দুই স্তরের টেস্ট: ইংল্যান্ড সতর্ক ও উদ্বিগ্ন, লাভ হলে আপত্তি নেই অস্ট্রেলিয়ার
ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড—বিশ্ব ক্রিকেটের ‘তিন মোড়ল’ হিসেবে পরিচিত এই তিন দেশ নিজেদের মধ্যে আরও বেশি টেস্ট খেলতে এই সংস্করণকে দুই স্তরে ভাগ করতে চায়, এই খবর পুরোনো। টেস্ট ক্রিকেটে দুই স্তর চালুর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি এরই মধ্যে একটি ।
তবে এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন নিয়ে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডে (ইসিবি) হঠাৎ উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। ইসিবির আশঙ্কা, ইংল্যান্ড দল যদি কোনো একসময়ে খারাপ খেলে দ্বিতীয় স্তরে নেমে যায়, তাহলে অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের সঙ্গে তাদের ঐতিহ্যবাহী ও বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক সিরিজগুলো আর অনুষ্ঠিত নাও হতে পারে।
অর্থাৎ, ইংল্যান্ড শীর্ষ স্তরে জায়গা ধরে রাখতে না পারলে মহামর্যাদার অ্যাশেজ সিরিজ, অ্যান্ডারসন–টেন্ডুলকার ট্রফি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এমনকি অস্ট্রেলিয়া বা ভারতের কেউ দ্বিতীয় স্তরে নেমে গেলে বোর্ডার–গাভাস্কার ট্রফিও থমকে যেতে পারে। তবে টেস্টের দ্বিস্তর কাঠামো নিয়ে আপত্তি নেই অস্ট্রেলিয়ার।
সম্প্রতি ওভালে ইংল্যান্ড–ভারতের সিরিজ নির্ধারণী টেস্ট চলাকালীন ইসিবি চেয়ারম্যান রিচার্ড থম্পসন বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা যদি খারাপ সময় পার করি এবং দ্বিতীয় স্তরে নেমে যাই, তাহলে কি অস্ট্রেলিয়া বা ভারতের বিপক্ষে খেলব না? এটা হতে পারে না। এখানে যুক্তির প্রয়োগ জরুরি।’
থম্পসন মনে করেন, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী টি–টোয়েন্টি লিগের ভিড়ে দ্বিপক্ষীয় টেস্ট সিরিজের গুরুত্ব অনেকটাই কমে গেছে। তাঁর বিশ্বাস, বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের কাঠামোতেই কিছু পরিবর্তন আনলে দুই স্তরবিশিষ্ট টেস্টের প্রয়োজন পড়বে না।
থম্পসন দক্ষিণ আফ্রিকার উদাহরণ টেনে বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে তারা কদিন আগে । সেটা ছিল টেস্ট ক্রিকেটের জন্য দারুণ এক মুহূর্ত। এই জয় দেখিয়েছে, প্রয়োজনীয় সহায়তা পেলে অপেক্ষাকৃত ছোট দলগুলোও বড় কিছু অর্জন করতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ আগের তুলনায় এখন অনেক ভালো অবস্থায় আছে। এটা টেস্ট ক্রিকেটে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তবে সময়সূচি এবং ম্যাচগুলোর ভারসাম্য নিয়ে আরও ভাবনা-চিন্তা করা দরকার। ২০২৮ সালের অলিম্পিকের কথাও মাথায় রাখতে হবে। সেই বছরের জুলাইয়ে আমাদের শীর্ষ ক্রিকেটারদের লস অ্যাঞ্জেলেসে যেতে হতে পারে। সেটিও বড় একটি চ্যালেঞ্জ।’
প্রস্তাবিত দ্বিস্তর টেস্ট মডেল নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আইসিসি যে ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করেছে, সেটির নেতৃত্বে আছেন নিউজিল্যান্ডের সাবেক ব্যাটসম্যান রজার টুজ। ধারণা করা হচ্ছে, টুজ শিগগিরই আইসিসির বোর্ডে সুপারিশ পেশ করবেন। শোনা যাচ্ছে, ওয়ার্কিং গ্রুপে আটজন সদস্য আছেন, যাঁদের মধ্যে টেস্ট খেলুড়ে দেশের বাইরের প্রতিনিধিরাও থাকতে পারেন। আইসিসির নতুন প্রধান নির্বাহী সঞ্জয় গুপ্তও এই গ্রুপে যুক্ত হতে পারেন বলে জানা গেছে।
এরই মধ্যে ২০২৭-২৯ চক্রের দ্বিপক্ষীয় সিরিজের পরিকল্পনা শুরু হয়েছে এবং শিগগিরই ২০২৭-৩১ সময়কালের সম্প্রচার স্বত্বের নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। তাই আইসিসির সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হলো বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপকে আরও প্রতিযোগিতামূলক, অর্থবহ এবং জনপ্রিয় করে তোলা। তবে প্রাথমিক আলোচনাতেই কয়েকটি দেশের ক্রিকেট বোর্ড দ্বিস্তর পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছে।
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) প্রধান নির্বাহী টড গ্রিনবার্গ মনে করেন, ছোট দলগুলোকে প্রতিযোগিতার উপযোগী করে তুলতে সহায়তা করার দায়িত্ব বড় দলগুলোর। এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো তাদের জন্য শক্তিশালী প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট কাঠামো নিশ্চিত করা।
গতকাল এসইএস রেডিও কে গ্রিনবার্গ বলেছেন, ‘প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো আমরা সবাই এতে কীভাবে ভূমিকা রাখছি। যখন আমি “আমরা” কথাটি বলছি, তখন মূলত সেই তিনটি দেশকে (ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড) বোঝাচ্ছি, যারা টেস্ট ক্রিকেটে বড় বিনিয়োগ করছে এবং সময়, অর্থ ও মনোযোগ দিচ্ছে। আমাদের নিজেদের স্বার্থেই দরকার একটা শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শক্তিশালী পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকা দল। আমরা চাই এই দলগুলো টেস্ট ক্রিকেটকে প্রতিযোগিতামূলক ও আকর্ষণীয় করে তুলুক। তবে এটা স্পষ্ট যে তারা একা সেটা করতে পারবে না। ক্রিকেট বিশ্বেরই দায়িত্ব তাদের পাশে দাঁড়ানো।’
দুই স্তরবিশিষ্ট টেস্ট মডেল নিয়ে উদার মানসিকতা দেখিয়েছেন গ্রিনবার্গ, ‘আমার খোলা মনোভাবের মানে হলো, এই ব্যবস্থা যদি টেস্ট ক্রিকেটে অন্য দেশগুলোর সুযোগ বাড়াতে সাহায্য করে, তাদের আরও বেশি সম্পদ ও সহায়তা এনে দিতে পারে, তাহলে আমি অবশ্যই এটির পক্ষে। কিন্তু যদি এটি সেই উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ হয়; বরং উল্টো ক্ষতি করে, তাহলে আমি একে সমর্থন করতে পারব না।’