দ্য ডিসেন্ট এর ফলাফলে দেখা যায়, ভিপি, জিএস এবং এজিএস ৩টি পদেই শিবিরের প্রার্থীরা বড় ব্যবধানে এগিয়েছিলেন। বাস্তব ভোটেও সেটাই হয়েছে।

‘দ্য ডিসেন্ট’ জরিপ কতটা মিলেছে বাস্তব ফলাফলের সঙ্গে?

গতকাল ৯ সেপ্টেম্বরে উৎসবমুখর পরিবেশে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট শীর্ষ ৩ট পদসহ ২৮টির মধ্যে ২৩টিতে বিজয়ী হয়েছে। নির্বাচনে ভোটিং টার্নআউট ছিলো ৩১২৩৪ যা মোট ভোটারের ৭৮.৩৩%।

দ্য ডিসেন্ট ভোট চলাকালে গতকাল বিকালে একটি জরিপ প্রকাশ করে। ছাত্র সংগঠনগুলো ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থিতা ও প্যানেল ঘোষণার পর ভোটারদের মধ্যে ২৮ আগস্ট ২০২৫ থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পরিচালনা করা জরিপের ফলাফলে যে চিত্র উঠে এসেছে তা গতকালের ভোটে কতটা প্রতিফলিত হয়েছে তা তলিয়ে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে।

আজ বুধবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রকাশ করা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দ্য ডিসেন্ট এর জরিপের ফলাফল প্রকৃত ভোটের ফলাফলে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।

দ্য ডিসেন্ট এর ফলাফলে দেখা যায়, ভিপি, জিএস এবং এজিএস ৩টি পদেই শিবিরের প্রার্থীরা বড় ব্যবধানে এগিয়েছিলেন নিকটতম প্রার্থীদের থেকে। বাস্তব ভোটেও সেটাই হয়েছে।

তবে চুড়ান্ত ভোটে শিবিরের ৩ শীর্ষ প্রার্থীর ভোটের হার বেড়েছে। প্রতিটি পদেই উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক ভোটার জরিপ চলাকালে ‘সিদ্ধান্ত নেননি’ বলে জানিয়েছিলেন।

ভিপি পদ

জরিপে ২৯.৬% শিক্ষার্থী ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট এর সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী সাদিক কায়েমকে ভোট দিবেন বলে জানিয়েছিলেন। এবং এই পদে সিদ্ধান্তহীন অংশগ্রণকারী ছিলেন ১৬.৪%।

নির্বাচনে কাস্ট হওয়া ভোটের মধ্যে সাদিক কায়েম পেয়েছেন ৪৪.৯৫%।


একই পদে ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খানের পক্ষে জরিপে মতামত জানিয়েছিলেন ১৪.৩% শিক্ষার্থী। প্রকত ভোটে তিনি পেয়েছেন ১৮.২৭%।

দ্য ডিসেন্ট এর জরিপে ১৯.৪ শতাংশ শিক্ষার্থী স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম হোসেনের পক্ষে মতামত জানিয়েছিলেন। প্রকৃত ভোটে তিনি পেয়েছেন ১২.২৭%।

স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের উমামা ফাতেমা জরিপে পেয়েছিলেন ১২.২%। প্রকৃত ভোটে তিনি পেয়েছেন ১০.৮৫%। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের প্রার্থী আব্দুল কাদের জরিপে পেয়েছিলেন ৩.৫% ভোট, যা প্রকৃত ভোটেও হুবহু একই থেকেছে।

দ্য ডিসেন্ট এর জরিপের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের পর অন্যতম প্রার্থী শামীম হোসেনকে নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হওয়া এবং তার বিপক্ষে উল্লেখযোগ্য কিছু সংবাদমাধ্যমে এবং সোশাল মিডিয়াতে নেতিবাচক ক্যাম্পেইন হয়েছে, যা তার প্রাপ্ত ভোট সংখ্যাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে থাকতে পারে। পাশপাশি সিদ্ধান্তহীনতায় থাকা ভোটার এবং শামীমের ব্যাপারে নেতিবাচক ক্যাম্পেইন সাদিক কায়েমের ভোটের সংখ্যা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখে থাকতে পারে।

জিএস পদ

জরিপে অংশগ্রহণকারী ২৫.৩% শিক্ষার্থী ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট এর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী এস এম ফরহাদকে দেখতে চান বলে জানিয়েছিলেন। প্রকৃত ভোটে তিনি পেয়েছেন ৩৪.৫৬%।

