Advertisement

পুকুরে ডুব দিয়ে সহশিল্পীর মূল্যবান আংটি উদ্ধার, আবেগে ভাসলেন সবাই

প্রথম আলো

প্রকাশ: ৬ আগস্ট, ২০২৫

‘জলকৌড়ি’ নাটকের শুটিংয়ে খায়রুল বাসার ও সাদনিমা বিনতে নোমানছবি : পরিচালকের সৌজন্যে
‘জলকৌড়ি’ নাটকের শুটিংয়ে খায়রুল বাসার ও সাদনিমা বিনতে নোমানছবি : পরিচালকের সৌজন্যে

ডুবুরির চরিত্রে এর আগে অভিনয় করেননি খায়রুল বাসার। ৬ বছরের অভিনয়জীবনে এবারই প্রথম এমন একটি চরিত্রে দেখা যাবে তাঁকে। সম্প্রতি বরিশালের শায়েস্তাবাদে ‘জলকৌড়ি’ নাটকের শুটিং হয়েছে। টানা চার দিন শুটিংয়ের মধ্য দিয়ে এই নাটকের কাজ শেষ করেন বাসার। এমন একটি গল্পে কাজ করতে পেরে রোমাঞ্চিত বাসার।
আজ বুধবার দুপুরে কথা হয় বাসারের সঙ্গে।

জানালেন, ‘জলকৌড়ি’ নাটকে তাঁর চরিত্রের নাম বাতেন ডুবুরি। এটি তার পারিবারিক পেশা। বংশপরম্পরায় এই পেশা ধরে রাখতে বাতেন ডুবুরিও মনের আনন্দে কাজটি করেন। এমন একটি চরিত্র তাঁর অভিনয়জীবনে আলাদা মাত্রা যোগ করেছে বলে মনে করেন এই অভিনয়শিল্পী।

বাসার বললেন, ‘টানা চার দিন শুটিং করেছি। চারটি পুকুরে বেশির ভাগ দৃশ্যের শুটিং করেছি। ডুবুরির চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে চার পুকুরে শ দেড়েক ডুব দিতে হয়েছে। একেকবার ডুব দিয়ে অনেকক্ষণ থাকতে হয়। পানির নিচের জগৎটাও এবার অন্যভাবে দেখা হলো। এমন কয়েকটি সংলাপ ছিল, যা আমাকে পানির নিচের জগৎ সম্পর্কে ভাবিয়েছে।’

শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বাসার জানালেন, ‘জলকৌড়ি’ নাটকের শুটিংয়ে সময় সহশিল্পী দেবাশীষ চক্রবর্তীর একটি আংটি পুকুরে হারিয়ে যায়। এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলের জন্য ৬ আনা ওজনের এই আংটি দেবাশীষ তাঁর বাবার কাছ থেকে উপহার পেয়েছিলেন। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি বরিশাল অমৃত লাল দে মহাবিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক। বাসার বললেন, ‘দৃশ্যটি ছিল, পুকুরের নিচ থেকে আংটি তুলে আনতে হবে। তখন দেবাশীষ স্যারের সেই আংটি ছুড়ে দেওয়া হয়, ধরতে না পারায় পুকুরের পানিতে পড়ে যায়। মুহূর্তেই মন খারাপ হয়। আংটি হারিয়ে গেছে বলে নয়, এটা তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া অমূল্য উপহার, তাই। বাবা মারা গেছেন, কিন্তু এই আংটি তাঁর সঙ্গে স্মৃতি হয়ে আছে। এ নিয়ে আমারও খারাপ লাগে। অনেকে আংটি খুঁজে আনার চেষ্টা করে। ঘণ্টা দুয়েক চেষ্টার পর কেউ না পেলে আমি বললাম, শেষ চেষ্টা করে দেখি। স্যারসহ সবাই আমাকে বারবার না করেন। বাদ দিতে বলেন। কিন্তু আমার কাছে তাঁর আবেগটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাই সবার নিষেধ সত্ত্বেও ডুব দিয়ে চেষ্টা করি। একটা সময় সত্যি সত্যি আংটিটা পেয়ে যাই। সবার সে কী আনন্দ, স্যারের চেহারার দিকে তাকিয়ে দেখলাম, যেন রাজ্য জয়ের হাসি। সত্যি বলতে, এই খুশিটাই ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। আমার বেশি ভালো লেগেছে।’

কথা প্রসঙ্গে বাসার জানালেন, গ্রামেগঞ্জে ডুবুরিদের পুকুর থেকে হারিয়ে যাওয়া স্বর্ণালংকার তুলে আনার দৃশ্যটা একটা সময় প্রায় দেখা যেত। অনেকের কাছে এই কাজটা পেশা ছিল। এখন এই পেশাটা দেখা যায় না। অনেকের বাবা-দাদারাও এই পেশায় ছিল। দেশের বেশির ভাগ ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে। এই নাটকের মাধ্যমে ঐতিহ্যের বিষয়টি মনে করিয়ে দেওয়ার একটা চেষ্টা ছিল।

সুব্রত কুমার সঞ্জীবের পরিচালনায় ‘জলকৌড়ি’ নাটকে খায়রুল বাসারের বিপরীতে অভিনয় করেছেন সাদনিমা বিনতে নোমান। নাটকটি প্রসঙ্গে পরিচালক বললেন, ‘আমরা সততার সঙ্গে কাজটা করেছি। ছোটবেলায় আমার এলাকার পুকুরে ডুবুরিদের স্বর্ণ তুলে আনাটা দেখতাম। সেই গল্প নাটকে তুলে এনেছি। এই গল্পের জন্য খায়রুল বাসার এত পরিশ্রম করেছে, যা আমাকে মুগ্ধ করেছে। সবার আন্তরিকতায় কাজটাও দুর্দান্ত হয়েছে। আমি যে একেবারে বাড়িয়ে বলছি না, তা নাটকটি প্রচারের পর অন্যরাও বলবেন।’

Lading . . .