প্রকাশ: ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ইসলাম প্রচারে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর গৃহীত নীতির ভিত্তি ছিল গভীর করুণা ও সহানুভূতি; অভিশাপ বা প্রতিশোধ নয়। যারা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, তাদের প্রতিও তিনি রহমতের হাত বাড়িয়েছিলেন। দাওস গোত্রের ঘটনা এবং তুফায়ল ইবনে আমর আদ-দাওসির কাহিনি দাওয়াতের কার্যকর পদ্ধতির একটি জ্বলন্ত উদাহরণ।
দাওস গোত্রের সদস্যরা ইসলাম মানতে না চাইলে তুফায়ল এসে রাসুলের কাছে তাদের বিরুদ্ধে দোয়া করতে বলেন। কিন্তু নবীজি একটি ভিন্ন পথ বেছে নেন।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, তুফায়ল ইবনে আমর দাওসি একবার আল্লাহর রাসুলের কাছে এসে বলেন, ‘দাওস অবাধ্যতা করেছে এবং (ইসলাম) প্রত্যাখ্যান করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন।’
আমি অভিশাপকারী হিসেবে প্রেরিত হইনি, বরং আমি রহমত হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৫৯৯
মানুষ ভেবেছিল রাসুল (সা.) অভিশাপ দেবেন এবং বলবেন, ‘দাওস ধ্বংস হয়ে যাক!’ কিন্তু তিনি কিবলার দিকে ফিরে হাত তুলে বললেন, ‘হে আল্লাহ, দাওসকে হিদায়াত দিন এবং তাদের ইসলামের পথে নিয়ে আসুন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ৭,৫৪২)
একইভাবে, যখন রাসুল (সা.)-কে মুশরিকদের বিরুদ্ধে অভিশাপ দিতে বলা হয়েছিল, তিনি বলেছিলেন, ‘আমি অভিশাপকারী হিসেবে প্রেরিত হইনি, বরং আমি রহমত হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৫৯৯)
তুফায়ল ইবনে আমর দাওসি মক্কায় ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি তাঁর গোত্রে ফিরে গিয়ে প্রথমে তাঁর বাবা-মাকে ইসলামের দাওয়াত দেন। তাঁর বাবা ইসলাম গ্রহণ করলেও মা তা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি তাঁর গোত্রের অন্যান্য লোকদের দাওয়াত দেন, কিন্তু শুধু আবু হুরায়রা (রা.) ছাড়া কেউ সাড়া দেয় নি।
‘তোমার গোত্রের কাছে ফিরে যাও, তাদের আল্লাহর দিকে ডাকো এবং তাদের সঙ্গে সৌজন্যের আচরণ করো।ইবনে হিশাম, আস-সিরাহ আন-নাবাবিয়্যাহ, পৃষ্ঠা ২৩০
হতাশ হয়ে তুফায়ল রাসুল (সা.)-এর কাছে ফিরে আসেন এবং তাঁর গোত্রের বিরুদ্ধে দোয়া করতে বলেন। কিন্তু আল্লাহর রাসুল অভিশাপের পরিবর্তে তাদের হিদায়াতের জন্য দোয়া করেন এবং তুফায়লকে বলেন, ‘তোমার গোত্রের কাছে ফিরে যাও, তাদের আল্লাহর দিকে ডাকো এবং তাদের সঙ্গে সৌজন্যের আচরণ করো।’ (ইবনে হিশাম, আস-সিরাহ আন-নাবাবিয়্যাহ , পৃষ্ঠা ২৩০, দারুল মা’রিফা: ১৯৯৮)
তুফায়ল তাঁর গোত্রে ফিরে গিয়ে ধৈর্যের সঙ্গে দাওয়াত চালিয়ে যান। পরবর্তী সময়ে তিনি খায়বারে রাসুল (সা.)-এর কাছে ফিরে আসেন, সঙ্গে নিয়ে আসেন দাওস গোত্রের সত্তর থেকে আশি পরিবার, যারা ইসলাম গ্রহণ করেছিল। রাসুল (সা.) খায়বারের যুদ্ধলব্ধ সম্পদের অংশ তাদের দেন এবং তাদের মুসলিমদের সঙ্গে একীভূত করেন। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, ধৈর্য এবং সৌজন্য দাওয়াতের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।
দাওস গোত্রের এই কাহিনি সকল প্রচারক, শিক্ষক ও উপদেশদাতার জন্য গভীর শিক্ষা বহন করে। দাওয়াতের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণ হলো করুণা ও সহানুভূতি। অনেক সময় মানুষ অজ্ঞতা বা কামনার প্রভাবে ভালো পথ থেকে বিচ্যুত হয়।
তাই হৃদয় কঠিন, পাপে লিপ্ত বা আনুগত্য থেকে দূরে থাকা মানুষদের প্রতি করুণা দেখানো উচিত। তাদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করুন, সৌজন্য ও নম্রতার সাথে দাওয়াত দিন এবং তাদের ক্ষতি সহ্য করুন। হয়তো আল্লাহ আপনার প্রচেষ্টায় তাদের হৃদয় খুলে দেবেন।
দাওয়াতের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণ হলো করুণা ও সহানুভূতি। অনেক সময় মানুষ অজ্ঞতা বা কামনার প্রভাবে ভালো পথ থেকে বিচ্যুত হয়।
দাওয়াতের ক্ষেত্রে অধৈর্য বা অহংকার বিপজ্জনক। যদি কেউ আপনার পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করে, তবে বিরক্ত বা ক্রুদ্ধ হবেন না। জুনদুব (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে আছে, এক ব্যক্তি কাউকে বারবার উপদেশ দিয়েছিলেন। যখন সে বলল, ‘আমাকে ছেড়ে দাও, তুমি আমার অভিভাবক নও,’ তখন উপদেশদাতা ক্রুদ্ধ হয়ে বলেছিলেন, ‘আল্লাহর কসম, আল্লাহ অমুককে ক্ষমা করবেন না।’ আল্লাহ তখন বললেন, ‘কে সে, যে আমার ওপর ধারণা করে যে আমি অমুককে ক্ষমা করব না? আমি অমুককে ক্ষমা করেছি এবং তোমার আমল বাতিল করেছি।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৬২০)
তাই আমাদের দাওয়াতে সবসময় নম্রতা ও করুণা প্রকাশ করতে হবে এবং অধৈর্য বা অহংকার থেকে দূরে থাকতে হবে। আল্লাহ আমাদের দাওয়াতে সফলতা দিন এবং তাঁর রহমতের ছায়ায় রাখুন। আমিন।