জিএস পদে কাকে ভোট দিবেন সেটা ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঠিক করেননি বলে জানিয়েছিলেন ২৫.৪ শতাংশ শিক্ষার্থী।

একই পদে ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী তানভীর বারী হামিম পেয়েছিলেন ১৬.১ শতাংশ শিক্ষার্থীর সমর্থন। প্রকৃত ভোটে তার অর্জন ১৬.৯ শতাংশ।

সাত বাম ছাত্রসংগঠনের যৌথ প্যানেল প্রতিরোধ পর্ষদের মেঘমল্লার বসুর পক্ষে জরিপে সমর্থন দিয়েছিলেন ১৬.৯ শতাংশ। আর প্রকৃত ভোটে তিনি পেয়েছেন ১৫.৮ শতাংশ।

বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের আবু বাকের মজুমদারকে জরিপে ৭.৩ শতাংশ শিক্ষার্থী সমর্থন দিয়েছিলেন। প্রকৃত ভোটে তিনি পেয়েছেন ৬.৮ শতাংশ।


জিএস পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী আরাফাত চৌধুরীর নাম বা তার সমর্থনের পরিমাণ দেখাতে না পারাটা ছিল দ্য ডিসেন্ট এর জরিপের একটি ব্যর্থতা। কোন পদেই সব প্রার্থীর নাম অপশনে উল্লেখ করা হয়নি তালিকা দীর্ঘ হয়ে যাওয়ার কারণে। সেক্ষেত্রে জরিপকালীন যাদের নাম মিডিয়া এবং সোশাল মিডিয়াতে বেশি তুলে ধরা হয়েছে সেরকম কয়েকটি নাম অপশনে দিয়ে বাকিদের জন্য ‘অন্যান্য’ অপশন রাখা হয়েছিল। আরাফাত চৌধুরীর নাম জরিপকালীন মিডিয়াতে বা সোশাল মিডিয়াতে বেশি আলোচিত না থাকায় তার নাম আলাদাভাবে অপশনে রাখা হয়নি। ফলে তার ভোট জরিপে প্রতিফলিত হয়নি। ‘অন্যান্য’ ক্যাটাগরিতে মোট ৯.১ শতাংশ শিক্ষার্থীর ভোট পড়েছিল জরিপে।

প্রকৃত ভোটে আরাফাত চৌধুরী ১২.৯ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।

দ্য ডিসেন্ট এর জরিপের সময় জিএস পদে প্রার্থী ছিলেন মাহিন সরকার। তিনি ৩.৮ শতাংশ সমর্থন পেয়েছিলেন। কিন্তু পরে তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। এই বিষয়টির সাথে ২৫.৪ শতাংশ সিদ্ধান্তহীন শিক্ষার্থীর ভোট অন্যান্য প্রার্থীদের ভোটের সংখ্যা কমবেশি হওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে থাকতে পারে।

এজিএস পদ

সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের মুহা. মহিউদ্দীন খান জরিপে পেয়েছেন প্রায় ২৫.৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারীর সমর্থন। প্রকৃত ভোটে তিনি পেয়েছেন ৩৭.৬৯ শতাংশ।

এজিএস পদে কাকে ভোট দেবেন তা ঠিক করেননি ৩২.৫ শতাংশ শিক্ষার্থী।

ছাত্রদলের তানভীর আল হাদী মায়েদ জরিপে পেয়েছিলেন ১৭.১% আর প্রকত ভোটে পেয়েছেন ১৬.২১ শতাংশ।

বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের আশরেফা খাতুন জরিপে পেয়েছেন ৬.১ শতাংশ এবং প্রকৃত ভোটে পেয়েছেন ২.৮ শতাংশ।

প্রতিরোধ পর্ষদের জাবির আহমেদ জুবেল জরিপে পেয়েছেন ৬ শতাংশ, আর প্রকৃত ভোটে পেয়েছেন ৩.৬ শতাংশ।

স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমীদ আল মুদাচ্ছির জরিপে পেয়েছেন ৭.৩ শতাংশ। প্রকৃত ভোটে পেয়েছেন ৯.৬ শতাংশ।

মহিউদ্দিনের প্রায় ১২ শতাংশ ভোট বৃদ্ধির বিষয়টি সিদ্ধান্তহীনতায় থাকা শিক্ষার্থীদের ভোটের সাথে সম্পর্কিত থাকতে পারে।