প্রকাশ: ২২ আগস্ট, ২০২৫
দিন ও রাতের মতো জীবন ও মৃত্যু একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। মৃত্যুর নিঃশব্দ উপস্থিতি আমাদের জীবনের মূল্য ও অর্থ বুঝতে সাহায্য করে। আসুন, আমরা ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে জীবন ও মৃত্যুর সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে দেখি এবং এদের পরিপূরক ভূমিকা বোঝার চেষ্টা করি।
ইসলামে জীবন ও মৃত্যুকে একটি অবিচ্ছেদ্য যাত্রার দুটি ধাপ হিসেবে দেখা হয়। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তিনিই যিনি জীবন ও মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন, যাতে তিনি তোমাদের পরীক্ষা করেন, কে তোমাদের মধ্যে উত্তম কাজ করে।’ (সুরা মুলক, আয়াত: ২)
স্পষ্ট যে জীবন ও মৃত্যু আল্লাহর সৃষ্টি এবং উভয়ের উদ্দেশ্য হলো মানুষের পরীক্ষা। মৃত্যু জীবনের শেষ নয়; বরং এটি পরবর্তী ধাপের প্রবেশদ্বার।
মৃত্যুর কথা বেশি বেশি স্মরণ করো। কারণ, এটি পাপ থেকে মুক্ত করে এবং দুনিয়ার প্রতি মোহ কমায়।সুনানে ইবন মাজাহ, হাদিস: ৪,২৫৯
দিন ও রাতের মতো জীবন ও মৃত্যু একে অপরের পরিপূরক। দিন যেমন রাতের অন্ধকার ছাড়া অর্থহীন, তেমনি মৃত্যু ছাড়া জীবনের মূল্য বোঝা কঠিন। যদিও কবি ডিলান টমাস বলেছেন, ‘বার্ধক্যে জ্বলুক আগুন, দিনের শেষে হোক উচ্ছ্বাস; ক্রোধে ক্রোধে প্রতিবাদ করো আলোর মৃত্যুর বিরুদ্ধে।’ ( ‘ডু নট গো ইনটু দ্যাট গুড নাইট ’, কালেক্টেড পোয়েমস, ১৯৩৪–১৯৫২)
কিন্তু ইসলাম মৃত্যুকে ভয় নয়; বরং একটি নতুন সূচনা হিসেবে দেখে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘মৃত্যু হলো মুমিনের জন্য উপহার।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১,৬০৮)
অর্থাৎ মৃত্যু একটি আনন্দের সূচনা হতে পারে, যদি জীবন সৎকর্মে পূর্ণ হয়।
মৃত্যুর উপস্থিতি জীবনকে আরও অর্থপূর্ণ করে। কোরআনে মৃত্যুকে ‘মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ’ শব্দগুচ্ছে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন ‘প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। তারপর আমার কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তন করবে।’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত: ৫৭)
এই বাক্য মৃত্যুকে একটি অভিজ্ঞতা হিসেবে তুলে ধরে, যা জীবনের শেষ নয়; বরং আখিরাতের শুরু। মৃত্যু আমাদের স্মরণ করায় যে জীবন ক্ষণস্থায়ী এবং এর প্রতিটি মুহূর্ত সৎকর্মের জন্য ব্যবহার করা উচিত।
হাদিসে নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘এমনভাবে বাঁচো যেন তুমি চিরকাল বাঁচবে এবং মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নাও, যেন তুমি আজই মরবে।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১২,৫১২)
দিন ও রাতের মতো জীবন ও মৃত্যু একে অপরের পরিপূরক। দিন যেমন রাতের অন্ধকার ছাড়া অর্থহীন, তেমনি মৃত্যু ছাড়া জীবনের মূল্য বোঝা কঠিন।
এ হাদিস জীবন ও মৃত্যুর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার নির্দেশ দেয়। জীবনের পরিকল্পনায় মৃত্যুকে উপেক্ষা করলে আমরা আমাদের উদ্দেশ্য হারিয়ে ফেলি।
জীবনের বিভিন্ন ধাপে আমরা এর বিভিন্ন মাত্রা দেখি, কিন্তু মৃত্যু আমাদের জীবনের পূর্ণ চিত্র দেখায়। বলা যায়, মৃত্যু আমাদের জীবনকে ৩৬০ ডিগ্রি কোণ থেকে দেখার সুযোগ দেয়। যখন কাছের কেউ মারা যায়, তখন আমরা জীবনের ক্ষণস্থায়িত্ব ও মূল্য বুঝতে পারি। উপলব্ধি হয় যে আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নতুন করে মূল্যায়ন করতে করতে হবে।
কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যেখানেই তোমরা থাকো, মৃত্যু তোমাদের কাছে পৌঁছবে, এমনকি যদি তোমরা সুরক্ষিত দুর্গে থাকো।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৭৮)
মানুষ প্রায়ই মৃত্যুকে ভয় পায়। কারণ, এটি অজানা। আমরা মৃত্যু সম্পর্কে কথা বলি জীবিতদের দৃষ্টিকোণ থেকে। কারণ, আমাদের কাছে এর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নেই। কিন্তু ইসলামে মৃত্যু যেন একটি নতুন জন্ম। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আমরা তাদের জন্য জান্নাতে চিরকাল বাস করার জন্য স্থান করে দিয়েছি।’ (সুরা কাহফ, আয়াত: ১০৭)
মানে মৃত্যই শেষ নয়; বরং চিরন্তন জীবনের শুরু।
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘মৃত্যুর কথা বেশি বেশি স্মরণ করো। কারণ, এটি পাপ থেকে মুক্ত করে এবং দুনিয়ার প্রতি মোহ কমায়।’ (সুনানে ইবন মাজাহ, হাদিস: ৪,২৫৯)
যখন মানুষ মারা যায়, তখন তার আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে তিনটি ব্যতীত—সদকায়ে জারিয়া, উপকারী জ্ঞান ও সৎ সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৬৩১
মৃত্যুর চিন্তা আমাদের জীবনকে আরও অর্থপূর্ণ করে এবং সৎকর্মের দিকে পরিচালিত করে।
ইসলামে জীবন ও মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি একই সূত্রে গাঁথা। জীবনকে এমনভাবে কাটানো উচিত যেন এটি আখিরাতের জন্য প্রস্তুতি হয়। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং তাঁর দিকে ফিরে যাও, যাতে তিনি তোমাদের একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত উত্তম জীবন দান করেন।’ (সুরা হুদ, আয়াত: ৩)
তাই জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত আখিরাতের জন্য বিনিয়োগ করা উচিত।
হাদিসে নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যখন মানুষ মারা যায়, তখন তার আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে তিনটি ব্যতীত—সদকায়ে জারিয়া, উপকারী জ্ঞান ও সৎ সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৬৩১)
অর্থাৎ জীবনের কাজ মৃত্যুর পরও প্রভাব ফেলে।
জীবন ও মৃত্যু পরস্পর বিরোধী নয়; বরং একে অপরকে পরিপূর্ণতা দেয়। মৃত্যু জীবনকে অর্থ দেয় এবং আমাদের সৎকর্মের দিকে পরিচালিত করে। ইসলামে মৃত্যুকে একটি নতুন জন্ম হিসেবে দেখা হয়, যা আখিরাতের দিকে নিয়ে যায়। তাই জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ব্যবহার করা উচিত।