দীর্ঘ ৩৩ বছর পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে অংশ নিতে ২৫টি পদের বিপরীতে ২৭৩টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) মনোনয়নপত্র জমাদান শেষে বিকাল ৫টায় এক ব্রিফিংয়ে জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব একেএম রাশিদুল আলম এ তথ্য জানান।
শিক্ষার্থীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমাদানের জন্য ১ দিন বাড়ানো হয়েছিল। সেই হিসেবে বৃহস্পতিবার ছিল মনোনয়ন জমাদানের শেষ দিন।
শেষ দিনে সকাল থেকেই নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে প্রার্থীদের ভিড় উপচে পড়ে। কে কোন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তা নিশ্চিত করতে প্রার্থীরা সমর্থক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে ছুটে আসেন দপ্তরে। ফলে দুপুর গড়াতেই পুরো ক্যাম্পাসে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। প্রার্থীদের জমায়েতের কারণে নির্বাচন কমিশনের দপ্তর ও আশপাশ এলাকা ছিল সরগরম। বেশিরভাগ প্রার্থী শেষ সময়ে এসে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
এদিন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাম ছাত্র সংগঠনসহ অধিকাংশ সংগঠন প্যানেল ঘোষণা করেনি। তবে আগামী জাকসু নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের সমন্বিত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ (বাগছাস) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’ নামে একটি ইনক্লুসিভ প্যানেলের নাম ঘোষণা করেছেন। প্যানেলটি শুধু কেন্দ্রীয় পদে নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল সংসদে প্রার্থী দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই গঠিত বলে জানান সংগঠনটির আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল।
হল সংসদ নির্বাচনে ৪৬৭টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। এর মধ্যে আ ফ ম কামালউদ্দিন হলে ২২টি, মীর মোশাররফ হোসেন হলে ৩০টি, নওয়াব ফয়জুন্নেছা হলে ৬টি, শহীদ সালাম বরকত হলে ২২টি , মওলানা ভাসানী হলে ২৭টি, জাহানারা ইমাম হলে ১৬টি, প্রীতিলতা হলে ১৩টি, বেগম খালেদা জিয়া হলে ১১টি, শহীদ রফিক জব্বার হলে ২১টি, ১০নং ছাত্র হলে ৩০টি, বেগম সুফিয়া কামাল হলে ১০টি, ১৩নং ছাত্রী হলে ৬টি, ১৫নং ছাত্রী হল ১৭টি, রোকেয়া হলে ১৭টি, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের ঠাকুর হলে ২২টি, বীরপ্রতিক তারামন বিবি হল ১৭টি, বেগম ফজিলাতুন্নেছা হলে ১৫টি, ২১নং ছাত্র হলে ৩৮টি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলে ৬০টি, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলে ৪৯টি মনোনয়নপত্র জমা হয়েছে।
জাকসু নির্বাচনে সেনা মোতায়েন চায় প্রশাসন
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন-২০২৫ উপলক্ষে নিরাপত্তার জন্য সেনা মোতায়েন চায় প্রশাসন। এজন্য ইতোমধ্যে সেনাপ্রধানের কাছে আবেদন পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম রাশিদুল আলম বলেন, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা বেষ্টনী জোরদার করতে আশপাশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। পাশাপাশি নির্বাচনের দিন, এর আগের দিন ও পরের দিন সেনা মোতায়েনের জন্য ইতোমধ্যে সেনাপ্রধানের কাছে আবেদন পাঠানো হয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন সেনাবাহিনী দরকার? এই প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য-সচিব অধ্যাপক একেএম রাশিদুল বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে জনবসতি রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় তেরো টির অধিক গেইট রয়েছে আমাদের বাউন্ডারি এলাকা সুরক্ষিত নয়। আমরা চাই এমন একটি নির্বাচন হবে যেখানে কোনো প্রকার শঙ্কা থাকবে না। আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। কোনো প্রকার পেশিশক্তির প্রয়োগ যেন নির্বাচনে না হয়। তাই আমরা নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করাতে অনুরোধ করেছি।
জাকসু উপলক্ষে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে প্রার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
সরেজমিন দেখা যায়, মনোনয়ন ফরম নিতে একদল শিক্ষার্থী ভিড় করেছেন নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে। এসময় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও সাধারণ শিক্ষার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জাকসু নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম উত্তোলন করেন। মনোনয়ন ফরম উত্তোলন শেষে বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন পদের প্রার্থীরা।
ভিপি পদপ্রার্থী আবদুর রশিদ জিতু বলেন, আগামী ১১ সেপ্টেম্বর জাকসু নির্বাচন উপলক্ষে বর্তমানে ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে আলাদা আমেজ কাজ করছে। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে অনেক প্রার্থীরা সেবামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছে। আমি জাকসু নির্বাচনে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করতে ইচ্ছা পোষণ করেছি।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের জাবি শাখার সংগঠক সোহাগী সামিয়া বলেন, জাকসু নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য প্রশাসনের কার্যক্রম এখন পর্যন্ত সন্তোষজনক। আমরা আশা রাখি ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রশাসন গুরুত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাবেন। তারা যদি মনে করেন ক্যাম্পাসে সেনা মোতায়েন করতে চান, তাহলে আমরা বলব এই প্রশাসনের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন দেখছি না।
তিনি আরও বলেন, আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজ করতে চাই। সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়েই আমাদের প্যানেল গঠিত হবে।
বাগছাসের আহ্বায়ক ও ভিপি পদপ্রার্থী আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, আমরা আশাবাদী যে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর নির্ধারিত তারিখেই জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমরা বাগছাসের সদস্যরা আলাদা প্যানেলের চিন্তা করছি। আমরা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট করব না। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে তাদের অধিকার আদায়ে ভূমিকা রাখতে চাই।
জুলাই আন্দোলন আহত শিক্ষার্থী ও জিএস পদপ্রার্থী শাকিল আলী বলেন, দীর্ঘ ৩৩ বছর পর জাহাঙ্গীরনগরে জাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এজন্য প্রশাসনকে ধন্যবাদ। আমি একজন প্রার্থী হিসেবে বলতে চাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের সকল অধিকার আদায়ে আমরা কাজ করে যাব। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমি জাকসু নির্বাচন করতে চাই।
জাবি ছাত্রশিবির প্যানেল ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ এর ভিপি প্রার্থী আরিফুল্লাহ আদিব বলেন, আমরা দলীয় ব্যক্তিদের বাইরেও প্রার্থী দেওয়ার চেষ্টা করেছি, যাতে শিক্ষার্থীরা প্যানেলটি নিজের মনে করে। আমরা বিজয়ী হলে, ২৪-এর স্পিরিটকে ধারণ করে দলমত নির্বিশেষে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে চাই।