মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ করে কান্না করলে কি কবরে আজাব হয়?
প্রকাশ: ২২ আগস্ট, ২০২৫

মৃত্যু— এটি মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য সত্য। পৃথিবীর আলোয় চোখ মেলে জন্ম নিলে একদিন না একদিন তাকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে। কেউ তা অস্বীকার করতে পারে না, এ সত্য থেকে কেউই পালাতে পারে না।
এ প্রসঙ্গে রাব্বুল আলামিন মহাগ্রন্থ আল কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে এবং তোমরা নিজ নিজ কাজের প্রতিফল সম্পূর্ণভাবেই কিয়ামতের দিন পাবে।’(সুরা আলে ইমরান : ১৮৫, সুরা আনকাবুত : ৫৭)
অর্থাৎ ধনী-গরিব, রাজা-প্রজা, শক্তিশালী-দুর্বল— সবার জন্যই মৃত্যু এক অনিবার্য গন্তব্য। আর আমরা যে দুনিয়ায় বাস করি, এটি সাময়িক। এখানে সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আশা-হতাশা সবই অস্থায়ী। কিন্তু মানুষ ভুলে যায় মৃত্যুর কথা, মায়ার দুনিয়ার চাকচিক্যেই সে বেশি ডুবে থাকে।
অথচ সুরা নাহলে আল্লাহ তায়ালা বলছেন, ‘অতঃপর নির্ধারিত সময়ে যখন তাদের মৃত্যু এসে যাবে, তখন এক মুহূর্তও বিলম্বিত কিংবা ত্বরান্বিত করতে পারবে না।’ (আয়াত : ৬১)
মৃত্যুকে ‘আলিঙ্গনের’ পর প্রত্যেকের কাছে তার চিরস্থায়ী আবাসস্থল তুলে ধরা হয়। হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, মারা যাওয়ার পর মৃত ব্যক্তির সামনে তার মূল বাসস্থানকে তুলে ধরা হবে। সে যদি জান্নাতি হয়, তবে জান্নাতের বাসস্থান আর যদি সে জাহান্নামী হয়, তবে জাহান্নামের বাসস্থান। পরে বলা হবে, এই তোমার স্থান। অবশেষে আল্লাহ তায়ালা তোমাকে কিয়ামতের দিন উত্থিত করবেন। (তিরমিজি : ১০৭২)
বাবা-মা কিংবা প্রিয়জনের মৃত্যুতে আমরা কষ্ট পাই। কান্না করি। এটা স্বাভাবিক বিষয়। তবে অনেকে কান্না করতে গিয়ে বিলাপ করেন, অর্থাৎ শরিয়তের সীমা লঙ্ঘন করেন। এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন জাগে, ‘মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ করে কান্না করলে তার কবরে আজাব হয় কি না।’
চলুন, জেনে নিই শরিয়তের দৃষ্টিভঙ্গি —
বিশেষজ্ঞ আলেমদের মত
শায়াখ আহমাদুল্লাহসহ বেশিভাগ ইসলামি স্কলারদের ভাষ্য, স্বাভাবিকভাবে মৃত ব্যক্তির জন্য কান্না করা জায়েজ। প্রিয়জনের চলে যাওয়ায় যে কেউ চোখের জল ফেলে কাঁদতেই পারেন, তবে বিলাপ করে কান্না করা বা কপাল বা হাত মাটিতে চাপড়ে কান্না করা ইসলামে বৈধ নয়। খোদ নবীজিও (সা.) এমনটা নিষেধ করেছেন।
হাদিসের ভাষ্য
হজরত মুগীরা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, যদি ব্যক্তির (মৃত) জন্য বিলাপ করা হয়, তবে তাকে বিলাপকৃত বিষয়ের ওপর আজাব দেওয়া হবে। (বোখারি : ১২১৪)
অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, যারা (মৃত ব্যক্তির জন্য শোক প্রকাশে) গাল চাপড়ায়, জামার বুক ছিঁড়ে ফেলে এবং জাহিলিয়াত যুগের মতো চিৎকার দেয়, তারা আমাদের তরিকাভুক্ত নয়। ( বোখারি : ১২১৭)
বিলাপের কারণে মৃত ব্যক্তির কবরে আজাব হবে?
সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মাদরাসা জামিয়া কৌড়িয়ার প্রধান মুফতি মাওলানা হেলাল আসহাব কাসেমি কালবেলাকে বলেন, যদি মৃত ব্যক্তি জীবিত থাকাকালে অবগত থাকেন যে, তিনি মারা যাবার পর তার স্বজনরা তাকে নিয়ে বিলাপ করবেন। আর এটা জানার পর তিনি যদি তাদের নিষেধ না করেন বা এমনটা করাকে পছন্দ করেন, তবে তাকে এর জন্য কবরে শাস্তি দেওয়া হবে। অন্যথায় বিলাপকারী ছাড়া অন্য কাউকে শাস্তি দেওয়া হবে না।
কেউ মারা গেলে ধৈর্য ধারণ
প্রিয়জনের বিয়োগ কিংবা বিপদ-আপদের মুহূর্তে ধৈর্য ধারণ করে মহান রবের নিকট সাহায্য চাওয়া প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে রয়েছেন।’ (সুরা বাকারা : ১৫৩)
এ ছাড়াও যেকোনো বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণ করলে গোননাহ মাফ হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মুসলিম ব্যক্তির ওপর যেসব যাতনা, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানি আপতিত হয়, এমনকি যে কাটা তার দেহে বিদ্ধ হয়; এসবের দ্বারা আল্লাহ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন। (বোখারি : ৫২৩৯)