যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ ছাড়া নিয়োগ পাওয়ায় অবশেষে যুক্তরাজ্যে অবস্থিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান সোনালী বাংলাদেশ (ইউকে) লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও অ-নির্বাহী পরিচালক আসাদুল ইসলামকে সরিয়ে দিয়েছে সরকার। তাঁর বদলে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেককে। আসাদুল ইসলামও একসময় এ বিভাগের সচিব ছিলেন।
অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের অনুমোদনের পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ গতকাল মঙ্গলবার সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে সোনালী বাংলাদেশের (ইউকে) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও নির্বাহী পরিচালক মাসুম বিল্লাহকে চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরকে। সোনালী বাংলাদেশের ৫১ শতাংশ শেয়ারের মালিক অর্থ মন্ত্রণালয়, ৪৯ শতাংশের মালিক সোনালী ব্যাংক।
২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব পদে নিয়োগ পান আসাদুল ইসলাম। ২০১৯ সালের ২৬ আগস্ট তাঁর অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পিআরএল বাতিল করে তাঁকে তৎকালীন সরকার আরও দুই বছরের জন্য নিয়োগ দেয়।
২০০১ সালের ১০ ডিসেম্বর সোনালী ব্যাংক (ইউকে) যুক্তরাজ্যে ব্যাংকিং ব্যবসা শুরু করে। ২০১০-২০১৪ সময়ে অর্থ পাচার প্রতিরোধব্যবস্থায় দুর্বলতার কারণে প্রতিষ্ঠানটিকে ৩২ লাখ পাউন্ড জরিমানা করে সে দেশের ফিন্যান্সিয়াল কনডাক্ট অথরিটি (এফসিএ)। ব্যাংকটির মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ বিভাগের প্রধান স্টিভেন স্মিথকেও নিষিদ্ধের পাশাপাশি ১৮ হাজার পাউন্ড জরিমানা করা হয়।
এ ঘটনার জেরে ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংকিং লাইসেন্স স্থগিত হয়, তবে বন্ধ হয়নি। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব হিসেবে আসাদুল ইসলাম ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি সোনালী ব্যাংক ইউকে লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং অ-নির্বাহী পদে নিয়োগ পান। সচিব হিসেবে ২০২১ সালের ২৭ আগস্ট তাঁর চাকরি শেষ হলে তাৎক্ষণিকভাবে এ পদ শূন্য হয়।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ২০২২ সালের ৩০ মে এক আদেশে সে বছরের ১৬ আগস্ট থেকে যুক্তরাজ্যে ট্রেড ফাইন্যান্স এবং প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) ব্যবসা পরিচালনার জন্য সোনালী ব্যাংক (ইউকে) লিমিটেডকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে। তখন গঠন করা হয় সোনালী বাংলাদেশ (ইউকে) এবং সোনালী পে (ইউকে) লিমিটেড।
আগের সোনালী ব্যাংক (ইউকে) লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদকেই সোনালী বাংলাদেশের পরিচালনা পর্ষদ হিসেবে বহাল রাখা হয়। এ ছাড়া ২০২৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো তিন বছরের জন্য নিয়োগ পান আসাদুল ইসলাম। তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২৬ সালের ৩১ জানুয়ারি।
সোনালী বাংলাদেশের স্বাধীন চেয়ারম্যান হিসেবে আসাদুল ইসলামের নিয়োগ পাওয়ার বিষয়টি সম্প্রতি সামনে আসে। এ বিষয়ে গত ২২ জুলাই প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাখ্যা চায় সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। বলা হয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের পরিপত্র অনুসরণ না করায় বাংলাদেশ ব্যাংকের আপত্তি রয়েছে। আবার যুক্তরাজ্যের করপোরেট গভর্ন্যান্স কোড অনুযায়ী সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পাঁচ বছর পার না হলে স্বাধীন পরিচালক হওয়া যায় না।
সোনালী বাংলাদেশ যে জবাব দেয়, তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। আসাদুল ইসলামকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে এ বিভাগ বলছে, অনুমোদন ছাড়াই তিনি পুনর্নিয়োগ পেয়েছেন। আর্থিক খাতে সুশাসন ও শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে তাঁর নিয়োগ বাতিল করা সমীচীন।
সোনালী বাংলাদেশ ২০২২ সালে ১৫ লাখ, ২০২৩ সালে ৩১ লাখ এবং ২০২৪ সালে ১ কোটি ৫ লাখ পাউন্ড কর-পূর্ব মুনাফা অর্জন করেছে। এ তথ্য জানিয়ে আসাদুল ইসলাম গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বার্থেই এখন ব্যাংকিং লাইসেন্স দরকার এবং সেদিকেই আমরা এগোচ্ছিলাম। এটা এখন বাধাগ্রস্ত হতে পারে।’
পরিপত্র অনুসরণ না করার বিষয়ে আসাদুল ইসলাম বলেন, পরিপত্র কোনো আইন নয়। প্রয়োজনে জারি করা হয়, আবার বদলও করা হয়। এখানে ব্যাংক কোম্পানি আইনের কোনো লঙ্ঘন হয়নি। সরকারই পুরো পর্ষদকে নিয়োগ দিয়েছিল।