প্রকাশ: ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

কোরআনুল কারিমের অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
সুরা: আনআম, আয়াত : ৩৩-৩৪
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে
قَدۡ نَعۡلَمُ اِنَّهٗ لَیَحۡزُنُكَ الَّذِیۡ یَقُوۡلُوۡنَ فَاِنَّهُمۡ لَا یُكَذِّبُوۡنَكَ وَ لٰكِنَّ الظّٰلِمِیۡنَ بِاٰیٰتِ اللّٰهِ یَجۡحَدُوۡنَ ﴿۳۳﴾
وَ لَقَدۡ كُذِّبَتۡ رُسُلٌ مِّنۡ قَبۡلِكَ فَصَبَرُوۡا عَلٰی مَا كُذِّبُوۡا وَ اُوۡذُوۡا حَتّٰۤی اَتٰهُمۡ نَصۡرُنَا ۚ وَ لَا مُبَدِّلَ لِكَلِمٰتِ اللّٰهِ ۚ وَ لَقَدۡ جَآءَكَ مِنۡ نَّبَاِی الۡمُرۡسَلِیۡنَ ﴿۳۴﴾
সরল অনুবাদ
(৩৩) আমরা অবশ্য জানি যে, তারা যা বলে তা আপনাকে নিশ্চিতই কষ্ট দেয়; কিন্তু তারা আপনার প্রতি মিথ্যারোপ করে না, বরং যালিমরা আল্লাহর আয়াতগুলোকে অস্বীকার করে।
(৩৪) আর আপনার আগেও অনেক রাসুলের উপর মিথ্যারোপ করা হয়েছিল; কিন্তু তাদের ওপর মিথ্যারোপ করা ও কষ্ট দেওয়ার পরও তারা ধৈর্যধারণ করেছিল, যে পর্যন্ত না আমাদের সাহায্য তাদের কাছে এসেছে। আর আল্লাহর বাণীসমূহের কোনো পরিবর্তনকারী নেই। আর অবশ্যই রাসুলগণের কিছু সংবাদ আপনার কাছে এসেছে।
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
সুরা আনআমের এই ৩৩ নম্বর আয়াতে বলা হচ্ছে, যে রাসুল (সা.)-কে কাফেরদের মিথ্যা ভাবার কারণে যে দুঃখ-কষ্ট তাঁর হতো, তা দূরীকরণের এবং তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বলা হচ্ছে যে, এই মিথ্যা মনে করা আপনাকে নয় (আপনাকে তো তারা সত্যবাদী ও বিশ্বাসী মনে করে), বরং প্রকৃতপক্ষে তারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে মিথ্যা মনে করে এবং এটি একটি মস্ত বড় জুলুমের কাজ।
তিরমিজির একটি বর্ণনায় এসেছে যে, আবু জাহল একদা রাসুল (সা.)-কে বলল, ‘হে মুহাম্মাদ, আমরা তোমাকে নয়, বরং তুমি যা নিয়ে এসেছ সেটাকে মিথ্যা মনে করি। ’ মক্কার কাফেররা রাসুল (সা.)-কে আমানতদার, বিশ্বস্ত এবং সত্যবাদী মনে করত, কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁর রিসালাতের ওপর ঈমান আনা থেকে দূরেই ছিল।
বর্তমানেও যারা নবী রাসুল (সা.)-এর উত্তম চরিত্র, গুণ ও কৃতিত্ব, তাঁর অমায়িক ব্যবহার এবং তাঁর আমানত ও বিশ্বস্ততার কথাকে গা-মাথা দুলিয়ে বড় মোহিত হয়ে বর্ণনা করে এবং এ বিষয়ের ওপর সাহিত্য-শৈলী ভাষায় ও চমৎকার ভঙ্গিমায় বত্তৃজ্ঞতা, না’ত ও গজলও পরিবেশন করে, কিন্তু রাসুল (সা.)-এর আনুগত্য ও তাঁর অনুসরণ করার ব্যাপারে কুণ্ঠাবোধ ও শৈথিল্য করে।
তাঁর কথার ওপর ফিকহ, কিয়াস (অনুমান) এবং ইমামদের কথাকে প্রাধান্য দেয়। তাদের চিন্তা করা উচিত যে, তাদের অবলম্বন করা এ আচরণ কাদের সাথে মিলে যায়?
এর পর ৩৪ নং আয়াতে রাসুল (সা.)-কে অতিরিক্ত সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বলা হচ্ছে যে, আল্লাহর পয়গম্বরকে কাফেরদের অস্বীকার করার ঘটনা এটা প্রথম নয়, বরং পূর্বেও অনেক রাসুল এসেছিলেন যাদেরকে মিথ্যা মনে করা হয়েছে। অতএব তাদের অনুসরণ করে আপনিও ধৈর্য ও সাহসিকতা অবলম্বন করুন। যেভাবে তারা তাদেরকে মিথ্যাজ্ঞান ও কষ্টদানের সময় ধৈর্য ধারণ ও সাহসিকতা প্রদর্শন করেছিলেন।
যাতে আপনার কাছেও আমার সাহায্য-সহযোগিতা ঐভাবেই আসে, যেভাবে পূর্বের রাসুলদের কাছে আমার সাহায্য-সহযোগিতা এসেছে।
বাস্তবিক অর্থে হয়েছিলও তাই; প্রাথমিক পর্যায়ে কাফির সম্প্রদায় রাসুলকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, তাঁকে কষ্ট দিয়েছে এবং তাঁর জীবনকে সংকীর্ণ করে তুলেছে, কিন্তু পরিশেষে আল্লাহর সাহায্যে সফলতা এবং চিরন্তন মুক্তি তাঁর ভাগ্যেই জুটেছে। তাঁর অনুসারীগণই শেষ হাসি হেসেছে।