সংস্কৃতির গৌরব সাবিনা ইয়াসমিন, পেলেন রাষ্ট্রীয় সম্মাননা
অনুষ্ঠানের শুরুতে বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক বদরুদ্দীন ওমরকে স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর প্রদর্শিত হয় সাবিনা ইয়াসমিনের জীবন ও সৃষ্টিকর্ম নিয়ে নির্মিত ডকুমেন্টারি “শুধু গান গেয়ে পরিচয়”। ‘গীতিময় সেই দিন চিরদিন বুঝি আর এলো না’ গানের সাথে নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যশিল্পীরা।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সরকারের পক্ষে সাবিনা ইয়াসমিনকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমান, শিল্পকলা একাডেমির সচিব ও দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেনসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, রাজনৈতিক দলের নেতা, সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গণের গুণীজন।
শিল্পীকে নিয়ে স্মৃতিচারণ ও সঙ্গীত পরিবেশন করেন নকিব খান, পার্থ বড়ুয়া, খুরশীদ আলম, রফিকুল আলম, আবিদা সুলতানা, ফেরদৌস আরা, আগুনসহ আরও অনেকে।
বক্তব্যে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন,“যদি কেউ শোষণ করতে চায়, প্রথমে বলা হয় তোমার ইতিহাস নেই, দ্বিতীয়ত বলা হয় তোমার সংস্কৃতি নেই। নতুন বাংলাদেশে আমরা এই জায়গাগুলোতেই গুরুত্ব দিতে চাই। আজকের এই সম্মাননা সেই উদাহরণ।”
ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, “সাবিনা ইয়াসমিন আমাদের সত্যিকারের কিংবদন্তী। তাঁকে আলাদা করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। ষাটের দশক থেকেই তাঁর গান প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে আসছে।”
রাত ৮টা থেকে শুরু হয় একক সঙ্গীতানুষ্ঠান, যেখানে নবীন শিল্পীদের কম্পোজিশনে ও নিজস্ব পরিবেশনায় সাবিনা ইয়াসমিন গেয়ে শোনান তাঁর জনপ্রিয় গান— সুন্দর সুবর্ণ, তারুণ্য লাবণ্য, আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো, তুমি ফুলকে বল ঝরে যেতে, শত জনমের স্বপ্ন তুমি, অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান, এই মন তোমাকে দিলাম, আমি আছি থাকবো, শুধু গান গেয়ে পরিচয় প্রভৃতি। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অভিনেতা আফজাল হোসেন।
১৯৫৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণকারী সাবিনা ইয়াসমিন ছয় বছর বয়সে অল পাকিস্তান স্কুল মিউজিক কম্পিটিশন এ প্রথম স্থান অর্জন করেন। এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ১৬ হাজার গান রেকর্ড করেছেন, যার অধিকাংশই চলচ্চিত্রের গান। আধুনিক, পল্লীগীতি, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, গজলসহ নানা ঘরানায় তাঁর কণ্ঠ সমান দক্ষ।
তিনি একুশে পদক (১৯৮৪) ও স্বাধীনতা পদক (১৯৯৬) অর্জন করেছেন এবং ১৫ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়ে দেশের ইতিহাসে অনন্য রেকর্ড গড়েছেন। সম্প্রতি শাইখ সিরাজ নির্মাণ করেছেন তাঁর জীবনীভিত্তিক ডকুফিল্ম “জুঁই ফুল”, যা এবারের জন্মদিনে প্রচারিত হয় চ্যানেল আই-এ।