প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

মুসলমানদের কাছে বিশেষ পরিচিত একটি শব্দ মুজিজা। মুজিজা শব্দটি আরবি। এর অর্থ ‘অক্ষমকারী অলৌকিক নিদর্শন। নবীগণ তাদের নুবুওয়াতের দাবি প্রমাণ করতে যে সকল অলৌকিক নিদর্শন প্রদর্শন করেন সেগুলোকে ‘মুজিজা’ বলা হয়।
কুরআন-হাদিসে মুজিজা শব্দটি ব্যবহৃত হয় নি, মুজিজা বুঝাতে ‘আয়াত’ (الآية) অর্থাৎ চিহ্ন বা নিদর্শন বলা হয়েছে। পরবর্তী যুগে ‘মুজিজা’ পরিভাষাটির উৎপত্তি। নতুন পরিভাষা ব্যবহারে কোনো আপত্তি নেই।
নবী-রাসূলরা আল্লাহর ইচ্ছায় মুজিজা প্রদর্শন করেছেন। আল্লাহ বলেন,তারা (কাফিরগণ) বলত: ‘তোমরা (নবীগণ) তো আমাদেরই মত মানুষ। আমাদের পিতৃপুরুষগণ যাদের ইবাদত করত তোমরা তাদের ইবাদত থেকে আমাদেরকে বিরত রাখতে চাও। অতএব তোমরা আমাদের নিকট কোনো অকাট্য ক্ষমতা (মুজিজা) উপস্থিত কর। তাদের রাসূলগণ তাদেরকে বলতেন: সত্য বটে আমরা তোমাদের মত মানুষ বৈ কিছুই নই, কিন্তু আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা অনুগ্রহ করেন। আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত তোমাদের নিকট ক্ষমতা (মুজিজা) উপস্থিত করা আমাদের কাজ নয়। মুমিনগণের আল্লাহরই উপর নির্ভর করা উচিত। (সুরা ইবরাহীম, আয়াত : ১০-১১)
অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত কোনো নিদর্শন (মুজিজা) উপস্থিত করা কোনো রাসুলের কাজ নয়। (সুরা রাদ, আয়াত : ৩৮)
পবিত্র কুরআন ছাড়াও নবী করীম (সা.)-এর থেকে অসংখ্য মুজিজা প্রকাশিত হয়েছে, যা নির্ভরযোগ্য সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
যেমন, বুখারি ও মুসলিমের একাধিক বর্ণনায় নবী করীম (সা.) এর আঙ্গুলের ডগা থেকে পানির ঝর্ণা প্রবাহিত হওয়া এবং সাহাবিদের এক বিশাল জামাত সেই পানি দ্বারা নিজেদের প্রয়োজন পূরণ করার ঘটনা প্রমাণিত আছে। এ ধরনের মুজিজাকে অস্বীকার করা পথভ্রষ্টতা ও গোমরাহী।
হাদিসটি লক্ষ্য করুন, জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুদায়বিয়ায় অবস্থানকালে একদিন সাহাবায়ে কেরাম পানির পিপাসায় অত্যন্ত কাতর হয়ে পড়লেন। নবী কারীম (সা.)- এর সম্মুখে একটি (চামড়ার) পাত্রে অল্প পানি ছিল। তিনি ওজু করলেন। তার কাছে পানি আছে মনে করে সবাই ওদিকে ধাবিত হলেন।
নবী কারীম (সা.) বললেন, তোমাদের কি হয়েছে? তারা বললেন, আপনার সম্মুখস্থ পাত্রের সামান্য পানি ব্যতীত ওজু ও পান করার মত পানি আমাদের কাছে নাই। নবী কারীম (সা.) ওই পাত্রে তার হাত রাখলেন। তখনই তার হাত উপচিয়ে ঝর্ণা ধারার ন্যায় পানি ছুটিয়ে বের হতে লাগলো। আমরা সবাই পানি পান করলাম আর ওজু করলাম।
সালিম (রহ.) (একজন রাবী) বলেন, আমি জাবিরকে (রা.) জিজ্ঞাসা করলাম, আপনারা কতজন ছিলেন? তিনি বললেন, আমরা যদি এক লক্ষও হতাম, তবুও আমাদের জন্য পানি যথেষ্ট হত। তবে আমরা ছিলাম মাত্র পনেরশ। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং: ৩৩২৩)
দুই. নবীজির মুজিজাকে অস্বীকার করা চরম ধৃষ্টতার শামিল। যেসব মুজিজা পবিত্র কুরআন এবং মুতাওয়াতির সূত্রে হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, সেগুলোকে অস্বীকার করা কুফরি।
وخبر المعراج، أي بجسد المصطفى يقظة إلى السماء، ثم إلى ماشاء الله تعالى في المقامات العلى حق، أي حديثه ثابت بطرق متعدة فمن رده أي ذلك الخبر ولم يؤمن بمقتضى ذلك الأثر فهو ضال مبتدع، أي جامع بين الضلالة والبدعة. وفي كتاب الخلاصة: من أنكر المعراج ...... إلى قوله . فهو كافر. (شرح فقه أكبر، مكتبه اشرقی دیوبند (١٣٥)
এবং মিরাজের ঘটনা, অর্থাৎ হজরত মুস্তাফা (সা.)-এর সশরীরে জাগ্রত অবস্থায় আসমানে আরোহণ, এবং তারপর আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় সর্বোচ্চ স্থানসমূহে গমন করা, এসবই সত্য। অর্থাৎ এর বর্ণনা বহু সূত্রে প্রমাণিত। সুতরাং যে ব্যক্তি এই বর্ণনা প্রত্যাখ্যান করবে এবং এর মর্ম অনুযায়ী ঈমান আনবে না, সে পথভ্রষ্ট। আর যে ব্যক্তি মিরাজকে অস্বীকার করে সে কাফের।
তিন. মুজিজা প্রমাণিত হওয়া একটি অকাট্য সত্য এবং এর উপর বিশ্বাস স্থাপন করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ওয়াজিব। (তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম)
চার. মিরাজের ঘটনা সহিহ হাদিস এবং মুতাওয়াতির সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত। এর উল্লেখ বিভিন্ন হাদিস এবং সিরাতের কিতাবসমূহে বিদ্যমান। আর একে অস্বীকার করা কুফর এবং গোমরাহী।