প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে মোট ২৮টি পদে ৭ নারী শিক্ষার্থী জয়ী হয়েছেন। এর মধ্যে ১২টি সম্পাদকীয় পদের মধ্যে ৩টি পদে জিতেছেন নারী শিক্ষার্থীরা। আর ১৩টি সদস্য পদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থীরা জিতেছেন ৪টি পদে।
ডাকসু নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন জানিয়েছেন, ভোটারের সংখ্যা ছিল ৩৯ হাজার ৮৭৪। ভোট দিয়েছেন ২৯ হাজার ৮২১ জন। এর মধ্যে ১২ হাজার ৪৫৩ জন নারী ভোট দিয়েছেন। ভোট গ্রহণের হার ৭৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
ভোট গ্রহণ হয়েছে অপটিক্যাল মার্ক রিকগনিশন (ওএমআর) শিটে। ডাকসু (২৮টি পদ) ও হল সংসদ (১৩টি) মিলিয়ে নির্বাচনে একজন ভোটারকে মোট ৪১টি ভোট দিতে হয়েছে। ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে মোট ৬২ জন নারী প্রার্থী ভোট পেয়েছেন ১ লাখ ৩৩ হাজার ১০৫।
এ ছাড়া হল সংসদ নির্বাচনে পাঁচ ছাত্রী হল সংসদে ৬৫টি পদে প্রার্থী ছিলেন ১৮৫ জন নারী। ডাকসু ও হল সংসদ মিলিয়ে জয়ী হয়েছেন ৭২ জন নারী।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হয়। আজ বুধবার সকালে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ডাকসুর মোট ২৮টি পদের ২৩টিতেই জিতেছে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্যানেল ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট। সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস)—শীর্ষ এই তিন পদেই জিতেছে শিবিরের প্যানেল ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট। এই তিন পদে নারীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও জয়ী হতে পারেননি।
সম্পাদকীয় পদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন সানজিদা আহমেদ তন্বি। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ১১ হাজার ৭৭৮। তাঁকে সমর্থন জানিয়ে ছাত্রদলসহ কয়েকটি প্যানেল এই পদে প্রার্থী দেয়নি। তাঁর সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে শিবিরের প্রার্থীর। শিবিরের প্রার্থী মো. সাজ্জাদ হোসাইন খান ৭ হাজার ১৮৯ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন।
মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে শিবিরের প্যানেলের প্রার্থী ফাতেমা তাসনিম জুমা ১০ হাজার ৬৩১ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের আরিফুল ইসলাম পেয়েছেন ২ হাজার ৪৭০ ভোট। কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ৯ হাজার ৯২০ ভোট পেয়ে শিবিরের প্যানেলের প্রার্থী উম্মে ছালমা জয়ী হয়েছেন। ৪ হাজার ৪৮২ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের সুর্মী চাকমা।
সদস্য পদে জয়ী ৪ নারী হলেন শিবির প্যানেলের সাবিকুন নাহার তামান্না (১০ হাজার ৮৪ ভোট) ও মোছা. আফসানা আক্তার (৫ হাজার ৭৪৭ ভোট), প্রতিরোধ পর্ষদের হেমা চাকমা (৪ হাজার ৯০৮ ভোট) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী উম্মা উসওয়াতুন রাফিয়া (৪ হাজার ২০৯ ভোট)।
এবার ডাকসুতে ৪৭১ প্রার্থীর মধ্যে নারী ছিলেন ৬২ জন, যা মোট প্রার্থীর ১৩ শতাংশ। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রার্থী ছিলেন ১৮ জন, যা মোট প্রার্থীর মাত্র ৩ দশমিক ৮২ শতাংশ। তাঁদের মধ্যে দুজন নির্বাচিত হয়েছেন। আর পাঁচ ছাত্রী হল সংসদে ৬৫টি পদে প্রার্থী ছিলেন ১৮৫ জন। এর মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছিলেন ১৪ জন।
ডাকসু নির্বাচনে কার্যকরী সদস্য পদে নির্বাচিত বামপন্থী সাতটি সংগঠনের প্যানেল ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’–এর প্রার্থী হেমা চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনে জিতব ভাবিনি। মুক্তিযুদ্ধে চাকমাদের অবদান নেই, এমন বক্তব্যের সমালোচনা বা প্রতিবাদ করতে গিয়ে পরবর্তী সময়ে আমার বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু হয়। শিবিরের প্যানেলের এক প্রার্থী পাহাড়িদের বিরুদ্ধে এমন অপপ্রচার চালিয়েছিলেন। এর সমালোচনা করে আমি সংবাদ সম্মেলন করেছিলাম। এরপর আমার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়, আর সাইবারজগতে প্রতিনিয়ত বুলিংয়ের শিকার হয়েছি।’
নির্বাচনে গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে বিপুল ভোটে জয়ী জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত সানজিদা আহমেদ তন্বি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি গতকাল ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে বলেছেন, ভোটারদের আস্থার মর্যাদা দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা তিনি করবেন।