এসআইবিএলকে একীভূত না করে উদ্যোক্তাদের হাতে পরিচালনার ভার ছাড়ার দাবি
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সমস্যায় পড়া পাঁচটি ইসলামি ব্যাংক একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তবে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের (এসআইবিএল) উদ্যোক্তা শেয়ারধারীরা ব্যাংকটিকে অন্যান্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত না করে তাঁদের হাতে পরিচালনার দায়িত্ব দিতে দাবি জানিয়েছেন।
আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসআইবিএলের উদ্যোক্তা শেয়ারধারী, সাধারণ বিনিয়োগকারী ও গ্রাহকেরা সরকারের কাছে এই দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এসআইবিএলের প্রতিষ্ঠাকালীন উদ্যোক্তা পরিচালক ও সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল হক। তিনি বলেন, এসআইবিএল শুরু থেকেই শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু ২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপ জোরপূর্বক ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর ব্যাপক অনিয়মের কারণে ব্যাংকটি আর্থিক সংকটে পড়ে।
রেজাউল হক আরও বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তা পরিচালকদের সঙ্গে কোনো আলোচনায় না বসে ব্যাংকটিকে এস আলমের প্রতিষ্ঠিত ও লুট করা কিছু রুগ্ণ ব্যাংকের সঙ্গে অযৌক্তিকভাবে একীভূত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটি গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীর জন্য বড় ক্ষতির কারণ হবে।
প্রতিষ্ঠাকালীন শেয়ারধারীদের কাছ থেকে জোর করে শেয়ার নেওয়া হয়েছিল বলে জানান রেজাউল হক। শেয়ার ফেরত পেতে তাঁরা আদালতে রিট করেছেন। এখন বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন (রুল জারি হয়েছে)। তাই সরকার বা বাংলাদেশ ব্যাংক আদালতের বিষয় উপেক্ষা করে একীভূত করার উদ্যোগ নিতে পারবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংক যে পাঁচটি রুগ্ণ ব্যাংক একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে এসআইবিএলকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে মিশিয়ে বৃহৎ ইসলামি ব্যাংক গঠনের পরিকল্পনা আছে। সরকারও প্রাথমিকভাবে নতুন ব্যাংকের জন্য ২০ হাজার ২০০ কোটি টাকা মূলধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছে। পরে এটি ৩৫ হাজার ২০০ কোটি টাকায় বৃদ্ধি পাবে।
এসআইবিএলের উদ্যোক্তারা বলেন, প্রকৃত উদ্যোক্তা ও শেয়ারধারীদের হাতে ব্যাংক পরিচালনার দায়িত্ব দিলে ব্যাংক দ্রুত পুনরুজ্জীবিত হবে। তাঁদের অভিযোগ, বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্যোক্তাদের বাদ দিয়ে অনভিজ্ঞ স্বাধীন পরিচালক দিয়ে ব্যাংক পরিচালনা করছে। এ কারণে গ্রাহকদের আস্থা কমছে এবং আমানত প্রত্যাহারের প্রবণতা বেড়েছে।
রেজাউল হক বলেন, অযৌক্তিক একীভূতকরণের পরিবর্তে বর্তমান অনভিজ্ঞ পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করে উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করা উচিত। প্রয়োজনে কিছু দেশি ও বিদেশি নতুন বিনিয়োগকারীকেও পরিচালনা পর্ষদে সম্পৃক্ত করা হবে, যাতে ব্যাংক সত্যিকারের অর্থে পুনরুজ্জীবিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উদ্যোক্তারা ব্যাংকের কয়েকটি পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন:
বাংলাদেশের খ্যাতনামা ব্যবসায়িক গ্রুপ ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সম্পৃক্ত করে ব্যাংকের তারল্য প্রবাহ বৃদ্ধি নিশ্চিত করা।
ব্যাংকের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক—১৮১টি শাখা, ২৪০টি উপশাখা ও ৩৭০টি এজেন্ট আউটলেটে কার্যক্রম জোরদার করা।
বৈদেশিক মুদ্রার (রেমিট্যান্স) প্রবাহ বাড়িয়ে ব্যাংককে বিদেশে কর্মরত জনশক্তির আস্থার জায়গায় পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।
ব্যাংকের জনশক্তিকে পুনর্বিন্যাস করে বিপণন কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা, দক্ষ জনশক্তিকে যথাযথ স্থানে পদায়ন করা।
সরকারি, বেসরকারি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ২২টি কালেকশন অ্যাকাউন্ট পুনঃসক্রিয় করে নগদ প্রবাহ বৃদ্ধি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এসআইবিএলের উদ্যোক্তাদের মধ্যে জাবেদুল আলম চৌধুরী, আবদুর রহমান, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন প্রমুখ।