Advertisement
  • হোম
  • ধর্ম
  • ঈদে মিলাদুন্নবী: বিশ্বনবীর জন্মদিনে শ্রদ্ধা ও ভালো...

ঈদে মিলাদুন্নবী: বিশ্বনবীর জন্মদিনে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার বার্তা

আমার সংবাদ

প্রকাশ: ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ঈদে মিলাদুন্নবী: বিশ্বনবীর জন্মদিনে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার বার্তা
ঈদে মিলাদুন্নবী: বিশ্বনবীর জন্মদিনে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার বার্তা

আজ পবিত্র ১২ই রবিউল আউয়াল। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্মদিন।

বিশ্বের সকল মুসলিম সম্প্রদায় আজ গভীর শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং আবেগের সাথে পালন করছে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। এই দিনটি মুসলমানদের কাছে শুধু জন্মোৎসব নয়, বরং হেদায়াতের আলোর আগমন, মানবতার মুক্তির দিন।

হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমন গোটা মানবজাতির জন্য ছিল মুক্তির বার্তা। তিনি এসেছিলেন এমন এক সময়ে, যখন আরব উপদ্বীপজুড়ে ছিল অজ্ঞতা, কুসংস্কার, নারীর প্রতি চরম অবিচার, সামাজিক বৈষম্য এবং শক্তিমানদের শোষণ।

বিশ্বনবী তার অতুলনীয় চরিত্র, ধৈর্য, ন্যায়বোধ এবং আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী জীবনযাপনের শিক্ষা দিয়ে মানবতার ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেন।

নবিজির জন্ম ও শৈশব

৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে, "আমূল ফিল" বা হাতির বছর নামে পরিচিত সময়ে মক্কার কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন মহানবী মুহাম্মদ (সা.)। তাঁর পিতা আব্দুল্লাহ তাঁর জন্মের আগেই ইন্তেকাল করেন এবং ছয় বছর বয়সে মাতা আমিনাও ইন্তেকাল করেন। এতিম হয়েও নবিজির শৈশব কেটেছে অত্যন্ত সততা, নৈতিকতা ও সুনামের মধ্যে।

কিশোর বয়স থেকেই তিনি "আল-আমিন" (বিশ্বাসযোগ্য) নামে পরিচিতি পান।

নবুওয়াত প্রাপ্তি ও ইসলামের দাওয়াত

৪০ বছর বয়সে হেরা গুহায় ইবাদতের সময় তিনি আল্লাহর কাছ থেকে প্রথম ওহি প্রাপ্ত হন। এরপর তিনি মানবজাতির কাছে তাওহিদের দাওয়াত পৌঁছে দিতে শুরু করেন। তিনি বলতেন, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর”—কোন মাবুদ নেই আল্লাহ ছাড়া, আর মুহাম্মাদ তাঁর রাসূল।

ন্যায় ও মানবতার পাঠ

হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনধারা মানবতার জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

তিনি বলতেন, "সর্বোত্তম মানুষ সে-ই, যে মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে।"

তিনি নারী, শিশু, এতিম, দাস—সবার অধিকারের কথা বলেছেন। তিনি ক্ষমা ও শান্তির বার্তা প্রচার করেছেন। তাঁর চরিত্রে আমরা পাই অসীম ধৈর্য, বিনয়, ন্যায়পরায়ণতা এবং করুণা।

মিলাদুন্নবীর তাৎপর্য

ঈদে মিলাদুন্নবী শুধু একটি উৎসব নয়, বরং এটি আত্মশুদ্ধি ও নবিজির শিক্ষাকে জীবনে ধারণ করার অঙ্গীকারের দিন। এ দিন মুসলমানরা কোরআন তিলাওয়াত, মিলাদ মাহফিল, দোয়া মাহফিল, গরিবদের মাঝে খাবার বিতরণসহ নানা ইবাদত ও সামাজিক কল্যাণমূলক কাজ করে থাকে। অনেক স্থানে নবিজির জীবনী নিয়ে আলোচনা হয়, যাতে মানুষ তাঁর আদর্শ অনুসরণ করতে উদ্বুদ্ধ হয়।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে নবীজির শিক্ষা

আজকের বিশ্বে যখন যুদ্ধ, হিংসা, বিভেদ ও সামাজিক অবিচার বাড়ছে, তখন নবিজির শিক্ষা আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। তাঁর জীবন আমাদের শেখায়—ধৈর্য, ন্যায়, সহমর্মিতা এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান কতটা জরুরি। মুসলিম সমাজ যদি তাঁর আদর্শকে ধারণ করে, তবে বিশ্বে শান্তি ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

বাংলাদেশে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন

বাংলাদেশে আজ সরকারি ছুটি। দেশের মসজিদ-মাদ্রাসায় বিশেষ মিলাদ মাহফিল, দোয়া অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নবীজির জন্মদিনকে কেন্দ্র করে গরিবদের মাঝে খাবার ও পোশাক বিতরণ করছে। রাজধানীসহ সারাদেশে জেলা শহরে ইসলামি সংগঠনগুলোর উদ্যোগে শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ও কিরাত মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা এ দিন উপলক্ষ্যে পৃথক বাণী প্রদান করেছেন।

আমাদের করণীয়

ঈদে মিলাদুন্নবীর শিক্ষা আমাদের শুধু উৎসবে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত নয়। প্রতিদিনের জীবনে সততা, ন্যায়বিচার, সৎ উপার্জন, প্রতিবেশীর হক আদায়, দানশীলতা, মিথ্যা থেকে বিরত থাকা—এসব গুণাবলি লালন করতে হবে। তাহলেই আমরা সত্যিকারের নবি প্রেমিক হতে পারব।

উল্লেখ্য, আজকের এই মাহেন্দ্রক্ষণে আমরা সবাই প্রার্থনা করি, আল্লাহ তা‘আলা যেন প্রিয় নবিজির (সা.) শিক্ষা আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাস্তবায়িত করার তৌফিক দেন। মানবতার কল্যাণে, শান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে আমাদেরকে শক্তি দান করেন। ঈদে মিলাদুন্নবীর প্রকৃত তাৎপর্যই হলো—নবিজির আদর্শকে ধারণ করে একটি সুন্দর, ন্যায়ভিত্তিক ও শান্তিময় সমাজ গঠন করা।

ইএইচ

Lading . . .