প্রকাশ: ১৯ আগস্ট, ২০২৫

প্রশ্ন: আমাদের এলাকায় এক ভাইয়ের জানাজা হয়। আমি নামাজে পৌঁছাই দেরিতে। যখন দাঁড়াই, তখন ইমাম ইতোমধ্যে কয়েকটি তাকবির বলে ফেলেছেন। এমন অবস্থায় আমি কি করব?
জানাজার নামাজ চলাকালীন শরীক হলে কি শুধু ইমামের সঙ্গে তাকবির বলব, নাকি ছুটে যাওয়া তাকবিরগুলো পরে পূর্ণ করতে হবে?
উত্তর: জানাজার নামাজে চার তাকবির ফরজ। কেউ দেরিতে আসায় কিছু তাকবির ছুটে গেলে, ইমামের বর্তমান তাকবিরে শরীক হবে এবং সেখান থেকে নামাজ চালিয়ে যাবে।
এরপর ইমাম সালাম ফেরালে, খাটিয়া উঠানোর আগে নিজের ছুটে যাওয়া তাকবিরগুলো একে একে পূর্ণ করবে। তাকবিরের পর দোয়া পড়া আবশ্যক নয়।
তবে যদি মনে হয় সময় আছে, তাহলে তাকবিরের সঙ্গে দোয়াও পড়া যাবে। কিন্তু খাটিয়া উঠানোর আশঙ্কা থাকলে শুধু তাকবিরগুলো বললেই যথেষ্ট হবে।
জানাজার নামাজের নিয়ম ও দোয়া
চার তাকবিরের সঙ্গে জানাজার নামাজ আদায় করতে হয়। ঈদের নামাজে তাকবির দেওয়ার সময় হাত তুলতে হয়, কিন্তু জানাজার নামাজে তাকবির দেওয়ার সময় হাত তোলার প্রয়োজন পড়ে না।
জানাজার নামাজের নিয়ত:
نَوَيْتُ اَنْ اُؤَدِّىَ لِلَّهِ تَعَا لَى اَرْبَعَ تَكْبِيْرَاتِ صَلَوةِ الْجَنَا زَةِ فَرْضَ الْكِفَايَةِ وَالثَّنَا ءُ لِلَّهِ تَعَا لَى وَالصَّلَوةُ عَلَى النَّبِىِّ وَالدُّعَا ءُلِهَذَا الْمَيِّتِ اِقْتِدَتُ بِهَذَا الاِْمَامِ مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِ يْفَةِ اَللَّهُ اَكْبَرُ
নিয়তের বাংলা উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উয়াদ্দিয়া লিল্লাহি তায়ালা আরবা আ তাকবিরাতি ছালাতিল জানাজাজি ফারজুল কেফায়াতি আচ্ছানাউ লিল্লাহি তায়ালা ওয়াচ্ছালাতু আলান্নাবীয়্যি ওয়াদ্দোয়াউ লিহাযাল মাইয়্যেতি এক্কতেদায়িতু বিহাযাল ইমাম মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আললাহু আকবার।
এখানে নিয়তে ‘লিহাযাল মাইয়্যেতে’ পুরুষ/ছেলে লাশ হলে পড়তে হবে, আর লাশ নারী/মেয়ে হলে ‘লিহাযিহিল মাইয়্যেতে’ বলতে হবে।
নিয়ত আরবিতে করতে না পারলে বাংলায় করলেও চলবে, ‘আমি চার তাকবিরের সঙ্গে ফরজে কিফায়া জানাজার নামাজ কিবলামুখী হয়ে ইমামের পিছনে দাঁড়িয়ে মরহুম ব্যক্তির (পুরুষ/মহিলার) জন্য দোয়া করার উদ্দেশ্যে আদায় করছি। আল্লাহু আকবার।’
জানাজার নামাজে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা ও রাসূলের ওপর দরুদ পাঠ করা হয়। বাংলায় নিয়ত করলে তা বাংলায় বলে অথবা মনে মনে নিয়তে করলেও চলবে।পুরোটা মুখে উচ্চারণ করা জরুরি নয়।
নিয়তে তাকবিরে তাহরিমা অর্থাৎ, আল্লাহু আকবার বলার পর হাত তুলে তারপর অন্যান্য নামাজের মতো হাত বেঁধে নিতে হবে। হাত বেধে সানা পড়তে হবে।
আরবিতে সানা:
سُبْحَا نَكَ اَللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَا لَى جَدُّكَ وَجَلَّ ثَنَاءُكَ وَلاَ اِلَهَ غَيْرُكَ
বাংলা উচ্চারণ: সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারা কাসমুকা ওয়া তায়ালা জাদ্দুকা, ওয়া জাল্লা ছানাউকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।
সানা পড়ার পরে তাকবির বলে দরুদ শরীফ পড়তে হবে যেটা সাধারণ নামাজে তাশাহুদের পর পড়া হয়।
দরুদ শরীফ:
للَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى اِبْرَا هِيْمَ وَعَلَى اَلِ اِبْرَ اهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ- اَللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى اِبْرَا هِيْمَ وَعَلَى اَلِ اِبْرَا هِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌمَّجِيْدٌ
বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাল্লিআলা মুহাম্মাদি ওয়া আলা আলি মুম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহিমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহিমা ইন্নাকা হামিদুম্মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইব্রাহিমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহিমা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ।
দরুদ শরীফ পড়ার পর তৃতীয় তাকবির আদায় করে জানাজার দোয়া পড়তে হয়।
জানাজার দোয়া:
اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِ نَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيْرِنَا وَكَبِيْرِنَا وَذَكَرِنَا وَاُنْثَنَا اَللّٰهُمَّ مَنْ اَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَاَحْيِهِ عَلٰى الْاِسْلاَمِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلٰى الْاِيْمَانِ
বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগ ফিরলি হায়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়িবিনা ওয়া সাগীরিনা ওয়া কাবীরিনা ওয়া যাকারিনা ওয়া উনছানা। আল্লাহুম্মা মান আহইয়াহতাহু মিন্না, ফাআহয়িহী আলাল ইসলামি ওয়া মান তাওয়াফ ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফফাহ আলাল ইমান।
তবে নাবালক ছেলের ক্ষেত্রে জানাজার দোয়া পড়তে হবে-
اَللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرْطًا وْاَجْعَلْهُ لَنَا اَجْرًا وَذُخْرًا وَاجْعَلْهُ لَنَا شَافِعًا وَمُشَفَّعًا
বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাজ আল হুলানা ফারতাও ওয়াজ আল হুলানা আজরাও ওয়া যুখরাঁও ওয়াজ আলহুলানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ্ফায়ান।
নাবালিকা মেয়ের ক্ষেত্রে জানাজার দোয়া পড়তে হবে,
اللَّهُمَّ اجْعَلْهَا لَنَا فَرْطًا وَاجْعَلْهَا لَنَا اَجْرًا وَذُخْرًاوَاجْعَلْهَا لَنَا شَافِعَةً وَمُشَفَّعَة
বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাজ আলহা লানা ফারতাও ওয়াজ আলহা লানা আজরাও ওয়া যুখরাও ওয়াজ আলহা লানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ ফায়ান।
এরপর চতুর্থ তাকবির দিয়ে একটু নীরব থেকে ডানে এবং বামে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে।
সূত্র: ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৫১; হাশিয়াতুশ শুরুমবুলালী আলাদ্দুরার ১/১৬৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৩; মাজমাউল আনহুর ১/২৭৩।
লেখক: উস্তাযুল হাদিস, জামিয়া মিফতাহুল উলূম নেত্রকোনা
আরও পড়ুন