চোরাই মার্কেট থেকে কিছু কিনে ব্যবহার করা যাবে?
প্রকাশ: ১০ আগস্ট, ২০২৫

শান্তি ও মানবতার ধর্ম ইসলাম। আর ইসলাম চুরিকে নিশ্চিতভাবে গর্হিত ও ঘৃণিত অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করেছে। কোরআন-হাদিসে চুরির বিষয়ে কঠোর শাস্তির কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। সেইসঙ্গে চুরির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ বা বস্তু ব্যবহার করাও শরিয়তে কঠিনভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ কর না এবং জনগণের সম্পদের সামান্য অংশও জেনে-শুনে আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে শাসন কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিও না।’ (সুরা বাকারা : ১৮৮)
সুরা মায়িদাতে তিনি বলেন, ‘যে পুরুষ চুরি করে এবং যে নারী চুরি করে তাদের হাত কেটে দাও তাদের কৃতকর্মের শাস্তি হিসেবে। আল্লাহর পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি। আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, মহাজ্ঞানী।’ (আয়াত : ৩৮)
তবে চুরি করলেই হাত কেটে দেওয়ার বিধান দেওয়া হয়নি; বরং হাত কাটার শাস্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি শর্ত রয়েছে।
আমাদের দেশে গোপন বা প্রকাশ্যভাবে এমন কিছু মার্কেট গড়ে উঠেছে, যেগুলো ‘চোরাই মাল’ বিক্রির জন্য পরিচিত। এসব মার্কেটে সাধারণত মোবাইল ফোন, ইলেকট্রনিক্স পণ্য, মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশসহ নানা ধরনের চুরিকৃত দ্রব্য কম দামে বিক্রি হয়। অনেকেই এসব পণ্য লোভে পড়ে কিনে থাকেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এসব চোরাই মাল কি ব্যবহার করা যাবে?
ফুক্বাহায়ে কেরাম বলছেন, চোরের জন্য চোরাই মাল বিক্রি করা যেমন জায়েজ নয়, জেনেশুনে চোরাই মাল কেনা এবং তা ব্যবহার করাও জায়েজ নয়। কোনো মার্কেট যদি চোরাই মালের মার্কেট হিসেবে প্রসিদ্ধ হয় এবং এ ব্যাপারে নিশ্চিত জ্ঞান বা প্রবল ধারণা থাকে যে, ওই মার্কেটে যা বিক্রি করা হয় তা চুরিকৃত তাহলে কারও জন্য ওই মার্কেট থেকে কোনো কিছু কেনা এবং তা নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করা জায়েজ হবে না।
প্রখ্যাত ইসলামী স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, জেনেশুনে চোরাই মার্কেট থেকে কোনো জিনিস ক্রয় করা জায়েজ নয়। কারণ, সেটা চোরকে চুরি করতে এবং চোরাই পণ্য বিক্রি করতে সমর্থন করার শামিল। হ্যাঁ, আপনার কাছে যদি জিনিসটি নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয় যে, এটা চোরাই মাল হতে পারে আবার না ও হতে পারে, সেক্ষেত্রে ক্রয় করা জায়েজ আছে। তবে এড়িয়ে যাওয়া ভালো।
হাদিস শরিফে হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি চোরাই মাল জেনেশুনে কিনল, সে চুরির গুনাহ এবং লাঞ্ছনার ক্ষেত্রে অংশীদার হলো।’ (সুনানে বায়হাকি : ১১১৪১, মুসতাদরাকে হাকেম : ২২৫৩)
কাজেই, কেউ যদি এ রকম মার্কেট থেকে বা চোরের কাছ থেকে চোরাই কিছু কিনে থাকে, তার জন্য ওই বস্তু ব্যবহার করা জায়েজ নয়। বরং ওই বস্তু প্রকৃত মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা জরুরি। কোনোভাবেই মূল মালিকের সন্ধান পাওয়া সম্ভব না হলে তা সদকা করে দিতে হবে।
আরও পড়ুন