Advertisement

পণ্যে ভেজাল রোধে ইসলাম

যুগান্তর

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট, ২০২৫

24obnd

মহান আল্লাহ মানব জাতির জন্য যা হালাল করেছেন তাই খাদ্য। মানবদেহে শক্তি সঞ্চার করা, ক্ষয়পূরণ ও রোগ প্রতিরোধে খাদ্যের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

কিন্তু আমাদের দেশে বর্তমানে একটি সমস্যা হল, খাদ্যে ভেজাল মিশ্রন। যার ফলে জনসাস্থ্য হুমকির মুখে দাঁড়িয়েছে। ভেজাল খাদ্যের প্রভাবে জনসাধারণ নানান মরণব্যাধি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

অধিক মুনাফার আশায় খাদ্যকে আকর্ষণীয় করার জন্য একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী রকমারি রং, ফরমালিন,কেমিক্যাল ব্যবহার করে থাকে।

খাদ্যে এরকম ভেজাল মিশ্রণ মানেই ক্রেতার সঙ্গে প্রতারণা। এটি ইসলামের দৃষ্টিতে মহা অপরাধ।

ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে ব্যবসায় সততা ও স্বচ্ছতা রক্ষা করা। মহানবী (সা.) বলেন, সৎ ও আমানতদার ব্যবসায়ী হাশরের দিন নবী, সিদ্দিক ও শহীদদের সঙ্গী হবেন।’ (তিরমিজি, হাদিস:১২০৯)

আর অসৎ ও অসাধু ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে হাদীসে কঠোর বাণী বর্ণিত হয়েছে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কিয়ামতের দিন ব্যবসায়ীদের পাপীরূপে উঠানো হবে, তবে যেসব ব্যবসায়ী আল্লাহকে ভয় করে, কল্যাণের কাজ করে ও সততা ধারণ করে তারা ব্যতীত।’ (তিরমিজি , হাদিস:১২১০)

দেশে বিভিন্ন সময় ভেজালবিরোধী অভিযানে অসাধু ব্যবসায়ীদের যে কুৎসিত চিত্র ফুটে ওঠে তা মুসলমান হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জাজনক। বাজারে যেন এমন কোনো পণ্যই নেই যা ভেজালমুক্ত। ভেজাল পণ্যে সয়লাব গোটা দেশ। অখাদ্য-কুখাদ্য বিক্রি হচ্ছে দেদারসে। ভোক্তারা প্রতারিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

খাঁটি মুসলমান কখনো ব্যবসা-বাণিজ্যে অসাধুতা, পণ্যে ভেজাল, ধোঁকা ও প্রতারণার আশ্রয় নিতে পারে না। হাদীসে পণ্যে ভেজালের কঠোর নিন্দা করা হয়েছে।

মহানবী (সা.) পণ্যে ভেজাল দিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে দ্রব্যমূল্য বাড়াতে নিষেধ করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন নবী করিম (সা.) কোনো এক শস্যস্তূপের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি শস্যস্তূপে হাত ঢুকিয়ে দিয়ে দেখলেন তাঁর হাত ভিজে গেছে। তিনি বললেন, ‘হে শস্যের মালিক, ব্যাপার কী?’ উত্তরে শস্যের মালিক বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, বৃষ্টিতে ভিজে গেছে।’ মহানবী (সা.) তাকে বললেন, ‘তাহলে ভেজা অংশ শস্যের ওপরে রাখলে না কেন—যাতে ক্রেতারা তা দেখে কিনতে পারে? নিশ্চয়ই যে প্রতারণা করে সে আমার উম্মত নয়।’ (মুসলিম, হাদিস:১০২)

ইসলামের দৃষ্টিতে একজন সৎ ব্যবসায়ীর কর্তব্য হচ্ছে পণ্যের ত্রুটি সম্পর্কে ক্রেতাকে অবগত করা। ধোঁকা ও প্রতারণার আশ্রয় না নেওয়া। হাদীসে এসেছে, নবী (সা:) বলেন, যে ব্যক্তি পণ্যের ত্রুটি বর্ণনা না করে (বরং গোপন করে) বিক্রয় করে, সে সর্বদা আল্লাহর গজবের মধ্যে থাকে এবং ফেরেশতারা সব সময় তাকে অভিশাপ করতে থাকে । (ইবনে মাজাহ, হাদিস:২২৪৭)

পণ্য ওজনে কম দেওয়াও মারাত্মক অপরাধ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা ওজনে কম দেয় তাদের জন্য ধ্বংস। তারা যখন লোকজনের কাছ থেকে কিছু মেপে নেয়, তখন পুরোপুরি নেয়। আর যখন তাদের মেপে দেয় তখন কম করে দেয়। তারা কি ভেবে দেখে না যে, তারা সেই কঠিন দিনে পুনরুত্থিত হবে, যেদিন সব মানুষ আপন প্রতিপালকের সামনে দাঁড়াবে?’ (সুরা মুতাফ্ফিফিন: ১-৫)

ভেজাল পণ্যকে শপথ করে খাঁটি পণ্য বলে চালিয়ে দেওয়াটা অসাধু ব্যবসায়ীদের স্বভাবে পরিণত হয়েছে। মিথ্যা শপথের ব্যাপারে কোরআনে কারিমে আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহর পথে কৃত অঙ্গিকার সামান্য মূল্যে বিক্রি করে তাদের আখেরাতে কোন অংশ নেই। আর তাদের সাথে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন কথা বলবেন না। তাদের প্রতি করুণার দৃষ্টি দিবেন না। তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন না। তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। (আল ইমরান: ৭৭)

এ আয়াত সম্পর্কে হযরত আবু যর রা. বলেন, রাসুল (সা.) বলেন, তিন ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিবসে রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না। তাদেরকে মার্জনা করবেন না। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আমি বললাম হে আল্লাহর রাসুল তারা কারা? তারা তো বড় বঞ্চিত ও ক্ষতিগ্রস্ত।

রাসুলুল্লাহ (সা.)বলেন, তারা হলো অনুগ্রহ করার পর তা প্রকাশকারী, টাখনুর নিচে কাপড় পরিধানকারী, মিথ্যা শপথের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয়কারী। রসুল সা. এই আয়াত পড়েন। (মুসলিম, হাদিস:২৪৩)।

ব্যবসায়ীদের অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে, সততা, সত্যবাদিতা, বিশ্বস্ততা রক্ষা করলে, ধোঁকা, প্রতারণা ও পণ্যে ভেজাল থেকে মুক্ত থাকলে ব্যবসা শুধু উত্তম পেশা ও জীবিকা উপার্জনের পবিত্র মাধ্যমই নয়, ইবাদতও বটে। আর পণ্যে ভেজাল দিলে, মিথ্যা, অসাধুতা, ধোঁকা, প্রতারণার আশ্রয় নিলে, ওজনে কম দিলে এ ব্যবসাই পরকালে কঠোর শাস্তির কারণ হবে।

অসদুপায়ে ভেজালের মাধ্যমে বাহ্যত ব্যবসায় প্রচুর লাভবান হয়তো হওয়া যায় কিন্তু এ অবৈধ মুনাফায় কোনো বরকত থাকে না।

লেখক: উস্তাযুল হাদিস জামিয়া মিফতাহুল উলূম নেত্রকোনা

Lading . . .