Advertisement

নতুন দিনে নতুন ভাবে

প্রথম আলো

প্রকাশ: ১৮ আগস্ট, ২০২৫

‘ক্লোজআপ কাছে আসার গল্প’র ‘রি: পেয়ার’ নাটকে প্রিয়ন্তী উর্বী ও জুনায়েদ বোগদাদী। ছবি: আয়োজকদের সৌজন্যে
‘ক্লোজআপ কাছে আসার গল্প’র ‘রি: পেয়ার’ নাটকে প্রিয়ন্তী উর্বী ও জুনায়েদ বোগদাদী। ছবি: আয়োজকদের সৌজন্যে

ফেব্রুয়ারি মানেই ‘কাছে আসার গল্প’, টেলিভিশনের পর্দায় ভালোবাসার গল্পের আয়োজন। তিন নাটকের জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় থাকতেন দর্শকেরা। ২০১১ সালে এর যাত্রা শুরু হয়। এত বছরেও এর আবেদন একটুও কমেনি, বরং বেড়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ আয়োজন হয়েছে যুগোপযোগী। যুগ পেরিয়েছে। বদলেছে সময়, বদলেছে দর্শকের অভ্যাসও ও রুচি। তাই নতুন পথে হাঁটার উদ্যোগ নেয় ক্লোজআপ বাংলাদেশ। টেলিভিশনের পর্দা ছেড়ে এখন তা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে, তিনটি নাটকের পরিবর্তে প্রতি মাসেই ইউটিউবে আসছে একটি করে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। শুরুর সময়ে হয়তো কেউ ভাবেনি, এক যুগের বেশি সময়ের জার্নিতে গল্প বলার ধরন এতটা বদলে যাবে।

ডিজিটালের পথে নতুন যাত্রা
২০২৪ সাল থেকে বদলে যায় ফরম্যাট। টেলিভিশনের পর্দা ছেড়ে ‘কাছে আসার গল্প’ প্রথমবার প্রকাশ পায় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। টেলিভিশনের মতোই এখানেও ব্যাপক সাড়া মেলে। এরপর থেকে প্রতি মাসেই একটি করে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে। নতুন এ ফরম্যাটে এখন পর্যন্ত ১৩টি গল্প মুক্তি পেয়েছে। ১১ জন নির্মাতার পরিচালনায় যেখানে অভিনয় করেছেন ১১ জন অভিনেতা, ১৩ জন অভিনেত্রী। নতুন এ ফরম্যাটের লক্ষ্য একটাই—ডিজিটাল প্রজন্মের কাছে সারা বছর ধরে পৌঁছে যাওয়া।

শিল্পীদের অভিজ্ঞতা
নতুন ফরম্যাট শিল্পীদের জন্য এনেছে আলাদা অভিজ্ঞতা। গত মে মাসে মুক্তি পায় নাজমুল নবীনের পরিচালনায় ‘কাছে আসার গল্প’ ‘কন্ট্রোল প্লাস জেড’। এর প্রধান দুই চরিত্রে অভিনয় করেন তরুণ মুখ পার্থ শেখ ও নওবা তাহিয়া। তিন মাসে ইউটিউবে এটির ভিউ প্রায় ৭৮ লাখ। কাছে আসার গল্পে অভিনয় ও নতুন ফরম্যাট নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে অভিজ্ঞতা ভাগ করেছেন পার্থ শেখ। তিনি জানিয়েছেন, ডিজিটাল মাধ্যমে মুক্তির ফলে সরাসরি দর্শকের মন্তব্য দেখতে পারছেন তিনি। অভিনেতা বলেন, ‘বরাবরই কাছে আসার গল্পের ভক্ত আমি। আমার বয়সের তরুণেরা কৈশোরে এটা দেখেই বড় হয়েছে, তাই এতে অভিনয় আমার জন্য চ্যালেঞ্জের ছিল।’ নতুন ফরম্যাটে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে অভিনেতা বলেন, ‘করোনা মহামারির পর থেকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে দর্শকের আগ্রহ বেড়েছে। বিশেষ করে তরুণেরা টেলিভিশন তেমন দেখেন না। তাই বলব গল্প বলার নতুন এই ফরম্যাটের পরিকল্পনা, নিঃসন্দেহে ক্লোজআপের দারুণ এক উদ্যোগ।’

