আমি চাই মানুষ আস্তে আস্তে আমাকে ভুলে যাক: তাহসান
প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

মেলবোর্নের কনসার্টে হঠাৎ আপনি বললেন, ‘এটা শেষ ট্যুর।’ দর্শকেরা যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না। আপনার মুখে শোনা সেই ব্যাখ্যাটা আরেকবার শুনতে চাই—কখন মনে হলো, এবার থামা দরকার?
মেলবোর্নের কনসার্টে হঠাৎ আপনি বললেন, ‘এটা শেষ ট্যুর।’ দর্শকেরা যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না। আপনার মুখে শোনা সেই ব্যাখ্যাটা আরেকবার শুনতে চাই—কখন মনে হলো, এবার থামা দরকার?
তাহসান খান : হ্যাঁ, এটাই শেষ কনসার্ট ট্যুর। ঢাকায় দু-একটা ইভেন্ট আগে থেকেই কমিটমেন্ট করা আছে। সেগুলো শেষ করেই সংগীতজীবনের ইতি টানছি। অনেক দিন থেকেই মনে হচ্ছিল, বিদায় নেওয়া প্রয়োজন। এবার সময়টা ঠিক মনে হচ্ছে।
তাহসান খান : হ্যাঁ, এটাই শেষ কনসার্ট ট্যুর। ঢাকায় দু-একটা ইভেন্ট আগে থেকেই কমিটমেন্ট করা আছে। সেগুলো শেষ করেই সংগীতজীবনের ইতি টানছি। অনেক দিন থেকেই মনে হচ্ছিল, বিদায় নেওয়া প্রয়োজন। এবার সময়টা ঠিক মনে হচ্ছে।
প্রথম আলো :
প্রথম আলো :দেশে-বিদেশে এখনো আপনার গান নিয়ে এত উচ্ছ্বাস, এত চাহিদা। জনপ্রিয়তার চূড়ায় দাঁড়িয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া নিশ্চয়ই সহজ ছিল না। মন তখন কী বলছিল?
তাহসান খান : সূর্যের মধ্যগগনে থাকা অবস্থায় প্রস্থান শ্রেয়, এই বিশ্বাসে আমি বিশ্বাসী।
প্রথম আলো :আপনি বলেছিলেন, কিছু নতুন গানও বানাচ্ছেন। তাহলে ‘ক্যারিয়ার গুটিয়ে নেওয়া’ বলতে কী বোঝাতে চেয়েছেন—গান একেবারে ছাড়ছেন, নাকি শুধু লাইভ পারফরম্যান্স থেকে একটু দূরে সরে যাচ্ছেন?
আপনি বলেছিলেন, কিছু নতুন গানও বানাচ্ছেন। তাহলে ‘ক্যারিয়ার গুটিয়ে নেওয়া’ বলতে কী বোঝাতে চেয়েছেন—গান একেবারে ছাড়ছেন, নাকি শুধু লাইভ পারফরম্যান্স থেকে একটু দূরে সরে যাচ্ছেন?
তাহসান খান : তিনটা গান বানানো আছে। কিন্তু আর রিলিজ করব না। ‘পোরসেলিনা তাহসান’স প্লেলিস্ট’ প্রকল্পের শেষ গানটা হয়তো শুধু প্রকাশিত হবে। তারপর শেষ। এরপর আর কোনো নতুন গান প্রকাশ করব না।
তাহসান খান : তিনটা গান বানানো আছে। কিন্তু আর রিলিজ করব না। ‘পোরসেলিনা তাহসান’স প্লেলিস্ট’ প্রকল্পের শেষ গানটা হয়তো শুধু প্রকাশিত হবে। তারপর শেষ। এরপর আর কোনো নতুন গান প্রকাশ করব না।
প্রথম আলো :
প্রথম আলো :মেলবোর্নের মঞ্চে বলছিলেন, গান থেকে সরে আসাটা খুবই স্বাভাবিক। এটা কি সময়ের দাবি ছিল, নাকি এর পেছনে আপনার নিজের কোনো দর্শন কাজ করেছে?
তাহসান খান : জীবনদর্শনে পরিবর্তনটা মুখ্য। কিন্তু তা নিয়ে ঘটা করে কিছু বলতে চাই না।
প্রথম আলো :
প্রথম আলো :মঞ্চে বলেছিলেন, মেয়ের জন্যই এ সিদ্ধান্ত। মেয়ের বড় হয়ে ওঠা আপনাকে কীভাবে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে?
