Advertisement

মুসলিম পরিবারে শিশুর ৫ দায়িত্ব

প্রথম আলো

প্রকাশ: ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি শিশুকে নিরাপদ পরিবেশে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণছবি: পেক্সেলস
শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি শিশুকে নিরাপদ পরিবেশে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণছবি: পেক্সেলস

শিশু আল্লাহ–তাআলার পক্ষ থেকে অমূল্য আমানত। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের সম্পদ ও সন্তান তো এক পরীক্ষা। আর আল্লাহর কাছে রয়েছে মহাপুরস্কার।’ (সুরা তাগাবুন, আয়াত: ১৫)

মুসলিম পরিবারে শিশুর যত্ন শুধু শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য নয়,; বরং তাদের আখলাক, ইমান ও দীনি শিক্ষায় সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলার জন্য অপরিহার্য। এই লেখায় আমরা ইসলামের নির্দেশনা, পারিবারিক ভূমিকা এবং আধুনিক যুগে শিশুর যত্নের কিছু প্রয়োজনীয় দিক নিয়ে আলোচনা করব।

ইসলামে শিশুর অধিকার জন্মের আগেই শুরু হয়। মাতা–পিতার সৎ চরিত্র, উত্তম আখলাক এবং নির্মল জীবনযাপন শিশুর ভবিষ্যতের ভিত্তি গড়ে দেয়।

ইসলামে শিশুর অধিকার জন্মের আগেই শুরু হয়। মাতা–পিতার সৎ চরিত্র, উত্তম আখলাক এবং নির্মল জীবনযাপন শিশুর ভবিষ্যতের ভিত্তি গড়ে দেয়।

গর্ভাবস্থায় যত্ন: নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা অন্তঃসত্ত্বা নারীর সঙ্গে সদাচার করো। কারণ, সে দুর্বল অবস্থায় থাকে।’ (সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩,০৮৪)

গর্ভাবস্থায় মায়ের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।

মানসিক প্রশান্তি: মায়ের মানসিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার জন্য পরিবারের সদস্যদের সহায়তা প্রয়োজন। শান্ত পরিবেশ শিশুর মানসিক গঠনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।

দোয়া ও তাওয়াক্কুল: গর্ভাবস্থায় কোরআন তিলাওয়াত, দুআ এবং আল্লাহর ওপর ভরসা শিশুর আধ্যাত্মিক বিকাশে সহায়ক।

অর্থবহ নামকরণ: নবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের সন্তানদের সুন্দর নাম দাও।’ (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯৪২)

সুন্দর ও অর্থবহ নাম শিশুর পরিচয় ও আত্মসম্মান গঠনে গুরুত্বপূর্ণ।

আকিকা ও সদকা: শিশুর জন্ম উপলক্ষে আকিকা আদায় করা সুন্নত। এটি শিশুর জন্য আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যম। এ ছাড়া গরিবদের মধ্যে সদকা বিতরণ সামাজিক দায়িত্ববোধ জাগায়।

ইসলাম শিশুর প্রথম শিক্ষা হিসেবে দীনি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেয়। এটি শিশুর আধ্যাত্মিক ও নৈতিক বিকাশ নিশ্চিত করে।

মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখা: আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবারকে সেই আগুন থেকে রক্ষা করো, যার ইন্ধন মানুষ ও পাথর।’ (সুরা তাহরিম, আয়াত: ৬)

তোমরা সাত বছর বয়সে সন্তানদের নামাজের নির্দেশ দাও।
সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯৫

শিশুকে ছোট থেকেই কোরআন, হাদিস ও নবীজি (সা.)-এর জীবনাদর্শ শেখানো জরুরি।

নামাজ শেখানো: নবী (সা.) বলেছেন: ‘তোমরা সাত বছর বয়সে সন্তানদের নামাজের নির্দেশ দাও।’ (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯৫)

নামাজ সৎ আচরণের শিক্ষা শিশুর চরিত্র গঠনে সহায়ক।

শিশুর যথাযথ খাদ্য, পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা মাতা–পিতা ইসলামি দায়িত্ব। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার পরিবারের ভরণ-পোষণ করে, সে সদকার সওয়াব পায়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,৩৫১; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,০০২)

শিশুর শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি তাকে নিরাপদ পরিবেশে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের উচিত শিশুর স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জন্য সর্বোচ্চ যত্ন নেওয়া।

নবীজি (সা.) শিশুদের প্রতি অতুলনীয় স্নেহ ও ভালোবাসা দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যে ছোটদের প্রতি দয়া করে না এবং বড়দের সম্মান করে না, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ১,৯১৯)

ইসলাম শিশুর লালন-পালনকে কেবল দায়িত্ব নয়; বরং একটি ইবাদত হিসেবে বিবেচনা করে।

পারিবারিক সহিংসতা থেকে শিশুকে দূরে রাখা এবং তাকে ভালোবাসা ও নিরাপত্তার পরিবেশ দেওয়া অত্যাবশ্যক। নবীজি (সা.) শিশুদের কোলে তুলে, আদর করে এবং তাদের সঙ্গে হাসিখুশি সময় কাটিয়ে তাদের মনে আনন্দ ও আত্মবিশ্বাস জাগিয়েছেন।

ইসলাম শিশুর লালন-পালনকে কেবল দায়িত্ব নয়; বরং একটি ইবাদত হিসেবে বিবেচনা করে। নবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই রক্ষক এবং প্রত্যেকেই তার দায়িত্বশীল বিষয় সম্পর্কে জবাবদিহি করবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৯৩; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৮২৯)

মুসলিম পরিবারে শিশুর যত্ন মানে তাদের শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক বিকাশ নিশ্চিত করা। জন্মের আগে থেকে সুন্দর নামকরণ, দ্বীনি শিক্ষা, ভরণপোষণ ও স্নেহময় পরিবেশের মাধ্যমে শিশুকে এমনভাবে গড়ে তোলা উচিত, যাতে তারা ইমান, আখলাক ও দায়িত্ববোধে সমৃদ্ধ হয়ে বেড়ে ওঠে।

mardia91@gmail.com

মারদিয়া মমতাজ: শিক্ষক, গবেষক, প্রকৌশলী

Lading . . .