প্রকাশ: ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

যারা ইমানের পথে অবিচল থাকে, তাদের জন্য তাঁর সাহায্য নিশ্চিত। কিন্তু যখন আমরা বিভেদ, বিচ্ছিন্নতা ও অপমানের মুখোমুখি হই, তখন তা আমাদের নিজেদের কৃতকর্মের ফল।
পবিত্র কোরআনে এ বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘যখন তোমাদের ওপর বিপদ এল, যদিও তোমরা তার দ্বিগুণ ক্ষতি করেছিলে, তখন তোমরা বললে, “এটা কীভাবে হলো?” বলো, “এটা তোমাদের নিজেদের থেকেই হয়েছে।” নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছুর ওপর সর্বশক্তিমান।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৬৫)
ওহুদের যুদ্ধে সাহাবায়ে কেরাম রাসুল (সা.)-এর নির্দেশ অমান্য করার কারণে পরাজয়ের মুখোমুখি হয়েছিলেন। তিরন্দাজরা তাঁদের নির্ধারিত স্থান ত্যাগ করেছিলেন, যা যুদ্ধের ফলকে বদলে দিয়েছিল।
যদি সাহাবারা রাসুলের নির্দেশ অমান্য করেও বিজয়ী হতেন, তবে তাঁর নির্দেশের গুরুত্ব কমে যেত। তাই সাময়িক পরাজয়ের মাধ্যমে আল্লাহ তাঁদের শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন।শাইখ মুহাম্মদ মুতাওয়াল্লি শারাভি (রহ.), তাফসিরে শারাভি
কোরআনে এ ঘটনার উল্লেখ রয়েছে, ‘যতক্ষণ না তোমরা ব্যর্থ হলে এবং আদেশ নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়লে এবং অমান্য করলে, যদিও তিনি তোমাদের দেখিয়েছিলেন যা তোমরা ভালোবাসতে। তোমাদের মধ্যে কেউ এই দুনিয়া কামনা করে, আর কেউ আখিরাত কামনা করে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৫২)।
শাইখ শারাভি (রহ.) বলেন, ‘যদি সাহাবারা রাসুল (সা.)-এর নির্দেশ অমান্য করেও বিজয়ী হতেন, তবে তাঁর নির্দেশের গুরুত্ব তাঁদের চোখে কমে যেত। তাই সাময়িক পরাজয়ের মাধ্যমে আল্লাহ তাঁদের শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন, যাতে তাঁরা রাসুলের নির্দেশের প্রতি অবিচল থাকেন।’ (শারাভি, মুহাম্মদ মুতাওয়াল্লি, তাফসিরে শারাভি , দারুল শুরুক, ১৯৯৭, পৃষ্ঠা ২৩৪)
কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য করো, তিনি তোমাদের সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা অটল রাখবেন।’ (সুরা মুহাম্মদ, আয়াত: ৭)
এই প্রতিশ্রুতি বদরের যুদ্ধে স্পষ্ট হয়েছিল, যখন সংখ্যায় কম ও দুর্বল মুসলিমরা তাঁদের ইমান ও নিষ্ঠার কারণে আল্লাহর সাহায্য লাভ করেছিলেন। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘এবং আল্লাহ তোমাদের বদরে বিজয় দিয়েছিলেন, যখন তোমরা সংখ্যায় কম ছিলে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১২৩)
কত ছোট দল আল্লাহর অনুমতিক্রমে বড় দলকে পরাজিত করেছে। আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।সুরা বাকারা, আয়াত: ২৪৯
একইভাবে আহযাবের যুদ্ধে মুসলিমরা শক্তিশালী শত্রুদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। কোরআন বর্ণনা করে, ‘যখন তারা তোমাদের ওপর থেকে এবং নিচ থেকে এসেছিল, যখন চোখ বিস্ফারিত হয়েছিল এবং হৃদয় গলায় উঠে এসেছিল এবং তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করছিলে। সেখানে মুমিনদের পরীক্ষা করা হয়েছিল এবং তাদের তীব্রভাবে কাঁপানো হয়েছিল।’ (সুরা আহযাব, আয়াত: ১০-১১)
