Advertisement

এখন সংস্কারের জন্য বিদেশ থেকে লোক ভাড়া করে আনতে হয়: মঞ্জু

যুগান্তর

প্রকাশ: ৯ আগস্ট, ২০২৫

আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। ফাইল ছবি
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। ফাইল ছবি

জাতীয় পার্টি-জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এই দেশ সৃষ্টি হয়েছে। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আমাদের দেশকে একটা অবস্থানে নিয়ে এসেছিলাম। আজকে সবাই সব কথা বলে, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ-স্বাধীনতার কথা কেউ বলে না।

শনিবার রাজধানীর গুলশানে ইমানুয়েল কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় কাউন্সিলে তিনি এসব কথা বলেন।

এদিন দলটির দশম জাতীয় কাউন্সিলে সারা দেশ থেকে আসা প্রায় তিন হাজার কাউন্সিলরদের কণ্ঠভোটে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। আর জাতীয় পার্টির মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। এছাড়াও কাজী ফিরোজ রশিদকে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান এবং মো. মুজিবুল হক চুন্নু নির্বাহী চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, এখন সরকার বলছে সংস্কার করতে হবে। সংস্কার কি আমরা করিনি। শিক্ষানীতি, ওষুধনীতি, উপজেলা পদ্ধতি- এসবই সংস্কারের অংশ ছিল। এখন সংস্কারের জন্য বিদেশ থেকে লোক ভাড়া করে আনতে হয়। তারা কিভাবে সংস্কার করবে। তারা সংস্কারের প্রস্তাবনা দিতে পারে। কিন্তু তা বাস্তবায়ন করতে হলে নির্বাচিত সংসদ লাগবে। নির্বাচনের কথা উঠছে। কিন্তু কিভাবে নির্বাচন হবে, আদৌ নির্বাচন হবে কিনা- জানি না। তাছাড়া দেশে এখন যে পরিবেশ বিরাজ করছে, তাতে নির্বাচন কি দরকার? বড় দুই দলের মধ্যে আসন ভাগাভাগি করে নিলে নির্বাচনের খরচ বাবদ দুই হাজার কোটি টাকা বেঁচে যাবে।’

আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, সারা দেশে দখলবাজি চলছে। বাড়ি দখল, দোকান দখল, হাটবাজার দখল, সব জায়গায় দখলবাজি হচ্ছে। কোনো কিছুতেই নিয়ম-কানুনের বালাই নেই। এসব বন্ধ করতে সরকারের দৃশ্যমান উদ্যোগও চোখে পড়ছে না।

স্বাগত বক্তব্যে এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, জাতীয় পার্টিকে আমরা নিয়ে যাব সাধারণ মানুষের কাছে। ফিরিয়ে দেব তৃণমূলের মর্যাদা। পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের গড়া জাতীয় পার্টি কারো একক সম্পত্তি নয়, এই পার্টি জনগণের আশা ও অধিকার রক্ষার আন্দোলনে রাজপথে থাকবে। আমরা দেশের মানুষকে নতুন পথ দেখাতে চাই। জাতীয় পার্টি এখন শুধু বিরোধী শক্তি নয়; আমরা হয়ে উঠতে চাই জাতির বিকল্প নেতৃত্ব। যে নেতৃত্ব সাধারণ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য পল্লীবন্ধু এরশাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করবে।

তিনি বলেন, আজকের এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে জাতীয় পার্টির বিভক্তিকে ভেঙে নতুন নবযাত্রায় পল্লীবন্ধু এরশাদের জাতীয় পার্টিকে গড়ে তোলার শপথ নিচ্ছি। আদালতের আদেশ ও গঠনতান্ত্রিক উপায়ে আজকের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ থেকে জাতীয় পার্টি কোনো এক ব্যক্তির কথায় চলবে না, জাতীয় পার্টি পরিচালিত হবে যৌথ নেতৃত্বের মাধ্যমে। এখন থেকে জাতীয় পার্টিতে আর বিভাজনের আশঙ্কা নেই, বরং খণ্ডিত জাতীয় পার্টিগুলোকে এক ছাতার নিচে নিয়ে এসে ঐক্যবদ্ধ করে এরশাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ শুরু করব।

সভায় আওয়ামী লীগের আমলে অবৈধ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কারণে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চান মো. মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেন, আমরা দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে কোনো বেআইনি কাজ করিনি। যদি নৈতিকভাবে কোনো ভুল হয়ে থাকে, কোনো ভ্রান্তি হয়ে থাকে তাহলে এই কাউন্সিলে দাঁড়িয়ে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে আমরা নিঃশর্ত ক্ষমা চাই।

চুন্নু বলেন, গত প্রায় চার বছর আমি জাতীয় পার্টির মহাসচিব হিসেবে ছিলাম। ভুলভ্রান্তি আমার থাকতে পারে। যে সমস্ত ভুলভ্রান্তি ছিল, সেগুলো আপনারা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। জাতীয় পার্টির মহাসচিব হিসেবে আমি দেশবাসীর কাছে একটি কথাই বলব, আমরা রাজনীতি করতে গিয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত সব সময় হয়তো সঠিক নিতে পারিনি। আমরা বিগত অনেকগুলো নির্বাচন করেছি। অনেক সময় অনেকে আমাদের বিভিন্নভাবে কটূক্তি করেন, বিভিন্ন দলের সহযোগী বা স্বৈরাচার সহযোগী হিসেবে আমাদের আখ্যায়িত করেন।

এর আগে সকালে জাতীয় ও দলীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে কাউন্সিলের উদ্বোধন করা হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন মো. মুজিবুল হক চুন্নু। প্রথম অধিবেশনের উদ্বোধনী আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টি-জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। স্বাগত বক্তব্য দেন এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন মো. মুজিবুল হক চুন্নু।

উদ্বোধনী অধিবেশনে আরও বক্তব্য দেন- কাজী ফিরোজ রশিদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সাহিদুর রহমান টেপা, এটিইউ তাজ রহমান, সোলায়মান আলম শেঠ, নাসরিন জাহান রতনা, নাজমা আকতার, লিয়াকত হোসেন খোকা, মোস্তফা আল মাহমুদ, মাসরুর মওলা, জসিম উদ্দিন ভূইয়া, আরিফুর রহমান, নুরুল ইসলাম মিলন, জিয়াউল হক মৃধা, খান ইসরাফিল খোকন। এছাড়াও কাউন্সিলে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টি-জেপি মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য দিদারুল আলম দিদার, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (মতিন) মহাসচিব জাফর আহমেদ জয়।

পরে কাউন্সিলের দ্বিতীয় অধিবেশনে জাতীয় পার্টি গঠিত তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশনের আহ্বায়ক মো. জহিরুল ইসলাম জহির নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মহাসচিব হিসেবে এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের নাম ঘোষণা করেন। কমিশনের অন্যান্য সদস্যরা হলেন- মোস্তফা আল মাহমুদ এবং আরিফুর রহমান খান।

আরও পড়ুন

Lading . . .