিকভাবেই দেশ এখন নির্বাচনমুখী। আমাদের দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করার কাজও চলমান রয়েছে। যথাযথ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যথাসময়ে এ কাজ সম্পন্ন হবে।

এদিকে মিত্রদের জন্যও আসন বণ্টনের কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। সম্প্রতি তাদের কাছে প্রার্থী তালিকা চাওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। বিএনপির কমিটমেন্ট রয়েছে, যুগপতের মিত্রদের নিয়ে একসঙ্গে নির্বাচন ও সরকার গঠন করবে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শরিকদের জন্য বিএনপির আসন ছাড়ের সংখ্যা এবার পঞ্চাশের কম হবে। জোটের যেসব প্রার্থীর সংশ্লিষ্ট এলাকায় শক্ত অবস্থান আছে, বিজয়ী হয়ে আসার মতো সক্ষমতা রয়েছে—ঢাকাসহ দেশের এমন বিভিন্ন জায়গায় আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে তাদের প্রাধান্য দেবে বিএনপি।

জানা গেছে, ছয় দলীয় রাজনৈতিক জোট গণতন্ত্র মঞ্চ বিএনপির কাছে জোটগতভাবে আসন চাইবে। তারা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে আসন তালিকা জমা দিতে চান। জোটের পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছে, খুব শিগগির বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে তাদের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। জোটগতভাবে তালিকা দেবে ১২ দলীয় জোট এবং জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটও।

বিএনপি ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে মিত্রদের ৫৯টি আসন ছেড়ে দিয়েছিল। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীসহ তৎকালীন ২০ দলীয় জোটকে ৪০টি আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে ছেড়েছিল ১৯টি আসন। নিবন্ধন না থাকায় তখন বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ভোট করেছিলেন জামায়াতের প্রার্থীরা। তবে এবার জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির নির্বাচনী জোট হওয়ার সম্ভাবনা নেই। নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি এবং জামায়াত দুটি দলই এবার তাদের নেতৃত্বে পৃথক জোট গঠনে তৎপর রয়েছে। ইসলামী ঘরানার দলসহ আরও দু-একটি দলকে নিয়ে জোট গঠন প্রক্রিয়ায় রয়েছে জামায়াত। অন্যদিকে যুগপতের মিত্রদের সঙ্গে ইসলামী ঘরানার কয়েকটি দলকেও নির্বাচনী জোটে টানতে চায় বিএনপি। এই জোটে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি আসলে তাদের স্বাগত জানাবে। বিএনপির পক্ষ থেকে সম্প্রতি গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে, এনসিপির জন্য তাদের দরজা খোলা।

আরও পড়ুন

Lading . . .