তাহসান খান : মেয়ের কথাটা এসেছিল বয়স বোঝাতে। দাড়ি পেকে যাচ্ছে সব, এখন আর নিজের কাছেই প্রেমের গান গেয়ে মঞ্চ মাতানোটা মানানসই লাগে না। অনেকের জন্য হয়তো সহজ, আমার জন্য একটু বেমানান।
প্রথম আলো :পরিবার আর স্টেজ—দুটোর ভারসাম্য রাখা কি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কঠিন হয়ে যাচ্ছিল?
পরিবার আর স্টেজ—দুটোর ভারসাম্য রাখা কি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কঠিন হয়ে যাচ্ছিল?
তাহসান খান : না, তেমন কিছুই নয়। তবে পাবলিক ফিগার হিসেবে বেঁচে থাকার ভারটা অসম্ভব বেশি। তা আর নিতে চাই না।
তাহসান খান : না, তেমন কিছুই নয়। তবে পাবলিক ফিগার হিসেবে বেঁচে থাকার ভারটা অসম্ভব বেশি। তা আর নিতে চাই না।
প্রথম আলো :
প্রথম আলো :আপনি বলেছিলেন, ‘মঞ্চে লাফালাফি করে গান গাওয়ার মানে হয় না।’ এটা কি বয়স ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাওয়ার ফল?
তাহসান খান : মঞ্চে অথবা মঞ্চের বাইরে যতটুকু দেওয়ার দিয়েছি। পেয়েছিও অনেক বেশি মানুষের ভালোবাসা। আর কিছু দেওয়ার নেই মনে হচ্ছে। আর ভালোবাসা এই ২৫ বছরে এত পেয়েছি, সেই ভালোবাসার ভান্ডার নিয়েই বেঁচে থাকতে পারব। নতুন করে আর ভালোবাসা না পেলেও হবে।
প্রথম আলো :
প্রথম আলো :আপনি তো শুধু গান গাইছেন না, লিখছেন, সুর করছেন—এসব চালিয়ে যাবেন তো?
তাহসান খান : না। আপাতত তেমন কিছুই ভাবিনি।
প্রথম আলো :
প্রথম আলো :কনসার্ট না হলেও স্টুডিও বা অনলাইনে আপনাকে নিয়মিত শোনা যাবে কি?
তাহসান খান : না, শোনা যাবে না। সংগীতজীবনের ইতি টানছি তো।
প্রথম আলো :প্রায় কোটি অনুসারীর ফেসবুক পেজ এবং ৩৫ লাখের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টেও আপনাকে দেখা যাচ্ছে না, এ নিয়ে যদি কিছু বলতেন?
প্রায় কোটি অনুসারীর ফেসবুক পেজ এবং ৩৫ লাখের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টেও আপনাকে দেখা যাচ্ছে না, এ নিয়ে যদি কিছু বলতেন?
তাহসান খান : অবসরে যাওয়া মানুষের এসবের প্রয়োজন নেই। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অসম্ভব টক্সিক। ভালোটুকুর চেয়ে খারাপের প্রচার এত বেশি যে অনেক দিন থেকেই অসম্ভব বিরক্ত লাগছিল। আমি চাই মানুষ আমাকে আস্তে আস্তে ভুলে যাক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে থেকে গেলে তো ভুলতে সময় লাগবে।
তাহসান খান : অবসরে যাওয়া মানুষের এসবের প্রয়োজন নেই। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অসম্ভব টক্সিক। ভালোটুকুর চেয়ে খারাপের প্রচার এত বেশি যে অনেক দিন থেকেই অসম্ভব বিরক্ত লাগছিল। আমি চাই মানুষ আমাকে আস্তে আস্তে ভুলে যাক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে থেকে গেলে তো ভুলতে সময় লাগবে।
প্রথম আলো :
প্রথম আলো :ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম কি একেবারে মুছে দিয়েছেন, নাকি নিষ্ক্রিয় করে রেখেছেন?
তাহসান খান : ডিঅ্যাকটিভেটেড।
প্রথম আলো :
প্রথম আলো :এত বছরের এই সংগীতযাত্রা—পেছন ফিরে তাকালে কোন মুহূর্তটা সবচেয়ে মনে গেঁথে আছে?
তাহসান খান : এত এত স্মৃতি, মঞ্চে দাঁড়িয়ে হাজারো মানুষের সঙ্গে একসঙ্গে গান গাওয়াটাই সবচেয়ে বেশি বেশি মিস করব। সেই সময়গুলোই গেঁথে আছে।
প্রথম আলো :এমন কোনো আফসোস কি থেকে গেছে, যা করতে চেয়েছিলেন কিন্তু হয়নি?