তবু তাঁদের ইমান ও ধৈর্য তাঁদের বিজয় এনে দিয়েছিল।
ইতিহাসজুড়ে মুসলিমরা বিভিন্ন সময়ে শক্তিশালী শত্রুদের মুখোমুখি হয়েছেন। এই পরীক্ষাগুলোই সত্যিকারের মুমিনদের মুনাফিকদের থেকে আলাদা করেছে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘কত ছোট দল আল্লাহর অনুমতিক্রমে বড় দলকে পরাজিত করেছে। এবং আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৪৯)
আল্লাহ আমাদের হাতে বিজয়ের চাবিকাঠি দিয়েছেন। যেমন আধুনিক প্রবাদে বলা হয়, ‘বল আমাদের কোর্টে।’ আমরা যদি আল্লাহকে সাহায্য করি, তিনি আমাদের সাহায্য করবেন, শত্রুর শক্তি, সংখ্যা বা উন্নত অস্ত্রনির্বিশেষে। মুসা (আ.)-এর অনুসারীরা যখন ফিরাউনের সেনাবাহিনীর ভয়ে কাঁপছিলেন, তখন মুসা (আ.) বলেছিলেন, ‘নিশ্চয়ই আমার সঙ্গে আমার রব আছেন, তিনি আমাকে পথ দেখাবেন।’ (সুরা শুয়ারা, আয়াত: ৬২)
একইভাবে হিজরতের সময় গুহায় রাসুল (সা.) আবু বকর (রা.)-কে বলেছিলেন, ‘তুমি কী মনে করো দুজনের কথা, যাদের সঙ্গে আল্লাহ তৃতীয়?’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩,৬৫৩)।
কেউ বলতে পারে, ‘বিজয়ের জন্য প্রস্তুতি, সরঞ্জাম ও সংখ্যা প্রয়োজন।’ এটি সত্য, কিন্তু শুধু প্রস্তুতি যথেষ্ট নয়। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘এবং তাদের বিরুদ্ধে তোমরা যা পারো শক্তি ও যুদ্ধের ঘোড়া প্রস্তুত করো।’ (সুরা আনফাল, আয়াত: ৬০)
আমাদের সাধ্যমতো প্রস্তুতি নিতে হবে এবং বাকিটা আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিতে হবে, যিনি আমাদের সামর্থ্যের বাইরে সাহায্য প্রদান করেন। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘এবং তুমি যখন নিক্ষেপ করেছিলে, তখন তুমি নিক্ষেপ করোনি; বরং আল্লাহই নিক্ষেপ করেছিলেন।’ (সুরা আনফাল, আয়াত: ১৭)
বিজয় শুধু তত্ত্ব নয়; বরং বাস্তবে বারবার প্রমাণিত হয়েছে। হুনাইনের যুদ্ধে মুসলিমরা প্রাথমিকভাবে তাদের সংখ্যার ওপর ভরসা করে পরাজয়ের মুখোমুখি হয়েছিলেন।
বিজয় শুধু তত্ত্ব নয়; বরং বাস্তবে বারবার প্রমাণিত হয়েছে। হুনাইনের যুদ্ধে মুসলিমরা প্রাথমিকভাবে তাদের সংখ্যার ওপর ভরসা করে পরাজয়ের মুখোমুখি হয়েছিলেন।
কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ তোমাদের অনেক স্থানে বিজয় দিয়েছেন এবং হুনাইনের দিনে, যখন তোমাদের সংখ্যাধিক্য তোমাদের খুশি করেছিল, কিন্তু তা তোমাদের কোনো কাজে আসেনি এবং পৃথিবী তার বিশালতা সত্ত্বেও তোমাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। তারপর তোমরা পিঠ দেখিয়ে পালিয়েছিলে।’ (সুরা তাওবা, আয়াত: ২৫)
তবু আল্লাহর সাহায্যে তারা বিজয়ী হয়েছিলেন। কোরআন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, ‘তোমরা দুর্বল হয়ো না এবং শোক করো না, যদি তোমরা সত্যিকারের মুমিন হও তবে তোমরাই শ্রেষ্ঠ হবে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৯)