রাজীব রাই। এক্স থেকে

সিআইডির ট্রেনিং নেওয়ার পরও হুমকির মুখে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন নির্মাতা

বলিউডের জনপ্রিয় থ্রিলার ‘গুপ্ত’ ও ‘মোহরা’র পরিচালক রাজীব রাইয়ের জীবন যেন এক রুদ্ধশ্বাস থ্রিলারের চেয়ে কম কিছু নয়। নব্বইয়ের দশকে যখন মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ওপর আন্ডারওয়ার্ল্ডের ছায়া ঘনিয়ে এসেছিল, তখন গ্যাংস্টারদের টার্গেটে পরিণত হন তিনি। অফিসে হামলা হয়, ফোনে আসত একের পর এক হুমকি। আত্মরক্ষার জন্য সিআইডির কাছ থেকে নিতে হয়েছিল নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ। শেষ পর্যন্ত পাড়ি জমাতে হয় যুক্তরাজ্যে। সম্প্রতি সিদ্ধার্থ কাননের এক সাক্ষাৎকারে নিজের সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানালেন এই চিত্রপরিচালক।

হুমকি ফোন, আতঙ্কের দিন

রাজীব রাই বলেন, ‘“গুপ্ত”-এর পরই সমস্যা শুরু হয়। এরপর আমি দুটি ছবি বানিয়েছিলাম, যেগুলো চলেনি। তখনই ল্যান্ডলাইনে ফোন আসে। কেউ টাকা চায়নি, আমি কথা বলিনি। প্রথম কলেই বুঝে গিয়েছিলাম কিছু একটা গড়বড় আছে। পুলিশের সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করি। পুলিশ জানিয়ে দেয়, কোনোভাবেই যেন যোগাযোগ না রাখি।’

রাজীব রাই জানান, ‘অফিসে রেকর্ডার ছিল। ফোনের সব কথোপকথন পুলিশের কাছে পাঠানো হতো। আমি হয়তো প্রথমবার হ্যালো বলেছিলাম, তারপর নিজেকে অন্য কেউ ভান করে কথা বলি। মনে হয়েছিল, এসব কলের আসল উদ্দেশ্য নিশ্চয়ই টাকা।’

অফিসে বন্দুকধারীদের হামলা

১৯৯৭ সালে নিজের অফিসে হামলার কথা বলতে গিয়ে রাজীব বলেন, ‘আমার ওপর সত্যিই হামলা হয়েছিল। আমি কাজ ছেড়ে দিয়েছিলাম তখন। অফিসে গুলি, বন্দুক নিয়ে হামলাকারীরা ঢুকে পড়ে। ভাগ্যিস আমি ভেতরে ছিলাম আর দেহরক্ষীরা ছিল বাইরে। ওরা ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়। না হলে আজ হয়তো আমি বেঁচেই থাকতাম না। পুলিশের ভাষায়, ওদের পরিকল্পনার ভুলেই মিশনটা ব্যর্থ হয়।’

সিআইডির কাছ থেকে প্রশিক্ষণ

হুমকি পাওয়ার পর রাজীব রাইয়ের জন্য সিআইডির বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কীভাবে গাড়ি পাল্টাতে হয়, কখন কোথায় চোখ রাখা দরকার—সব শেখানো হয়েছিল তাঁকে। এমনকি রাস্তায় ট্রাফিক সংকেত দিলেও তাঁকে থামতে মানা করা হয়েছিল। কারণ, সেই মুহূর্তেই হামলার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি।

‘পুলিশ আমাকে বলেছিল, কখনো কারও সঙ্গে এসব বিষয়ে কথা বলো না। সিআইডির ট্রেনিংয়ে শেখানো হয়েছিল, কীভাবে বিপদ বুঝে তা এড়িয়ে যেতে হবে, কীভাবে নজর রাখতে হবে আশপাশে। এমনকি আমার কাছে পুলিশের অনুমতি ছিল সিগন্যাল ভেঙে যাওয়ার। কারণ, গাড়ি থামানো মানেই তখন নিজেকে বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া।’ বলেন রাজীব।

দেশ ছাড়ার পেছনে আছে ব্যক্তিগত কারণও

রাজীব রাই শুধু নিজের জন্য নয়, পরিবারকেও বাঁচাতে চেয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘ওই সময় আমার বাবা গুরুতর অসুস্থ ছিলেন, ছেলেও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন। আমি জানতাম, আমার যদি কিছু হয়, তাঁদের দেখার কেউ থাকবে না। তাই আমি নিজেই ভাবলাম, এখন সময় হয়েছে থেমে যাওয়ার। ঈশ্বর কিছুটা টাকা দিয়েছেন, সেটাই যথেষ্ট।’

বলিউড ছাড়লেও আয় থামেনি

২০ বছর চলচ্চিত্রজগৎ থেকে দূরে থেকেও আয় বন্ধ হয়নি। বরং পুরোনো সিনেমা থেকেই আয় বেড়েছে বলে জানান রাজীব। ‘যখন কাজ করছিলাম, তখন এত টাকা আসত না। কিন্তু যখন কাজ ছেড়ে দিয়েছি, তখনই আয় বেড়েছে। সবকিছুই বৈধভাবে, চেকের মাধ্যমে—আমার অফিসে আপনি গেলে দেখবেন, নগদ পাঁচ হাজার রুপিও নেই।’

রাজীব রাই আবার ভারতে ফিরেছেন, তবে তাঁর সেই ভয়াল দিনগুলোর স্মৃতি এখনো তাজা। গ্যাংস্টারদের হুমকি, মৃত্যুভয় আর প্রাণ রক্ষার লড়াই—সব মিলিয়ে তিনি পরিচালক থেকে যেন হয়ে উঠেছিলেন এক বাস্তব থ্রিলারের নায়ক।

তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস