রোগ মুক্তির জন্য শরীরে জমজমের পানি ছিটানো যাবে?
প্রকাশ: ৭ আগস্ট, ২০২৫

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোগীদের উপর জমজমের পানি ছিটাতেন এবং তাদেরকে তা পান করতে দিতেন। জমজমের পানিতে রোগ থেকে মুক্তির কথা হাদিসে এসেছে, তাই রোগ থেকে মুক্তির জন্য শরীরে জমজমের পানি ছিটানোটা মোটেও বিদআত এবং সুন্নাহ পরিপন্থী হবে না।
জমজমে রয়েছে খাদ্যের বৈশিষ্ট্য ও রোগ থেকে মুক্তি
হাদিস শরিফে জমজমের অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস রা. নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন-
خَيْرُ مَاءٍ عَلَى وَجْهِ الْأَرْضِ مَاءُ زَمْزَمَ، فِيهِ طَعَامٌ مِنَ الطّعْمِ وَشِفَاءٌ مِنَ السُّقْمِ.
জমজম ভূপৃষ্ঠের শ্রেষ্ঠ পানি। এতে রয়েছে খাদ্যের বৈশিষ্ট্য ও রোগ থেকে মুক্তি। (আলমুজামুল কাবির, তবারানী, হাদিস ১১১৬৭; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদিস ৫৭১২)
এ হাদিসে জমজমের পানির দুটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে।
১. এতে রয়েছে খাবারের বৈশিষ্ট্য।
২. এ পানি পান করে সুস্থতা লাভ হয়।
মানুষ জীবন বাঁচানোর তাগিদে খাদ্য গ্রহণ করে। খাবারের মাধ্যমে দেহে শক্তি সঞ্চার হয়। কর্মপ্রেরণা সৃষ্টি হয়। জীবনের পথে মানুষ এগিয়ে চলে। খাদ্যের এই বৈশিষ্ট্য আল্লাহ তাআলা জমজম পানির মধ্যেও রেখেছেন। জমজম পান করেও ক্ষুধা নিবারণ হয়। মানুষ কর্মশক্তি লাভ করে।
হযরত আবু যর গিফারি রা. ইসলাম গ্রহণের পূর্বে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সত্যতা যাচাই করার জন্য মক্কা এসে ত্রিশ দিন পর্যন্ত অবস্থান করেন। এ পুরোটা সময় তিনি শুধু জমজম পান করে কাটিয়েছেন।
(দীর্ঘ হাদিসের একাংশে) আবু যর রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করেন। এরপর তিনি ও তার সাথী তাওয়াফ করে নামায আদায় করেন। নবীজী নামায শেষ করলে আমি তাকে সালাম দিই। নবীজী জিজ্ঞাসা করেন, কে তুমি?
: গিফার বংশের লোক আমি।
: কোথায় ছিলে?
: ত্রিশ দিন পর্যন্ত এখানেই ছিলাম।
: কে তোমাকে খাবার খাইয়েছে।
: উত্তরে তিনি বললেন-
مَا كَانَ لِي طَعَامٌ إِلّا مَاءُ زَمْزَمَ فَسَمِنْتُ حَتّى تَكَسَّرَتْ عُكَنُ بَطْنِي، وَمَا أَجِدُ عَلَى كَبِدِي سُخْفَةَ جُوعٍ.
জমজম ছাড়া আমার আর কোনো খাবার ছিল না। শুধু এ পানি পান করেই দিন কাটিয়েছি। এমনকি মোটা হয়ে গেছি। (এ দীর্ঘ সময়ে) আমি কখনো ক্ষুধা অনুভব করিনি।
নবীজী তখন বলেন-
إِنّهَا مُبَارَكَةٌ، إِنّهَا طَعَامُ طُعْمٍ
এটা বরকতময় পানি। এতে রয়েছে খাদ্যের বৈশিষ্ট্য। (দ্র. সহিহ মুসলিম, হাদিস ২৪৭৩)
ইমাম ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন, আমি এমন মানুষও দেখেছি, যিনি অর্ধ মাস কিংবা তারও বেশি সময় শুধু জমজম পান করেই কাটিয়েছেন। কখনো ক্ষুধা অনুভব করেননি। অন্যান্যদের সঙ্গে খুব স্বাভাবিকভাবেই তাওয়াফ করতেন। তিনি আমায় বলেছেন, একবার তো শুধু জমজম পান করেই চল্লিশ দিন কাটিয়েছেন। (যাদুল মাআদ ৪/৩৯৩)
এ তো কিতাবের পাতায় উল্লেখিত কয়েকটি ঘটনা মাত্র। জানা নেই, যুগে যুগে কত শত আল্লাহর বান্দা শুধু জমজম পান করেই দিনের পর দিন কাটিয়েছেন এবং ঈমানী শক্তিতে উজ্জীবিত হয়েছেন।
উপরোক্ত হাদিসে জমজমের দ্বিতীয় যে বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে তা হল রোগ থেকে মুক্তিলাভ।
আল্লাহ তাআলা জমজমের পানিতে রোগ থেকে মুক্তি লাভের বিশেষ বৈশিষ্ট্য রেখেছেন। হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
خَيْرُ مَاءٍ عَلَى وَجْهِ الْأَرْضِ مَاءُ زَمْزَمَ، فِيهِ طَعَامٌ مِنَ الطُّعْمِ وَشِفَاءٌ مِنَ السُّقْمِ.