এর পরের মাস, অর্থাৎ জুনে প্রকাশ পায় শাফিন আহমেদ পরিচালিত ‘কাছে আসার গল্প’ ‘রি: পেয়ার’। নাটকটিতে অভিনয় করেছেন প্রিয়ন্তী উর্বী ও জুনায়েদ বোগদাদী। এর আগেও কাছের আসার গল্পে অভিনয় করেছেন উর্বী। অমিতাভ রেজা চৌধুরীর ‘টেক অফ’ নাটকে অভিনয় করেছিলেন তিনি। তবে এটি স্বল্পদৈর্ঘ্য ফরম্যাটে ছিল না। তাই এবার এতে অভিনয় করা অভিনেত্রীর জন্য ছিল নতুন অভিজ্ঞতা। সঙ্গে অভিনেত্রী জানিয়েছেন, পুরোনো ফরম্যাটও মিস করেন তিনি। উর্বী প্রথম আলোকে বলেন ‘ভিজ্যুয়ালের ব্যাপ্তি যত কমে, সবকিছু ততই নিখুঁতভাবে করার চ্যালেঞ্জ থাকে। কারণ, তখন প্রতিটি সেকেন্ড দর্শক অনুসরণ করেন। কাছে আসার গল্পের বড় ফরম্যাটে কাজ করলেও এবারের অভিজ্ঞতা আমার বেশ ভালো। সুন্দর একটা গল্পের সঙ্গে ভালো নির্মাণ—আর ক্লোজআপের মতো বড় ব্র্যান্ডের মাধ্যমে কাজটি দর্শকের কাছে পৌঁছে যাওয়া, সব মিলিয়ে কাজটির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরে অভিনয়শিল্পী হিসেবে তৃপ্তি পেয়েছি। তবে বড় ফরম্যাট মিস করছি (হাসি), এর মধ্যে একটা ভিনটেজ ব্যাপার আছে।’

গল্প বলার চ্যালেঞ্জ নাকি সৃজনশীলতার নতুন সুযোগ
ছোট ফরম্যাটে গল্প বলা নির্মাতাদের জন্য যেমন চ্যালেঞ্জের, আবার তেমনি সৃজনশীলতার নতুন সুযোগও। ছোট ফরম্যাটের সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে দুজন নির্মাতার সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তাঁরা জানিয়েছেন, নির্মাতা হিসেবে দর্শকের পাশে পৌঁছানোর এটি বড় সুযোগ। আড়াল বানিয়ে পরিচিতি পেয়েছেন তরুণ নির্মাতা নাজমুল নবীন। কাছে আসার গল্পে নির্দেশনা তাঁকে দর্শকের কাছে আরও পরিচিতি এনে দিয়েছে বলে মনে করেন এ নির্মাতা। নবীন বলেন, ‘কাছের আসার গল্পের নিয়মিত দর্শক আমি। শুধু আমি না, তরুণ-তরুণীদের কাছে এর আবেদন অনেক বেশি। এক যুগের বেশি সময়েও এর জনপ্রিয়তা একটুও কমেনি, বরং বহুগুণে বেড়েছে। পুরো গল্পের দৃশ্য ধারণ ট্রেনে হওয়াই শুটিং কিছুটা চ্যালেঞ্জের ছিল। তবে মুক্তির পর দর্শকের এত এত ইতিবাচক সাড়া ও ভালোবাসা পেয়েছি, নির্মাতা হিসেবে দায়বদ্ধতা বাড়িয়ে দিয়েছে। ভালোবাসার গল্প নিয়ে ক্লোজআপের এই উদ্যোগ যুগের পর যুগ সফলতা নিয়ে চলতে থাকুক।’

গত বছর স্বল্পদৈর্ঘ্য ফরম্যাটে ‘টিফিন ব্রেক’, ‘ইফতার ডে ওয়ান’ বানিয়ে প্রশংসা কুড়ান তরুণ নির্মাতা মোমিন বিশ্বাস। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনি বানিয়েছেন ‘স্কুটি স্টোরি’। ছয় মাসে কনটেন্টটির ভিউ ছাড়িয়েছে ৬৫ লাখ। এ নির্মাতা মনে করেন ‘কাছে আসার গল্পে’ নির্দেশনা তরুণ নির্মাতাদের জন্য বিশাল সুযোগ। মোমিন বিশ্বাস বলেন, ‘দেশসেরা নির্মাতারা কাছে আসার গল্পের নির্দেশনা দিয়েছেন। পরম্পরাই এখন আমরা তরুণ নির্মাতা সুযোগ পেয়েছি। তাই নির্মাতার জায়গা থেকে এটা অনেক বড় একটা সুযোগ ও সম্মান।’

Lading . . .