উদ্বোধনের পাঁচ মাস পর শুরু হচ্ছে খুলনা-মোংলা রেলপথে কমিউটার ট্রেন চলাচল। এরই মধ্যে ট্রেন চলাচলের সূচি ও ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। সূচি অনুযায়ী আগামীকাল শনিবার সকাল সোয়া ৯টায় বেনাপোল থেকে ট্রেনটি মোংলার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে।
খুলনা-বেনাপোল রুটের বেতনা কমিউটার ট্রেনটি দিয়ে ওই পথে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হচ্ছে। তবে মোংলা পথে ট্রেনটি চলবে মোংলা কমিউটার নামে। গত বছরের ৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেলপথটির উদ্বোধন করেন। মূলত ট্রেন চলাচল শুরু হচ্ছে বেনাপোল থেকে। পরে সেটি যশোরের বিভিন্ন স্টেশন পার হয়ে খুলনার ফুলতলা দিয়ে মোংলা পথে প্রবেশ করবে। খুলনা থেকে মোংলা অংশে যাত্রাবিরতি থাকবে ফুলতলা, মোহাম্মদনগর, কাটাখালী ও চুলকাটি বাজার স্টেশনে। এই রুটে ট্রেন বন্ধ থাকবে প্রতি মঙ্গলবার।
রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালকুদার বলেন, আপাতত বেতনা কমিউটার ট্রেনটি বেনাপোল থেকে মোংলা কমিউটার ট্রেন হয়ে বেনাপোল-মোংলা রুটে চলাচল করবে। পরবর্তী সময়ে আরেকটি ট্রেন ওই রুটে পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে।
এ বিষয়ে ২৯ মে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের সহকারী চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট মো. আবদুল আওয়াল স্বাক্ষরিত পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপকের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়েছে, আগামী ১ জুন সকাল সোয়া ৯টায় বেনাপোল থেকে ট্রেনটি ছেড়ে যাবে মোংলার উদ্দেশে। ট্রেনটি পৌঁছাবে দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে। এরপর মোংলা থেকে ট্রেনটি ছাড়বে বেলা ১টায় এবং বেনাপোল পৌঁছাবে বিকেল সাড়ে ৪টায়। মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের অন্যান্য দিন এই রুটে একই সময়ে ট্রেন চলাচল করবে। এই রুটের দূরত্ব ১৩৮ দশমিক ৬৪ কিলোমিটার। ট্রেনের আসনসংখ্যা ৬৭৬টি।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, বেতনা কমিউটার ট্রেনটি আগে খুলনা থেকে বেনাপোল ও বেনাপোল থেকে খুলনায় দুবার চলাচল করত। তবে ১ জুন থেকে খুলনা-বেনাপোল রেলপথে একবার, বেনাপোল থেকে মোংলা রুটে একবার ও মোংলা থেকে বেনাপোল রেলপথে একবার চলাচল করবে।
খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান বলেন, খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত রেললাইন ট্রেন চলাচলের জন্য পুরোপুরি উপযোগী রয়েছে। আটটি স্টেশনে আসবাবপত্রসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য সরঞ্জাম পৌঁছে গেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে শনিবার থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হবে।
ট্রেনের সময়সূচি অনুযায়ী শনিবার সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে খুলনা রেলস্টেশন থেকে বেনাপোলের উদ্দেশে যাত্রা করবে বেতনা কমিউটার ট্রেন। বেনাপোল পৌঁছাবে সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে। একই ট্রেন নাম বদলে মোংলা কমিউটার নামে বেনাপোল থেকে সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে মোংলা পৌঁছাবে ১২টা ৩৫ মিনিটে। এর মধ্যে নতুন এই রেলপথে যাত্রাবিরতি নাভারনে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে, ঝিকরগাছায় ৯টা ৫০ মিনিটে, যশোরে ১০টা ১১ মিনিটে, সিঙ্গিয়ায় ১০টা ৩০ মিনিটে, নোয়াপাড়ায় ১০টা ৪৬ মিনিটে, ফুলতলায় বেলা ১১টা ৪ মিনিটে, মোহাম্মদগর স্টেশনে ১১টা ৩১ মিনিটে, কাটাখালী স্টেশনে ১১টা ৫০ মিনিটে, চুলকাটি বাজারে ১২টা এবং মোংলায় পৌঁছাবে ১২টা ৩৫ মিনিটে।
ট্রেনটি মোংলা থেকে বেলা ১টায় ছেড়ে বেনাপোল পৌঁছাবে বিকেল সাড়ে চারটায়। এর মধ্যে চুলকাটি বাজারে ১টা ২২ মিনিটে, কাটাখালীতে ১টা ৪০ মিনিটে, খুলনার মোহাম্মদনগরে ১টা ৫৯ মিনিটে, ফুলতলায় ২টা ২৫ মিনিটে যাত্রাবিরতি করে নোয়াপাড়ায় ২টা ৩২ মিনিটে, চেঙ্গুটিয়ায় ২টা ৫২ মিনিটে, সিঙ্গিয়ায় বেলা ৩টা ১১ মিনিটে, যশোরে ৩টা ৩০ মিনিটে, ঝিকরগাছায় ৩টা ৫২ মিনিটে, নাভারনে বিকেল ৪টা ১১ মিনিটে ও বেনাপোলে পৌঁছাবে বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে।
ট্রানজিট সুবিধার আওতায় ভারত, নেপাল ও ভুটানে পণ্য পরিবহন সহজ করতে ২০১০ সালে খুলনার ফুলতলা রেলস্টেশন থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত রেলপথ স্থাপন প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। প্রকল্পটি তিন বছরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ হতে সময় লেগেছে প্রায় ১৪ বছর। মেয়াদ বাড়ার সঙ্গে বেড়েছে প্রকল্পের ব্যয়ও। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ১ হাজার ৭২১ কোটি টাকা থাকলেও কয়েক দফায় মেয়াদ বেড়ে মোট ব্যয় দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৬০ কোটি টাকার বেশি। ভারত সরকারের ঋণসহায়তায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লার্সেন অ্যান্ড টার্বো ও ইরকন ইন্টারন্যাশনাল।