জমজম ভূপৃষ্ঠের শ্রেষ্ঠ পানি। এতে রয়েছে খাদ্যের বৈশিষ্ট্য ও রোগ থেকে মুক্তি। -আলমুজামুল কাবীর, তবারানী, হাদিস ১১১৬৭; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদিস ৫৭১২
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
مَاءُ زَمْزَمَ لِمَا شُرِبَ لَهُ، فَإِنْ شَرِبْتَهُ تَسْتَشْفِي بِهِ شَفَاكَ اللهُ.
যে উদ্দেশ্যে জমজম পান করা হবে তা পূরণ হয়। যদি তুমি রোগমুক্তির জন্য তা পান কর আল্লাহ তোমাকে সুস্থ করে দেবেন। -মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস ১৭৩৯
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোগীদের উপর জমজমের পানি ছিটাতেন এবং তাদেরকে তা পান করতে দিতেন।
হযরত ইবনে আব্বাস রা. নিজেও রোগমুক্তির জন্য জমজম পান করতেন এবং এ দুআ পড়তেন-
اللّهُمَّ أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا، وَرِزْقًا وَاسِعًا، وَشِفَاءً مِنْ كُلِّ دَاءٍ.
হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে উপকারী ইলম, প্রশস্ত রিযিক ও সব রোগ থেকে মুক্তি চাই। -মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস ১৭৩৯
সালাফে সালেহীন থেকে রোগমুক্তির জন্য জমজম পান করার অসংখ্য ঘটনা রয়েছে। রোগাক্রান্ত হলে তারা চিকিৎসা হিসেবে জমজম পান করতেন এবং সুস্থ হয়ে যেতেন। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বলের ছেলে নিজ পিতার ব্যাপারে বলেন, আমি বাবাকে রোগ থেকে মুক্তি লাভের জন্য জমজম পান করতে দেখেছি। সেইসঙ্গে তিনি পানি দিয়ে হাত ও মুখ মাসাহ করতেন। -সিয়ারু আলামিন নুবালা ১১/২১২
ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন, রোগমুক্তির জন্য জমজম ব্যবহার করে আমি অনেক রোগ থেকে মুক্ত হয়েছি। -যাদুল মাআদ ৪/৩৯৩
তিনি নিজের একটি ঘটনা বলেন, একবার আমি মক্কা শরীফে অসুস্থ হয়ে পড়ি। তখন জমজমের পানি নিয়ে তাতে কয়েকবার اِیَّاكَ نَعْبُدُ وَ اِیَّاكَ نَسْتَعِیْنُ পড়ে দম করে পান করি। এ অসিলায় আমি পূর্ণ সুস্থতা লাভ করি। অন্যান্য ব্যথা বেদনার জন্যও আমি এ আমলটি করেছি এবং অনেক উপকার পেয়েছি। -যাদুল মাআদ ৪/১৭৮
ইমাম তাকীউদ্দীন আলফাসী বলেন, আহমাদ ইবনে আবদুল্লাহ আশশারিফী অন্ধত্ব থেকে মুক্তি লাভের জন্য জমজম পান করেন এবং এ উসীলায় পূর্ণ সুস্থ হয়ে যান। -শেফাউল গারাম ১/২৫৫
জমজমে রয়েছে নববী বরকতের স্পর্শ
যুগযুগ ধরে জমজম নিজের মাঝে ধারণ করে আছে নববী বরকতের এক স্পর্শ। নবীজীর মুখের পানি মিশে আছে এ পবিত্র কূপে।
হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন, একবার নবীজী জমজম কূপের কাছে আসেন। আমরা তখন সেখান থেকে এক পেয়ালা পানি তাকে দিই। তিনি পানি পান করে কিছু পানি পেয়ালায় কুলি করেন। আমরা তখন পেয়ালার সে পানি জমজম কূপে ঢেলে দেই। -মুসনাদে আহমাদ, হাদিস ৩৫২৭
এ হাদিসের প্রেক্ষাপটে যফর আহমদ উসমানী রহ. বলেন, ‘জমজম কূপে নবীজীর মুখের পানি মেশার দরুণ এ পানির স্বাদ ও বরকত এবং নূর ও পবিত্রতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। নবীজী তার উম্মতের প্রতি কতটা দয়ালু যে, কিয়ামত পর্যন্ত আগত উম্মতকে তিনি তার বরকত থেকে বঞ্চিত করতে চাননি।’
বরকতের সেই স্পর্শে আমাদেরও ধন্য কর হে আল্লাহ! আজ হাজার বছর পরও নবীপ্রেমিক বান্দা জমজম পানের সময় সে বরকত প্রত্যাশা করে।
আরও পড়ুন