শ্রীপুরে অস্ত্রসহ বাজারে গিয়ে বিএনপি নেতার হুমকি, পরে বহিষ্কার
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় প্রকাশ্যে রামদা নিয়ে মহড়া দিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে একটি বাজার দখল করে চাঁদা তুলেছে একটি সংঘবদ্ধ দল। ওই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় এক বিএনপি নেতা।
ওই বিএনপি নেতা এখন থেকে বাজার নিয়ন্ত্রণ করবেন বলে প্রকাশ্যে ঘোষণাও দেন। এ সময় সেখানে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়। এতে বাজারে ব্যবসায়ীসহ জনমনে আতঙ্ক দেখা দেয়। এ ঘটনার একটি ভিডিও গতকাল শনিবার বিকেল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার এমসি বাজারে গতকাল বিকেল চারটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। প্রকাশ্যে চাঁদা তোলার নেতৃত্ব দেওয়া ও নিয়মিত চাঁদা তোলার ঘোষণা দেওয়া ওই ব্যক্তির নাম মো. জাহাঙ্গীর আলম (৪০)। তিনি উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের মোলাইদ গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে। জাহাঙ্গীর শ্রীপুর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক সদস্য। এ ঘটনার দুই ঘণ্টার মধ্যে সন্ধ্যা ছয়টায় তাঁকে পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
সন্ধ্যা ছয়টায় কেন্দ্রীয় যুবদলের পক্ষ থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে বহিষ্কার করা–সম্পর্কিত একটি নোটিশ পাওয়া যায়। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহদপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত ওই নোটিশে বলা হয়, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগে তাঁকে সাংগঠনিক সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বহিষ্কারের এই তথ্য গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন গাজীপুর জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আতাউর রহমান মোল্লা।
ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি বাজারে এসেছি আপনাদের সহযোগিতা করতে। আজকের পর থেকে এই বাজারের সব কন্ট্রোল করব আমি। কে ডাকছে, কে না ডাকছে, সেটা আমার জানার বিষয় নয়। আমার নেতৃত্বে এই বাজার চলবে। আজকের পর থেকে আমি জাহাঙ্গীর যত দিন বেঁচে থাকব, তত দিন পর্যন্ত এই বাজার আমার নেতৃত্বে চলবে। আপনাদের আমি বলছি, দোকানদার ভাইয়েরা। আজকে থেকে আপনারা খাজনা দেওয়া শুরু করে দেন। এখন এই মুহূর্তে আমার লোকজন খাজনা ওঠাবে। কেউ বাধার সৃষ্টি করলে তাকে কঠিনভাবে প্রতিহত করব। তাকে অনেক খেসারত দিতে হবে। তাই সকলকে অনুরোধ করে বলছি, আপনারা কেউ এই কাজে এসে বাধা দিবেন না। আমাদের কাজ আমাদের করতে দেন। আপনারা কেউ ভয় পাবেন না। সকলকে ধন্যবাদ।’
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাথায় লাল গামছা পেঁচিয়ে বিকেল পৌনে চারটার দিকে জাহাঙ্গীর ও তাঁর লোকজন বাজারে আসেন। তাঁরা এমসি বাজার ইউটার্ন থেকে মহাসড়কে মিছিল নিয়ে বাজারের উত্তর পাশে স্বপ্নপুরী হোটেলের সামনে এসে থামেন। সেখানে একটি প্লাস্টিকের চেয়ারে দাঁড়িয়ে তিনি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। চাঁদা তোলার সময় জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে অন্তত ৪০ জন ছিলেন। তাঁদের বেশির ভাগের হাতে ছিল রামদা, লোহার রড, ছুরি ও অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র। তাঁরা আচমকা বাজারে এসে বাজার নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দিয়ে চাঁদা তোলা শুরু করেন। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়।
ব্যবসায়ীরা জানান, এমসি বাজারটি আবু বক্কর সিদ্দিক নামের স্থানীয় একজন ইজারা নিয়েছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের কর্মী ছিলেন। আওয়ামী লীগের শাসনামলে নেওয়া তাঁর ইজারার মেয়াদ এখনো শেষ হয়নি।
এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এগুলো কিছু না। দাও-টাও কিছু না। আমি টেহাপয়সা উঠাইছি না। এগুলো গাজীপুর জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আরিফুল ইসলামের লোক আইসা আমারে হেয় করার জন্য করছে। সে আমার বাড়ি ভাঙচুর করছিল, অফিস ভাঙচুর করছিল। পরে আজকে আমি তারে খুঁজতে গেছিলাম। তারে পাইছি না, পরে চলে আসছি।’ তিনি আরও বলেন, ওই বাজার দখল করে আরিফুল ইসলাম খাজনা তোলেন।
তবে আরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, জাহাঙ্গীর আলম দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত। করোনাকালে নকল টিকা এনে এলাকায় বিক্রি করেছিলেন। এ ছাড়া নারী ধর্ষণ, মাদক বিক্রি ও অন্যান্য অপরাধ করায় এলাকায় তোপের মুখে তিনি বিদেশে চলে যান। পরে গত বছরের শুরুতে আবার দেশে ফিরে এসে এ ধরনের কাজ শুরু করেছেন। সর্বশেষ শনিবার বিকেলে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি ও অস্ত্রের মহড়া দিয়ে আলোচিত হয়েছেন।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো. জয়নাল আবেদীন মন্ডল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ এ বিষয়ে অবগত হয়েছি। খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’