প্রকাশ: ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
মানুষের জীবনে দিকনির্দেশনার প্রয়োজন অপরিসীম। সঠিক ও ভুলের মাঝে পার্থক্য করা, সঠিক পথ বেছে নেওয়া এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকে অগ্রসর হওয়াকে বলা হয় হেদায়াত। কোরআনে হেদায়াত শব্দটি বারবার এসেছে। আসলে হেদায়াত মানে কেবল পথ চিনিয়ে দেওয়া নয়; বরং মানুষকে সত্য পথে দৃঢ় রাখার জন্য আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ।
আরবি ‘হিদায়াহ’ শব্দ থেকে এসেছে হেদায়াত। এর আদি অর্থ,
পথ দেখানো
দিকনির্দেশনা দেওয়া
সঠিক পথে পরিচালনা করা
ইসলামি পরিভাষায় হেদায়াত মানে হলো আল্লাহর দেওয়া দিকনির্দেশনা, যা মানুষকে সঠিক বিশ্বাস ও আমলের পথে স্থির রাখে।
কোরআনের বহু স্থানে হেদায়াতের গুরুত্ব বর্ণিত হয়েছে। যেমন:
১. “এটাই সেই কিতাব, এতে কোনো সন্দেহ নেই; এটা মুত্তাকিদের জন্য হেদায়াত।” (সুরা বাকারাহ, আয়াত: ২)
২. “যাকে আল্লাহ হেদায়াত দেন, সে-ই সঠিক পথে আসে; আর যাকে তিনি বিভ্রান্ত করেন, তুমি তার জন্য কখনো সাহায্যকারী পাবে না।” (সুরা কাহফ, আয়াত: ১৭)
৩. “বলুন, নিশ্চয়ই আল্লাহর হেদায়াতই হলো প্রকৃত হেদায়াত।” (সুরা আনআম, আয়াত: ৭১)
অতএব, প্রকৃত হেদায়াত কেবল আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে।
আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন: “যার জন্য আল্লাহ কল্যাণ চান, তাকে তিনি দ্বীনের গভীর জ্ঞান দেন।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭১; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১০৩৭)
অন্য হাদিসে তিনি দোয়া করেছেন: “হে আল্লাহ, আমাকে হেদায়াত দিন এবং সঠিক হেদায়াত প্রদান করুন।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৭২৫)
এ থেকে বোঝা যায়, হেদায়াত আল্লাহর এক বিশেষ দান, যা ছাড়া মানুষ পথভ্রষ্ট হয়ে যায়।
আলেমগণ হেদায়াতকে সাধারণত দুটি ভাগে ভাগ করেছেন—
১. দিশা দেখানো: যা নবী-রাসুল ও আলেমরা মানুষের কাছে পৌঁছে দেন। যেমন,সঠিক পথ বোঝানো। একে পরিভাষায় বলে, ‘হিদায়াতুল ইরশাদ’।
২. সত্য পথে স্থির রাখা : এটি কেবল আল্লাহর হাতে। মানুষ যতই দাওয়াত পাক, যদি আল্লাহ তাওফিক না দেন তবে সে হেদায়াত লাভ করতে পারবে না। একে পরিভাষায় বলে, ‘হিদায়াতুত তাওফিক’।
কোরআনে আল্লাহ বলেন: “নিশ্চয়ই তুমি (হে নবী) যাকে ইচ্ছা তাকে হেদায়াত দিতে পারবে না; বরং আল্লাহ যাকে চান তাকেই হেদায়াত দেন।” (সুরা কাসাস, আয়াত: ৫৬)
হেদায়াতপ্রাপ্ত: ইমানদার, নেক আমলকারী, আল্লাহর ভয় ও ভালোবাসায় পরিচালিত ব্যক্তি।
পথভ্রষ্ট: যে সত্য জানে অথচ তা মানে না, অথবা ভুল পথে অটল থাকে।
কোরআনের সূচনা সুরা ফাতিহাতেই আমরা প্রতিদিন আল্লাহর কাছে দোয়া করি: “আমাদের সরল পথে পরিচালিত করুন—যাদেরকে আপনি নেয়ামত দান করেছেন তাদের পথ, তাদের পথ নয় যাদের ওপর গজব হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট।” (সুরা ফাতিহা, আয়াত: ৬-৭)
অন্তরে প্রশান্তি ও আল্লাহর ওপর ভরসা জন্মায়।
ইবাদত ও নেক আমলে স্থির থাকা যায়।
দুনিয়া ও আখিরাতে মুক্তি লাভ হয়।
হেদায়াত হলো আল্লাহর বিশেষ দান, যা মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করে এবং সত্যের ওপর দৃঢ় রাখে। কোরআন ও হাদিসে বারবার এর গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। একজন মুমিনের জীবনের সবচেয়ে বড় চাওয়া হওয়া উচিত হেদায়াত। তাই আমাদের সবার কর্তব্য হলো প্রতিদিন আল্লাহর কাছে দোয়া করা: “হে আল্লাহ! আমাদেরকে হেদায়াত দিন এবং সঠিক পথে স্থির রাখুন।”