তৃপ্তি দিমরিইনস্টাগ্রাম থেকে

অভিনেত্রী হতে মরতেও রাজি ছিলেন তৃপ্তি

অভিনয়জগতে তাঁর সাত কূলে কেউ নেই। কিন্তু শুধু অভিনেত্রী হওয়ার বাসনা বুকে আঁকড়ে ধরে উত্তরাখণ্ড থেকে মুম্বাইতে পাড়ি জমিয়েছিলেন তৃপ্তি দিমরি। সম্প্রতি বড় পর্দায় মুক্তি পেয়েছে তাঁর অভিনীত ছবি ‘ধড়ক ২’। মুম্বাইয়ের জুহুর সান অ্যান্ড স্যান্ড হোটেলে আড্ডার শুরুতে অভিনেত্রী ফিরে গিয়েছিলেন অতীতের সেই দিনগুলোয়।

আবেগপ্রবণ কণ্ঠে তৃপ্তি বলেন, ‘আমার অভিনীত চরিত্র বিধি সাহসী এক মেয়ে। বাস্তবেও আমিও বিধির মতোই সাহসী। তাই সাহস করে ঘরবাড়ি, চেনা শহর ছেড়ে মুম্বাইয়ের মতো অচেনা এক শহরে এসেছিলাম। পরিবারের সবার বিরুদ্ধে গিয়ে অভিনেত্রী হতে চেয়েছিলাম। আসলে আমার অভিনয়জগতে আসা নিয়ে তাঁরা ভয়ে ছিলেন। কিন্তু আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। জানতাম সঠিক পথেই হাঁটছি। মানুষের নিজের প্রতি বিশ্বাস থাকা খুব জরুরি। তখন মনে হয়েছিল, অভিনেত্রী হওয়ার জন্য জীবনে মরতেও রাজি।’

তৃপ্তি জানান, তাঁর মধ্যে শুধু বিধির মতো সাহস ছিল। এর বাইরে চরিত্রটির সঙ্গে নিজের তেমন কোনো মিল খুঁজে পাননি তিনি। ‘শাজিয়াকে (ইকবাল, পরিচালক) বলেছিলাম আমি বিধির মতো নই। আমি ওর মতো বহির্মুখী নই; খুবই শান্ত স্বভাবের, অন্তর্মুখী মেয়ে। ঝামেলা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চাই। তবে বিধি আমাকে মানুষ হিসেবে কিছুটা বদলে দিয়েছে। এখন আমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস পাই। আমার মনে হয়, প্রতিটা মানুষেরই উচিত অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা।’
২০১৮ সালে মুক্তি পেয়েছিল জাহ্নবী কাপুর ও ঈশান খাট্টার অভিনীত ‘ধড়ক’।

রোমান্টিক-ট্র্যাজেডি ছবিটি বক্স অফিসে ভালো সফলতা পেয়েছিল। ছবিটির সিকুয়েল মুক্তির আগে কি বক্স অফিসের চাপ অনুভব করেছিলেন তৃপ্তি? তাঁর উত্তর, ‘কোনো সিনেমা মুক্তির আগে আমি কোনো প্রকার চাপ নিই না। এতে অভিনয়ের আনন্দটাই মাটি হয়ে যায়। সেটে যদি চাপ নিয়ে হাজির হন, তাহলে চরিত্রের প্রতি কিছুতেই ন্যায় করতে পারবেন না। ছবিটা হিট হবে, না ফ্লপ হবে, তা না ভেবে সমগ্র প্রক্রিয়াটা উপভোগ করা জরুরি। আর শুটিং শেষে বাড়ি ফেরার পর মনে যেন আনন্দ থাকে।’

‘ধড়ক ২’ ছবির একদিকে আবেগ–রোমান্স, অন্যদিকে জাতপাত ও বর্ণবাদের মতো সামাজিক বাস্তবতা। তৃপ্তি জানান, ছবিটির মাধ্যমে অনেক অজানা বিষয় তাঁর সামনে এসেছে। তিনি বলেন, ‘একটা সিনেমা মানুষকে নানাভাবে সমৃদ্ধ করে। আমাদের রোজকার জীবনের অনেক বিষয় সম্পর্কে আমরা অজ্ঞ। জানতেও পারি না যে অন্যের ওপর দিয়ে কী ঝড় বয়ে যাচ্ছে। অনেক সময় আমরা অন্যের প্রতি অসংবেদনশীল হয়ে পড়ি। অন্যায় হতে দেখেও চোখ বুজে থাকি। আমি বিশ্বাস করি, সিনেমা মানুষের মনে গভীর প্রভাব ফেলে। “ধড়ক ২” যদি কিছু মানুষের মানসিকতায় বদল আনতে পারে, তাহলেই আমরা সফল।’

এ ছবিতে সিদ্ধান্ত চতুর্বেদীর সঙ্গে তৃপ্তির রসায়ন দর্শকের মন কেড়েছে। সেই রসায়নের নেপথ্যের কথা জানালেন অভিনেত্রী, ‘শাজিয়া চেয়েছিলেন, আমি আর সিদ্ধান্ত যেন একে অপরকে গভীরভাবে অনুভব করি। আমাদের নিয়ে লম্বা একটি ওয়ার্কশপ করেছিলেন তিনি। শুধু সিদ্ধান্তের সঙ্গে নয়, ছবির অন্য অভিনেতাদের সঙ্গেও যেন সখ্য তৈরি হয়, তা-ও চেয়েছিলেন শাজিয়া। কলেজপড়ুয়াদের মতো আমরা একসঙ্গে আড্ডা দিতাম, গেম খেলতাম। তাই একে অপরের সঙ্গে সহজ ছিলাম।’

আট বছরের অভিনয়জীবনে তৃপ্তি ‘বুলবুল’, ‘কলা’র মতো প্রকল্প উপহার দিয়েছেন, যা সমাদৃত হয়েছে। তিনি জানান, ক্যারিয়ারের প্রথম ছবি পোস্টার বয়েজ, লায়লা মজনু-তেও শতভাগ দিয়ে কাজ করেছিলেন। ‘আমার প্রথম দুটি ছবি বক্স অফিসে ভালো সফল হয়নি। কিন্তু আমি সততার সঙ্গে কাজ করেছিলাম। প্রতিটি চরিত্রের প্রতি আমি সমানভাবে নিবেদিত। আর নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে শুরু থেকেই সচেতন। এর মধ্যে কিছু ছবি চলেছে, কিছু চলেনি। এসব না ভেবে মনপ্রাণ দিয়ে কাজ করে যেতে চাই।’

সময় যত যাচ্ছে, নিজেকে অভিনেত্রী হিসেবে উন্নত মনে করছেন তৃপ্তি। তাঁর ভাষায়, ‘আমার ফিল্মি যাত্রা নিয়ে আমি ভীষণ খুশি। তাই এই যাত্রার কোনো কিছু বদলাতে চাই না। পথে অনেক ভুল করেছি, তা সময়ের সঙ্গে শুধরে নিয়েছি। তবে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েই আমার আক্ষেপ নেই।’