এমন কোনো আফসোস কি থেকে গেছে, যা করতে চেয়েছিলেন কিন্তু হয়নি?
তাহসান খান : নাহ্, কোনো আফসোস নেই। প্রত্যাশার চেয়ে প্রাপ্তি এত বেশি যে মাঝেমধ্যে বিশ্বাসই হয় না। এত অসাধারণ জীবন আমাকে এ দেশের গানপ্রেমী মানুষ উপহার দিয়েছেন। ২৫ বছরে এত এত গান মানুষ নিজের করে নিয়েছেন, তারপর আর কি অপ্রাপ্তি থাকতে পারে? শুধুই কৃতজ্ঞতায় ভরা জীবন।
তাহসান খান : নাহ্, কোনো আফসোস নেই। প্রত্যাশার চেয়ে প্রাপ্তি এত বেশি যে মাঝেমধ্যে বিশ্বাসই হয় না। এত অসাধারণ জীবন আমাকে এ দেশের গানপ্রেমী মানুষ উপহার দিয়েছেন। ২৫ বছরে এত এত গান মানুষ নিজের করে নিয়েছেন, তারপর আর কি অপ্রাপ্তি থাকতে পারে? শুধুই কৃতজ্ঞতায় ভরা জীবন।
প্রথম আলো :
প্রথম আলো :অভিনয়েও তো আপনাকে দেখা যায়। এরপর ভক্তরা আপনাকে কোথায় দেখতে পাবেন—অভিনয়ে, টিভিতে, নাকি একেবারেই অফস্ক্রিন?
তাহসান খান : অভিনয়ে আরও আগে ইতি টেনেছি। এবার গানের ইতি টানলাম।
প্রথম আলো :
প্রথম আলো :মিউজিক ছাড়া অন্য কোনো কাজ বা শখে সময় দেওয়ার পরিকল্পনা আছে কি এখন? কীভাবে আগামীর জীবনের পরিকল্পনা করেছেন? আপনাকে কি বিনোদন অঙ্গনের কোনো আড্ডায়ও আস্তে আস্তে দেখা যাবে না?
তাহসান খান : বিনোদন অঙ্গনের আড্ডায় আর নেই। এটাই আমার শেষ সাক্ষাৎকার হয়ে থাকুক। অন্য কিছু পরিকল্পনা আছে। কিন্তু সেগুলো একান্তই ব্যক্তিগত। সেই বিষয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে বলতে চাই না। একটু বেশি ফিলসফিক্যাল শোনাবে।
প্রথম আলো :ভক্তরা জানতে চান, কোনো একদিন আবার মঞ্চে ফিরবেন কি?
ভক্তরা জানতে চান, কোনো একদিন আবার মঞ্চে ফিরবেন কি?
তাহসান খান : অসম্ভব মিস তো করবই। কিন্তু বিদায় মানে তো বিদায়।
তাহসান খান : অসম্ভব মিস তো করবই। কিন্তু বিদায় মানে তো বিদায়।
প্রথম আলো :
প্রথম আলো :যাঁরা এত বছর আপনার গান শুনে বড় হয়েছেন, ভালোবেসেছেন, তাঁদের জন্য আপনার বার্তা কী হবে?
তাহসান খান : ‘ধন্যবাদ তোমায়, সুরের বন্ধু ভেবেছ, তুচ্ছ এই মানবে, কিছু খুঁজে পেয়েছ’—একটা গান ছিল ‘পাথরের গল্পকার’ গানে; সেই গানটার দুটো লাইনই হয়তো বলতে চাই।
প্রথম আলো :
প্রথম আলো :অনেকে আপনার এ সিদ্ধান্তে কষ্ট পাচ্ছেন। তাঁদের কী বলতে চান?
তাহসান খান : সত্যি বলতে, কষ্ট আমারই বেশি হচ্ছে, যে গানকে জীবনের সবচেয়ে বেশি ভালোবেসেছি, সেই গান ছেড়ে দেওয়াটা মোটেও সহজ সিদ্ধান্ত ছিল না। কিন্তু জীবনের কিছু অভিজ্ঞতা আর উপলব্ধি এতটাই তীব্র আর করুণ ছিল যে এই প্রস্থানই একমাত্র পথ, যা আমার জন্য খোলা। শুধু সাধারণ একটা জীবনে ফিরে যেতে চাই।
প্রথম আলো :
প্রথম আলো :অস্ট্রেলিয়ার কনসার্ট শেষে কোথায় যাবেন, বাংলাদেশ নাকি যুক্তরাষ্ট্রে?
তাহসান খান : বাংলাদেশে আসব। সেখানকার কমিটমেন্ট শেষ করব।