বৈদ্যুতিক গাড়িসংগৃহীত

বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড গাড়ি কেনার সময় যা খেয়াল রাখবেন

বর্তমানে বৈদ্যুতিক (ইভি) ও হাইব্রিড গাড়ির প্রতি বাংলাদেশি ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়ছে। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি, জ্বালানি সাশ্রয় এবং আধুনিক সুবিধার কারণে অনেকেই এসব গাড়ি কেনার কথা ভাবছেন। তবে এই নতুন প্রযুক্তির গাড়ি কেনার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করা প্রয়োজন।

বৈদ্যুতিক গাড়ি মূলত তিন ধরনের হয়ে থাকে। ব্যাটারিনির্ভর ইলেকট্রিক ভেহিকেল সম্পূর্ণভাবে ব্যাটারির ওপর নির্ভরশীল। প্লাগ-ইন হাইব্রিড ইলেকট্রিক ভেহিকেল ব্যাটারি ও পেট্রল/ডিজেল উভয়েই চলে। এসব গাড়ি একবার চার্জে এক হাজার কিলোমিটার চলতে পারে। হাইব্রিড ইলেকট্রিক ভেহিকেলে ব্যাটারি ও ইঞ্জিন একসঙ্গে কাজ করে। আপনার দৈনন্দিন যাতায়াতের ধরন, চার্জিং সুবিধা এবং বাজেট অনুযায়ী সঠিক প্রযুক্তির গাড়ি নির্বাচন করুন।

গাড়ির ব্যাটারি রেঞ্জ নির্ধারণ করে আপনি একবার চার্জে কত দূর যেতে পারবেন। চীনা বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা বিওয়াইডি বাংলাদেশের উপব্যবস্থাপক বলেন, চার্জিং স্টেশন বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সীমিত হলেও ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে চার্জিং স্টেশনের সংখ্যা বাড়ছে। বাসায় চার্জিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক সংযোগ ও চার্জার স্থাপন করতে হবে। বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রাথমিক মূল্য তুলনামূলকভাবে বেশি হলেও দীর্ঘ মেয়াদে এটি সাশ্রয়ী হতে পারে। জ্বালানি খরচ বেশ কম। প্রতি কিলোমিটারে খরচ দু-তিন টাকা। রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম। ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই। তবে ব্যাটারির আয়ুষ্কাল ও প্রতিস্থাপন খরচ বিবেচনায় রাখা উচিত। বৈদ্যুতিক গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ তুলনামূলকভাবে সহজ। তবে ব্যাটারি ও ইলেকট্রনিক সিস্টেমের জন্য বিশেষজ্ঞ টেকনিশিয়ানের প্রয়োজন হতে পারে। গাড়ি কেনার আগে নিশ্চিত হন যে আপনার নিকটবর্তী এলাকায় সেবাকেন্দ্র রয়েছে।

আধুনিক বৈদ্যুতিক গাড়িগুলোতে বিভিন্ন নিরাপত্তা ও প্রযুক্তিগত ফিচার থাকে। অ্যাডভান্সড ড্রাইভার অ্যাসিস্ট্যান্স সিস্টেম হিসেবে লেন ডিপারচার ওয়ার্নিং, অটোনোমাস ইমার্জেন্সি ব্রেকিং থাকে। ৩৬০ ডিগ্রি ক্যামেরা ও সেন্সর গাড়িতে থাকে, যা পার্কিং ও ড্রাইভিংয়ে সহায়তা করে। গাড়িতে টাচস্ক্রিন ইনফোটেইনমেন্ট সিস্টেম থাকে, যা নেভিগেশন, মিউজিক ও অন্যান্য ফিচার নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। চীনা বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা বিওয়াইডি বাংলাদেশের ডেপুটি ম্যানেজার বলেন, এখন অনেক ক্রেতা হাইব্রিড গাড়ি কিনছেন। প্রচলিত পেট্রল বা ডিজেল গাড়ির তুলনায় হাইব্রিড গাড়ি জ্বালানি সাশ্রয়ের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সুবিধা প্রদান করে, যা দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনৈতিক দিক থেকে লাভজনক। হাইব্রিড গাড়িতে দুটি শক্তির উৎস থাকে—একটি ইঞ্জিন, যা পেট্রল বা ডিজেল ব্যবহার করে। আর ইলেকট্রিক মোটর ব্যাটারি থেকে শক্তি নেয়। এই বিশেষ সংমিশ্রণের কারণে গাড়ি চলার সময় জ্বালানি কম খরচ হয়। হাইব্রিড গাড়ি কম দূষণ সৃষ্টি করে। কারণ, কম জ্বালানি দহন হয় এবং ইলেকট্রিক মোটরের সাহায্যে অনেক সময় গাড়ি সম্পূর্ণভাবে বায়ুদূষণহীনভাবে চলে। জ্বালানি খরচের পাশাপাশি হাইব্রিড গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ খরচও তুলনামূলক কম। ইঞ্জিনের ওপর চাপ কম পড়ায় ইঞ্জিনের আয়ু বৃদ্ধি পায় এবং তেল বা অন্যান্য যান্ত্রিক পরিবর্তনের সময় কম লাগে। তা ছাড়া ব্যাটারির ক্ষমতা ও আধুনিক প্রযুক্তির উন্নয়নে এসব গাড়ির পারফরম্যান্স আরও নির্ভরযোগ্য হয়েছে।

বাংলাদেশের বর্তমান যানজটপূর্ণ শহরগুলোতে যেখানে গ্যাসোলিন ও ডিজেলের দাম বেড়ে চলেছে, সেখানে হাইব্রিড গাড়ি ব্যবহারকারীরা তাঁদের দৈনন্দিন যাতায়াতে অর্থনৈতিক সুবিধা পাচ্ছেন। দীর্ঘ মেয়াদে এসব গাড়ি জ্বালানি খরচ কমানোর মাধ্যমে ব্যক্তিগত আর্থিক চাপ কমায় এবং পরিবেশ সংরক্ষণেও অবদান রাখে।

গাড়ির দীর্ঘস্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে নিয়মিত যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। নিয়মিত ব্যাটারি রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী চার্জ করুন।